35 C
আবহাওয়া
৭:৪৩ অপরাহ্ণ - মে ১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » আমার কোনো লোককে ধরলে পুলিশের হাত কেটে ফেলবো- ওসিকে এমপি মোস্তাফিজ

আমার কোনো লোককে ধরলে পুলিশের হাত কেটে ফেলবো- ওসিকে এমপি মোস্তাফিজ

আমার কোনো লোককে ধরলে পুলিশের হাত কেটে ফেলবো- ওসিকে এমপি মোস্তাফিজ

বিএনএ, চট্টগ্রাম: বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর। এবার নিয়মিত ডিউটির অংশ হিসাবে পাঠানো পুলিশকে হাত কেটে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) রাতে এ বিষয় নিয়ে ওসি তোফায়েল আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে ফোনে কথোপকথনের হয়। ওসি তোফায়েল আহমদের সাথে মোস্তাফিজের কথোপকথনের ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি অডিও গণমাধ্যমে এসেছে।

এতে এমপি মোস্তাফিজকে বলতে শোনা যায়, ছনুয়ায় আমার লোক ধরার জন্য কেন পুলিশ পাঠাইছেন?

অপরপ্রান্ত থেকে ওসি তোফায়েল বলেন, স্যার… কোথায় স্যার?

এমপি মোস্তাফিজ বলেন, ছনুয়া, ছনুয়া। এসআই হাফিজ।

এসময় উত্তরে ওসি বলেন, ও তো এখন নেই স্যার। ওরা দুইটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ওখানে নিয়মিত ডিউটিতে থাকে স্যার। চলে আসতেছে স্যার। নিয়মিত ডিউটির অংশ হিসেবে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

এসময় এমপি মোস্তাফিজ বলেন, কি জন্য গেছে ওখানে? আমার কোনো লোকজনের গায়ে যদি হাত দেয়, তাহলে হাত কেটে ফেলবো।

অপরপ্রান্ত থেকে ওসি তোফায়েল বলেন, দেবে না স্যার। হাত দেবে না। আমি বলে দিচ্ছি।

পরে এমপি মোস্তাফিজ বলেন, আমি হাত কেটে ফেলবো কিন্তু। এটা বলে দিলাম।

অপরপ্রান্ত থেকে ওসি তোফায়েল বলেন, ওরা এখনোও আছে নাকি স্যার?

পরে মোস্তাফিজ বলেন, ওখানে নাকি আমাদের লোকজন ধরার জন্য এসআই হাফিজুর রহমান গেছে। ওখানে গিয়ে আমাদের লোক আলমগীরকে খুঁজতেছে।

অপরপ্রান্ত থেকে ওসি বলেন, না না স্যার। প্রশ্নই আসে না। ও তো চলে আসছে।

পরে এমপি মোস্তাফিজ বলেন, এমনি ঘুরাফেরা করলে সমস্যা নেই। কিন্তু আমার কোনো লোকের ওপর হাত দিলে বহুত অসুবিধা হবে।

অপরপ্রান্ত থেকে ওসি বলেন, অবশ্যই স্যার। কখনোই হাত দিবে না স্যার। আপনি যেভাবেই বলবেন, সেভাবেই হবে।

এসময় এমপি মোস্তাফিজ বলেন, আপনি তো আমার ঘরেও পুলিশ পাঠাইছেন।

অপরপ্রান্ত থেকে ওসি বলেন, স্যার ঐদিন তো আপনার সাথে কথা বললাম। পুলিশ পাঠাইনি স্যার। আপনার বাড়িতে তো এমনি নিয়মিত পুলিশ যায়। আপনার নিরাপত্তার জন্য পাঠানো হয়েছে।

আমি ঐদিন আমি আরও আপনার সম্মান বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছি যে। বলে দিয়েছি, এমপি স্যারের বাড়িতে গেলে সাদা পোশাকে যাবে।

এসময় এমপি মোস্তাফিজ বলেন, কি জন্য আসছিল?

