পূর্ব বাংলায় গভর্নর শাসন জারি করার দিন প্রধানমন্ত্রী জনাব মোহাম্মদ আলী যে বক্তৃতা রেডিও মারফত করেন, তাতে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক সাহেবকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ এবং আমাকে ‘দাঙ্গাকারী’ বলে আক্রমণ করেন।
আজ প্রকাশিত হলো পর্ব : ৩২৮
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অফিস থেকে আসবার সময় ইদ্রিস সাহেব আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক প্রফেসর আবদুল হাই সাহেব কোথায় থাকেন?” আমি তাকে বললাম, “জানলেও বলব না। কি করে আশা করতে পারেন যে, আপনাকে বলব?” দশ-পনের দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রায় তিন হাজার কর্মী ও সমর্থক গ্রেফতার করা হল। অন্যান্য দলের সামান্য কয়েকজন কর্মী, আর কয়েকশত ছাত্র, এবং পঞ্চাশজনের মত এমএলএকে গ্রেফতার করা হল। গণতান্ত্রিক দলের কয়েকজন এমএলএকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। ঢাকা জেলের দেওয়ানি ওয়ার্ডে ও সাত সেলে কোরবান আলী, দেওয়ান মাহবুব আলী, বিজয় চ্যাটার্জী, খন্দকার আবদুল হামিদ, মির্জা গোলাম হাফিজ, ইয়ার মোহাম্মদ খান, মোহাম্মদ তোয়াহাকে রাখা হয়েছিল। পরে প্রফেসর অজিত গুহ ও মুনীর চৌধুরীকেও গ্রেফতার করে আনা হয়েছিল। হক সাহেবকে নিজ বাড়িতে অন্তরীণ করেছে।
৬ই জুন তারিখে আবু হোসেন সরকার সাহেবের বাড়িতে যুক্তফ্রন্ট পার্লামেন্টারি পার্টির সভা আহ্বান করা হয়। সামান্য কয়েকজন এমএলএ উপস্থিত হয়েছিলেন। কয়েকজন ভূতপূর্ব মন্ত্রীও এসেছিলেন। পুলিশ এসে সভা করতে নিষেধ করলে সকলে সভা ত্যাগ করে যার যার বাড়িতে রওয়ানা করেন।
পূর্ব বাংলায় গভর্নর শাসন জারি করার দিন প্রধানমন্ত্রী জনাব মোহাম্মদ আলী যে বক্তৃতা রেডিও মারফত করেন, তাতে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক সাহেবকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ এবং আমাকে ‘দাঙ্গাকারী’ বলে আক্রমণ করেন। আমাদের নেতারা যারা বাইরে রইলেন, তাঁরা এর প্রতিবাদ করারও দরকার মনে করলেন না।
পরিকল্পনা : ইয়াসীন হীরা
গ্রন্থনা : সৈয়দ গোলাম নবী
সম্পাদনায় : মনির ফয়সাল
সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশনা- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, পৃষ্টা নম্বর:২৭২-২৭৩।
আগের পর্ব পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পর্ব : ৩২৭