।। শামীমা চৌধুরী শাম্মী ।।
বিএনএ, ঢাকা: ৩১ জানুয়ারি, বুধবার। ছিল দুইভাই সাইফুল ইসলাম ও শামিউল ইসলামের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। কিন্তু তাদের বড়ভাই মনিরুল ইসলাম তখনও বাড়ি এসে পৌছায়নি। রাত ১১টার দিকে বড় ভাই মনিরুল ইসলামকে আনতে মোটরসাইকেল নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে যান ছোটভাই সাইফুল ইসলাম। রাত ১২ টার দিকে দুই ভাই বাড়ির কাছে আসতেই ট্রাকের ধাক্কায় দুই সহোদর নিহত হন। মুহূর্তে বিয়ে বাড়ির আনন্দ রূপ নিয়েছে বিষাদে। দুই ভাই বাড়ি এসে ঠিকই মোটরসাইকেলে চড়ে নয়- এসেছে স্টিলের খাটিয়ায়, স্বজনদের কাধে চড়ে!
নিহতদের বাবা মোকছেদ আলী বাড়ির বারান্দায় শূন্যে চোখে তাকিয়ে আছেন। তাকে ঘিরে সান্ত্বনা জানানোর চেষ্টা করছেন সবাই। মা ফিরোজা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে বেঁচে আছেন শামীম। তিনি কী করবেন যেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন তিনি। বিয়ের প্যান্ডেল, গায়ে হলুদের মঞ্চ ও সাজ্জা সবই আছে, নেই শুধু দুই সহোদর।
বাড়িভর্তি স্বজনদের আহাজারি। দুই ভাইয়ের এমন মৃত্যু কখনো ভাবতে পারেননি তাঁরা। স্বজনরা বরযাত্রীর পরিবর্তে অংশ নিয়েছে শব যাত্রায়!
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) শামীউলের এবং শুক্রবার (২ ফেরুয়ারি) সাইফুলের বিয়ের দিন ধায্য ছিল। দুই ভাইয়ের একসঙ্গে বউভাতের অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি)। যেই বাড়িতে বউভাতের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল সেই বাড়িতে অয়োজন করা হয়েছে দুই সহোদরের কুলখানি।
স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মনিরুল ইসলাম গাজীপুর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। গতকাল রাতে সাইফুল ইসলাম মোটরসাইকেল নিয়ে বড় ভাই মনিরুলকে আনতে দৌলতদিয়া ঘাটে যান। সেখান থেকে মনিরুল মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। মোটরসাইকেল আরোহী দুই ভাই গোয়ালন্দের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে নবুওসিমদ্দিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে মাটি বহনকারী ট্রাকের সঙ্গে তাঁদের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এতে মোটরসাইকেল থেকে দুই ভাই ছিটকে পড়লে ঘটনাস্থলেই মনিরুল মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় সাইফুলকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রাজবাড়ি উপজেলার খানখানাপুর গ্রামে মোকছেদ সরদারের সন্তান মনিরুল ইসলাম গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সাইফুল ইসলাম রাজবাড়ী সদর উপজেলার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন।
বিএনএনিউজ/ বিএম
