27 C
আবহাওয়া
৫:২১ পূর্বাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩
Bnanews24.com
Home » মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন শেখ হাসিনাসহ বিশ্ব নেতারা

মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন শেখ হাসিনাসহ বিশ্ব নেতারা

মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্ব নেতারা

প্রবাস ডেস্ক : ভারতে অনুষ্ঠিত জি- ২০ শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্ব নেতারা। এর আগে এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রবিবার(১০সেপ্টেম্বর) সকালে দিল্লির রাজঘাটে উপস্থিত হন তাঁরা।

ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই- এর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়, এনডিটিভি অনলাইন।

খবরে বলা হয়েছে, বৃষ্টিতে ভেজা দিল্লির রাজঘাটে জি-২০ নেতাদের স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং সকালে রাজঘাটের অনুষ্ঠানস্থলে প্রথম পৌঁছান।

পরে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটসহ মিশর, নাইজেরিয়া ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। পরে দিল্লির রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

শ্রদ্ধা জানানো শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্ব নেতারা সম্মেলনস্থল ভারত মান্দাপামে একটি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

এর আগে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক দ্বিতীয় দিনের সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই রবিবার সকালে দিল্লির অক্ষরধাম মন্দিরে পূজা দেন।

কে এই মহাত্মা গান্ধী?

মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী যিনি ভারতসহ সারা বিশ্বে মহাত্মা গান্ধী নামে পরিচিত। তিনি ১৮৬৯ সালের ২ রা অক্টোবর পোরবন্দরের হিন্দু মোধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন পোরবন্দরের দেওয়ান (মূখ্যমন্ত্রী)। মা পুতলিবা করমচাঁদের চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন। পুতলিবা প্রণামী বৈষ্ণব গোষ্ঠীর ছিলেন।করমচাঁদের প্রথম দুই স্ত্রীর প্রত্যেকেই একটি করে কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। অজানা কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছিল । গান্ধীর ব্যাপারে তার বোন মন্তব্য করেন, তিনি খেলাধুলা কিংবা ঘুরাঘুরির ব্যাপারে পারদের মত নিশ্চল ছিলেন । তার শৈশব কালে প্রিয় খেলা ছিল কুকুরের কান মোচড়ানো। ধার্মিক মায়ের সাথে এবং গুজরাতের জৈন প্রভাবিত পরিবেশে থেকে গান্ধী ছোটবেলা থেকেই জীবের প্রতি অহিংসা, নিরামিষ ভোজন, আত্মশুদ্ধির জন্য উপবাসে থাকা, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সহিষ্ণুতা ইত্যাদি বিষয় শিখতে শুরু করেন। তিনি জন্মেছিলেন হিন্দু বৈশ্য গোত্রে, যা ছিল ব্যবসায়ী গোত্র।

মহাত্মা গান্ধী ছিলেন অন্যতম ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। এছাড়াও তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। যার মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণ তাদের অভিমত প্রকাশ করে। এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর ভিত্তি করে এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।

ভারত সরকার সম্মানার্থে মহাত্মা গান্ধীকে ভারতের জাতির জনক হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২রা অক্টোবর তার জন্মদিন ভারতে গান্ধী জয়ন্তী হিসেবে পালিত হয়।

একজন শিক্ষিত ব্রিটিশ আইনজীবী হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিপীড়িত ভারতীয় সম্প্রদায়ের নাগরিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে গান্ধী প্রথম তাঁর অহিংস শান্তিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনের মতাদর্শ প্রয়োগ করেন। ভারতে ফিরে আসার পরে তিনি কয়েকজন দুঃস্থ কৃষক-দিনমজুরকে সাথে নিয়ে বৈষম্যমূলক কর আদায় ব্যবস্থা, বহুবিস্তৃত বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং দেওবন্দিদের অধীনে খিলাফত আন্দোলন শুরু করেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসার পর গান্ধী সমগ্র ভারতব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী স্বাধীনতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ, জাতির অর্থনৈতিক সচ্ছলতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রচার শুরু করেন। কিন্তু এর সবগুলোই ছিল স্বরাজ অর্থাৎ ভারতকে বিদেশি শাসন থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে। ১৯৩০ সালে গান্ধী ভারতীয়দের লবণ করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ৪০০ কিলোমিটার (২৪৮ মাইল) দীর্ঘ ডান্ডি লবণ কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন, যা ১৯৪২ সালে ইংরেজ শাসকদের প্রতি সরাসরি ভারত ছাড় আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকবার দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতে কারাবরণ করেন।

