30 C
আবহাওয়া
৯:২৯ পূর্বাহ্ণ - মে ২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড, আনন্দে আত্মহারা জনতা

প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড, আনন্দে আত্মহারা জনতা


বিএনএ ডেস্ক :২০১৯ সালের অক্টোবরে রিকশাচালক ছেলেকে বাসা থেকে তুলে গুলি করে মারে টেকনাফ থানা-পুলিশ। ছেলে হারানো সেই মায়ের ক্ষত এখনো শুকায়নি। সিনহা হত্যা মামলার রায়ের কথা শুনে ছুটে এসেছেন আদালত চত্বরে। পঞ্চাশোর্ধ্ব মা হালিমার আহাজারিতে আদালত প্রাঙ্গণে যেন থরথর করে কাঁপছে। হালিমার মতো মানববন্ধনের দাঁড়িয়েছেন আরও অনেক ভুক্তভোগী পরিবার। তাঁদের দাবি তৎকালীন টেকনাফ থানার দায়িত্বে থাকা ওসি প্রদীপের ফাঁসি।

সিনহা হত্যা মামলার আসামি প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ডে  খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেছে  টেকনাফ তথা কক্সবাজারবাসীরা। অনেকদিনের  ক্ষোভ ও বেদনা রূপ নিয়েছে আনন্দে। ভিকটিমের পরিবার এ রায়ে থুশি । তারা দ্রুত এ রায়ের বাস্তবায়ন চায়।

রায় জানতে কক্সবাজার আদালত এলাকায়   ভিড় জমিয়েছেন উৎসুক জনতা। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে ধীরে ধীরে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। এ কারণে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরাও উপস্থিত রয়েছেন। আদালত সংশ্লিষ্ট লোকজন বলছেন দুপুরের পর এ মামলার কার্যক্রম শুরু করা হবে।

এদিকে ঘটনার প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার রায় নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। সবখানেই চলছে শুধু এ মামলা নিয়ে আলোচনা। কেউ বলছে ওসি প্রদীপ-এসআই লিয়াকতের ফাঁসি হবে, আবার কেউ বলছেন সব আসামির ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারেন আদালত।

এর আগে সিনহা হত্যা মামলার রায়কে সামনে রেখে আদালত এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের হাতে ক্রসফায়ারে নিহতদের স্বজন ও নির্যাতিতরা। সকাল পৌনে ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালত এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

এতে ভুক্তভোগীরা ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতসহ সিনহার হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসি দাবি করেছেন।

এতে বক্তব্য রাখেন, ওসি প্রদীপের হাতে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার কক্সবাজারের সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফা খান, ভুক্তভোগী হামজালাল ও ক্রসফায়ারে ছেলে হারানো হালিমা খাতুনসহ আরও কয়েকজন।

উল্লেখ্য,মেজর সিনহা হত্যা মামলায়  ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। এ ছাড়া ছয় জনকে যাবজ্জ্বীবন কারাদণ্ড  দেয়া হয়েছে ।তারা হচ্ছেন এসআই নন্দদুলাল, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এএসআই সাগর দেব,  সাক্ষী নুরুল আমিন,  মো. আইয়াজ, ও নিজাম উদ্দীন । এপিবিএনের তিন সদস্য সহ ৭ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।খালাস প্রাপ্তরা হলেন এপিবিএন এর তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ,কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মো. লিটন মিয়া,

এর আগে  মেজর সিংহা হত্যা মামলার রায় পড়া শুরু হয় সোমবার(৩১জানুয়ারি)বেলা আড়াইটায়।   কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল রায় পড়া শুরু করেন। কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।

৩০০ পৃষ্ঠা রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, হত্যাকাণ্ডটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত।হত্যায় লিয়াকত ও নন্দদুলার ভূমিকা প্রমাণিত।

এ সময় ১৫ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন : টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মো. লিটন মিয়া, এপিবিএন এর তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, টেকনাফ থানার কনস্টেবল রুবেল শর্মা এবং এএসআই সাগর দেব, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী স্থানীয় তিন ব্যক্তি নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ।

সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস  ২০২০ সালের ৫ অগাস্ট কক্সবাজারের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

নির্মম ও আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ১৮ মাসের মাথায় রায় ঘোষণা হচ্ছে এ মামলার। বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে শেষ হয়েছে মামলাটির পরবর্তী কাজ।প্রত্যক্ষদর্শী ৯ জন সহ মোট ৬৫  জন মামলায় সাক্ষ্য দেন।

সিনহা হত্যা মামলার রায়ের আগেই সবকিছুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই পুরো আদালত পাড়ায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালত পাড়ার চারপাশে ও পয়েন্টে পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে নিরাপত্তাকর্মী। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা বিভাগের লোকজন কয়েক স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছেন।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি এবং রামু থানায় একটি মামলা করে। টেকনাফ থানায় দায়ের করা এই দুই মামলায় নিহত সিনহার সঙ্গী সাইদুল ইসলাম সিফাত ও রামু থানায় মাদক আইনে দায়ের করা মামলায় অন্য সঙ্গী শিপ্রা দেবনাথকে আসামি করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করা হয়।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত। কক্সবাজারের র‌্যাব-১৫ মামলাটির তদন্তভার পায়।

ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাতজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এরপর ২০২১ সালের ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসেন।

এ মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি পরিকল্পিত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

দীর্ঘশুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে গত ১২ জানুয়ারি রায়ের জন্য ৩১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন বিচারক।

বিএনএ/ ওজি

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের সোশ্যাল মিডিয়া বাটনে ক্লিক করুন 

Loading


শিরোনাম বিএনএ