29 C
আবহাওয়া
৮:১৩ অপরাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » টেকনাফে ওসি প্রদীপের যত অপকর্ম

টেকনাফে ওসি প্রদীপের যত অপকর্ম

টেকনাফে প্রদীপের যত অপকর্ম

বিএনএ কক্সবাজার: অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত প্রদীপ কুমার দাশ কক্সবাজারের মহেশখালী থানা থেকে ২০ অক্টোবর ২০১৮ সালে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে টেকনাফ মডেল থানায় যোগ দেন। যোগদানের পর থেকেই মাদক নির্মূলের আড়ালে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ী ছাড়াও মোটামুটি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল স্থানীয় নিরীহ পরিবারকে টার্গেট করেন তিনি।

এরপর তাদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে, অনেক লোকজনকে ক্রসফায়ার দিয়ে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বিশাল অঙ্কের অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে আদায়ের নির্মম নেশায় লিপ্ত হন প্রদীপ।

টেকনাফ থানায় যোগদানের পর তার নেতৃত্বে ও নির্দেশে শতাধিক বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় বহু লোক মারা যায়। প্রদীপ কুমার দাশের অপরাধ প্রক্রিয়া (মডাস অপারেন্ডি) ছিল কোনো ঘটনায় মাদক উদ্ধার হলে অথবা টার্গেট কোনো ব্যক্তিকে মাদক দিয়ে ফাঁসানো হলে (ফিটিং মামলা) প্রথমত আসামি বা ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর স্থানীয় কিছু শ্রেণির লোকজনসহ তার নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের জন্য দেন-দরবার করা। ক্রসফায়ার না দেয়ার শর্তে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হতো। প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ আশানুরূপ বা চাহিদা অনুযায়ী হলে ভিকটিমকে ক্রসফায়ারে না দিয়ে মাদক উদ্ধার দেখিয়ে উক্ত ব্যক্তির বা আসামির আত্মীয়-স্বজনদের মামলার আসামি করা হতো।

এক্ষেত্রে তার আক্রোশ থেকে নারী, বৃদ্ধ, কিশোর-কিশোরী কেউ রেহাই পেত না। এমনকি নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নও করা হতো। এরপর শুরু হতো তার অন্যরকম অবৈধ অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, তার দায়ের করা মামলার কথিত এজাহারে বর্ণিত আসামিদের ক্রসফায়ারের ভয়ভীতি প্রদর্শন, বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ আসামির সৃজিত সম্পত্তি বেদখল, ভয় দেখিয়ে মামলা প্রতি লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে আদায় করাই ছিল তার নেশা ও পেশা। এই কাজ করার জন্য সমমনা পুলিশ সদস্যদের নিয়ে নিজস্ব পেটুয়া ও সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন প্রদীপ।

তার এই ধরনের অপরাধকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। যারা নূন্যতম প্রতিবাদ করার সাহস দেখিয়েছে, তারা এবং তাদের পরিবার, নিকটাত্মীয়-স্বজন নিপীড়নসহ মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন।

টেকনাফ মডেল থানায় যোগদান করেই স্থানীয় কিছু দালাল শ্রেণির লোকজনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন প্রদীপ। মাদক নির্মূলের অজুহাতে এবং নিজেকে সরকারের একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক দেখানোর আড়ালে জনগণ তথা সরকারি দল-মতের তোয়াক্কা না করে, পুরো থানা এলাকায় এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করেন। তিনি সমাজ ও জনপদে ত্রাস সৃষ্টি করে অপরাধের অভয়ারণ্য ও অপরাধকর্মের রামরাজত্ব কায়েম করেছিলেন বলে জানা যায়। তার এই ধরনের অপরাধকর্মের প্রচার ও প্রসার রোধে প্রদীপ কুমার দাশ এবং তার দলবল স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার লোকজনকে ভয়ভীতি দেখানোর মাধ্যমে মুখ বন্ধ করে রাখতেন। এতেও কাজ না হলে ভয়ভীতি-হুমকি প্রদর্শনসহ মামলায় জড়িয়ে কণ্ঠরোধ করা হতো। তার কুকর্মের বিষয়ে কেউ যাতে সংবাদ সংগ্রহ এবং প্রচার করতে না পারে, সে বিষয়ে প্রদীপ কুমার দাশ ছিলেন সতর্ক। এই ধরনের লোকজনের তথ্য সংগ্রহের জন্য  থানায় এলাকাভিত্তিক সোর্স নিয়োগ করে রাখতেন প্রদীপ দাশ। মেজর সিনহা হত্যা মামলায় আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিএনএনিউজ/আরকেসি

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের সোশ্যাল মিডিয়া বাটনে ক্লিক করুন

Loading


শিরোনাম বিএনএ