উত্তরে ওসি বলেন, স্যার এমনিতে গেছে। কোনো কারণে না। কাউকে ধরার জন্য না, কিচ্ছুই না।

এমপি মোস্তাফিজ: আচ্ছা…। চাম্বলের মুজিবের ওপরও যাতে কোনো রকমের ইয়ে না হয়।

এসময় জবাবে ওসি বলেন, হবে না স্যার ইনশাআল্লাহ।

মোস্তাফিজ: ও ওপেন যেন কাজ করতে পারে। খেয়াল রাখিও।

ওসি তোফায়েল: অবশ্যই স্যার। জ্বি স্যার, জ্বি স্যার। ওকে স্যার।

এমপি মোস্তাফিজ :ঠিক আছে।

এ বিষয়ে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোফায়েল আহমদকে ফোন দেওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে বাঁশখালীর সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এর আগেও বাঁশখালী থানার ওসিকে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর ‘দেখে নেওয়ার হুমকি’ দেন। গত ১৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মজিবুর রহমানের সমর্থকরা। এ নিয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করে দুই পক্ষ।

থানায় মুজিবুরের অনুসারীদের মামলা নেওয়ায় গত ২২ ডিসেম্বর বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদকে মোবাইলে হুমকি দেন নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর।

ওসিকে ‘হুমকির’ ঘটনায় বাঁশখালী থানায় পুলিশের তরফে সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে। ওসির করা জিডির তদন্ত চলছে।

এ ঘটনায় গত ২৪ ডিসেম্বর মোস্তাফিজুর রহমানের এমন আচরণ সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটের জন্য ‘হুমকিস্বরূপ’ বলে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দিয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা।

জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, বাঁশখালী পৌরসভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে মোস্তাফিজুর রহমানের নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তার সামনে নিজের মালিকাধীন মার্কেটের ‍দ্বিতীয় তলায় নির্বাচনি কার্যালয় স্থাপন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান।

১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দুই পক্ষের উত্তেজনা এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে হারুনুর রশিদ নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০/৩০ জনের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় মামলা করেন।

দুই দিন বাদে শুক্রবার স্বতন্ত্রপ্রার্থীর পক্ষে বেলাল উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০/৫০ জনের বিরুদ্ধে পাল্টা আরেকটি মামলা করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান নিজেদের অনুসারীদের নামে মামলার বিষয়টি জানতে পেরে ২২ ডিসেম্বর বেলা ৩টার দিকে বাঁশখালীর ওসির সরকারি নম্বরে ফোন করে বলেন, “শালা তুই মামলা নিলি কেন?

জবাবে ওসি বলেন, ‘আজকেই তারা এজাহার দিয়েছে।’

এরপর মোস্তাফিজুর বলেন, ‘তুই তদন্ত করিসনি কেন?’

ওসি তখন প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে বলে জানালে নৌকার প্রার্থী বলেন, ‘তুই মুজিবের কাজ করার জন্য আসছিস, শালারপুত তোকে আমি দেখে নেব।’

ওসিকে হুমকি দেওয়ার ওই ঘটনায় ওই দিন বাঁশখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

ওসির সঙ্গে প্রার্থী মোস্তাফিজুরের এ ধরনের আচরণ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনি পরিবেশের জন্য ‘হুমকিস্বরূপ’ হিসেবে ডিএসবির প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

গত ৩০ নভেম্বর আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান মোস্তাফিজুর রহমান। এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে প্রশ্ন করেন বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট টিভির সাংবাদিক রাকিব উদ্দিন।

প্রশ্ন শুনে সঙ্গে সঙ্গে রেগে যান মোস্তাফিজুর রহমান, গালি দিয়ে ওই সাংবাদিককে হাত দিয়ে ধাক্কা দেন এবং হুমকি দিতে থাকেন। তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা এসময় অন্য সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। এ ঘটনায় বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হারুন মোল্লা বাদী হয়ে আচরণ বিধি লঙ্ঘন ও সাংবাদিকদের পেটার অপরাধে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় গত ৩ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করে জামিন লাভ করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

নানা কারণে বিতর্কিত মোস্তাফিজ তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালেও তিনি এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাংবাদিককে ফোন করে গালিগালাজ, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্য, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য, সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা, বাঁশখালীতে নিজ দলের বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনপীড়ন, প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিলসহ নানা কারণে তিনি বারবার আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছেন।

এবার দলের টিকিট না পাওয়ার গুঞ্জনের মধ্যেই নৌকা প্রতীক পেয়ে গত ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন মোস্তাফিজ। এসময় নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় সাংবাদিককে প্রকাশ্যে মারধর করেন তিনি। এ নিয়ে আদালতে মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমদকে ফোন করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গত ২২ ডিসেম্বর এমপির বিরুদ্ধে করা জিডিরও তদন্ত চলছে।

বিএনএনিউজ/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