মহাত্মা গান্ধী সমস্ত পরিস্থিতিতেই অহিংস মতবাদ এবং সত্যের ব্যাপারে অটল থেকেছেন। তিনি সাধারণ জীবনযাপন করতেন এবং একটি স্বায়ত্তশাসিত আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তার নিজের পরিধেয় কাপড় ছিল ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় ধূতি এবং শাল, যা তিনি নিজেই চরকায় বুনতেন। তিনি সাধারণ নিরামিষ খাবার খেতেন। শেষ জীবনে ফলমূলই বেশি খেতেন। আত্মশুদ্ধি এবং প্রতিবাদের জন্য তিনি দীর্ঘ সময় উপবাস থাকতেন।

১৮৮৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধী তার বাবা মায়ের পছন্দে কস্তুরবা মাখাঞ্জীকে (কাস্তুবাই নামেও পরিচিত ছিলেন) বিয়ে করেন। তাদের চার পুত্র সন্তান জন্মায় যাদের নাম হরিলাল গান্ধী, (জন্ম ১৮৮৮) মনিলাল গান্ধী, (জন্ম ১৮৯২) রামদাস গান্ধী (জন্ম ১৮৯৭) এবং দেবদাস গান্ধী (জন্ম ১৯০০) সালে। মহাত্মা গান্ধী ছোটবেলায় পোরবন্দর ও রাজকোটের ছাত্রজীবনে মাঝারি মানের ছাত্র ছিলেন। কোন রকমে গুজরাতের ভবনগরের সামালদাস কলেজ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি কলেজেও সুখী ছিলেন না, কারণ তার পরিবারের ইচ্ছা ছিল তাকে আইনজীবী করা। ১৮ বছর বয়সে ১৮৮৮ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে যান।

 

১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় তিনি নতুন দিল্লীর বিরলা ভবন (বিরলা হাউস) মাঝে রাত্রিকালীন পথসভা করছিলেন। তার হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ছিলেন একজন হিন্দু মৌলবাদী যার সাথে চরমপন্থী “হিন্দু মহাসভার” যোগাযোগ ছিল। “হিন্দু মহাসভা” পাকিস্তানীদের অর্থ সাহায্য দেবার প্রস্তাব করে ভারতকে দুর্বল করার জন্য গান্ধীকে দোষারোপ করে। গোডসে এবং সহায়তাকারী নারায়ণ আপতেকে পরবর্তীতে আইনের আওতায় এনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ১৯৪৯ সালের ১৪ নভেম্বর তাদের ফাঁসি দেয়া হয়।

গান্ধী ছিলেন বহুমুখী লেখক, সম্পাদক। কয়েক দশক ধরে তিনি সম্পাদনা করেছেন গুজরাতি, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকা হরিজন। কেবল ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত তার সম্পাদিত পত্রিকার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালীন ইন্ডিয়ান অপিনিয়ন ও দেশে ফেরার পর ইয়ং ইন্ডিয়া। তাছাড়া তার হাতেই সম্পাদিত হতো গুজরাতও ভাষার মাসিকপত্র নবজীবন, যা পরে হিন্দি ভাষায়ও প্রকাশিত হতো।

গান্ধীর বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তার আত্মজীবনী, সত্যের সঙ্গে আমার পরিক্ষার কাহিনী (The Story of My Experiments with Truth), দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রাম নিয়ে “দক্ষিণ আফ্রিকায় সত্যাগ্রহ (Satyagraha in South Africa), স্বাধিকার বিষয়ে ম্যানিফেস্টো “হিন্দি স্বরাজ” (Hind Swaraj or Indian Home Rule) ও গুজরাতি ভাষায় জন রাসকিন-এর Unto This Last । এছাড়া নিরামিষভোজন, আহার ও স্বাস্থ্য, ধর্ম, সমাজ সংসার ইত্যাদি বিষয়েও তিনি প্রচুর লেখালেখি করেছেন। গান্ধী মূলত লিখতেন গুজরাতি ভাষায়। তবে, তার বই-এর হিন্দি ও ইংরেজি অনুবাদ তিনি দেখে দিতেন।

 

সূত্রঃ উইকিপিডিয়া।

বিএনএনিউজ২৪,জিএন/ হাসনাহেনা 

Total Viewed and Shared : 1960 


শিরোনাম বিএনএ