।। ইমরান খান ।।
বিএনএ, সাভার: বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার মধ্যে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হলে বাধা দেওয়া হবে না- এমন ইঙ্গিত আসার পর প্রায় সব আসনেই নৌকা মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিচ্ছেন মনোনয়ন বঞ্চিত অনেক আওয়ামী লীগ নেতারা। আর এতে নিজেদের সাথে নিজেদেরই লড়াইয়ের জন্য স্বস্তিতে নেই বর্তমান সংসদ সদস্যসহ মনোনয়নপ্রাপ্ত নৌকার প্রার্থীরা।
এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা-২০ ধামরাই আসনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজির আহমদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মালেক।
তিনি ২০১৪ সালে এই আসনে নৌকা নিয়ে জিতেছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজির আহমদ।
তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মালেক দলীয় নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন না পেলেও রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় ছিলেন। আওয়ামী লীগের নবীন ও প্রবীণ নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করে গেছেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। তবে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর থেকেই সাবেক এই এমপির সমর্থকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমএ মালেকের ছবিসহ বিভিন্ন শুভেচ্ছা বাণী লিখে পোস্ট শেয়ার করছেন। এবং ধামরাইবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মালেকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ধামরাইয়ের জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি সকলের সহযোগিতায় আমি আবার জনগন ও দেশের সেবা করার সুযোগ পাবো। এই এলাকার জনগণই আমাকে ২০১৪ সালে ভোট দিয়ে তাদের সেবা ও এলাকার উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এবারও তাদের প্রত্যাশা পূরণের মধ্য দিয়ে আমি আবার সংসদে যাবার সুযোগ পাবো বলে আশা করছি।’
অপরদিকে ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাদ্দেছ হোসেন আটঘাট বেঁধে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। একই আসনে সংসদ নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে তিনি সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
এসময় মোহাদ্দেছ হোসেন বলেন, ‘আমি দলীয় মনোনয়ন পাইনি। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ দিয়েছেন। একজনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন বাকিদের সবাইকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কার কতো জনপ্রিয়তা সেটি প্রমাণ হবে। দলীয় নির্দেশনা মেনেই আমি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমি বিগত ৫ বছর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ৪ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এসময়ে উপজেলার প্রতিটি এলাকায় আমি বেশি উন্নয়ন করেছি যা সকলের কাছে দৃষ্টান্ত। তাই আমি একজন সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে সকলের কাছে দোয়া চাই।’
আরও পড়ুন: শাহজাহান ওমর বিএনপি থেকে বহিষ্কার
এদিকে ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই নির্বাচনী এলাকায় সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মালেক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাদ্দেছ হোসেনের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। এছাড়া ধামরাইয়ের পৌর শহর থেকে শুরু করে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশের সমর্থনও রয়েছে তাদের। তাই এই দুই নেতা আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগের গত দুইবারের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজির আহমদের পক্ষে এবার বিজয়ী হওয়া অনেকটাই কষ্টকর হয়ে পড়বে। তবে সাবেক এমপি এমএ মালেক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাদ্দেছ হোসেন এই দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী একই প্যানেলের। তাই নিজেদের মধ্যে যাতে বিভক্তি তৈরি না হয় এজন্য যেকোনো একজনকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চান প্যানেলের নেতাকর্মী। আর যদি দু’জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকে তাহলে নৌকা প্রতীকে মনোনীত প্রার্থী বেনজির আহমদের জয় অনেকটা সহজ হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ।
বিএনএনিউজ/ বিএম