29 C
আবহাওয়া
৪:২৮ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সম্পদের অনুসন্ধানের নির্দেশ

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সম্পদের অনুসন্ধানের নির্দেশ


বিএনএ, ডেস্ক : অবশেষে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে নিজ নামে ৩৫০টি বাড়ির বিষয়ে দুদককে অনুসন্ধান নিষ্পত্তির আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২৮ জুলাই হাইকোর্টের বিচারক আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গত ৯ মে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সালাউদ্দিন জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।

YouTube player

গত বছরের ডিসেম্বরে বৃটিশ সংবাদপত্র ব্লুমবার্গে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের বিশাল সম্পদের সাম্রাজ্যের বিষয়টি প্রকাশিত হয়।

ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ জানিয়েছিল যুক্তরাজ্যে একজন মন্ত্রীর প্রায় ২৭০০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। তবে সংস্থাটি তখন তাঁর নাম প্রকাশ করেনি।

২০১৬ সাল থেকে তাঁর মালিকানাধীন কোম্পানি প্রায় ২০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড অর্থাৎ ২৭৭০ কোটি টাকা মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি কিনে যুক্তরাজ্যে রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। যুক্তরাজ্যের কোম্পানি হাউস করপোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকি চার্জ এবং এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে এ পরিসংখ্যান পেয়েছে বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গ।

এতে আরও বলা হয়, মধ্য লন্ডনের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম আবাস টাওয়ার হ্যামলেটস এবং লিভারপুলে ছাত্রদের আবাসন পর্যন্ত বিস্তৃত তাঁর সাম্রাজ্য। জাভেদের ২৫০টি সম্পত্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রায় ৯০ শতাংশ নতুন অবস্থায় কেনা হয়।

গত ২৮ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যে জাভেদের সম্পত্তি নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক সমকাল। সমকালের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে জাভেদের নাম। তখন তা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

মিউনিসিপ্যাল ​​সম্পত্তির রেকর্ড অনুসারে, ব্লুমবার্গ ম্যানহাটনে জাভেদের অন্তত পাঁচটি সম্পত্তি চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৬০ লাখ ডলার বা ৬৬ কোটি টাকায় এগুলো কেনা হয়।

আটটি কোম্পানির মাধ্যমে জাভেদ এবং তাঁর স্ত্রী রুখমিলা তাদের সব রিয়েল এস্টেট  কিনেছেন। তারা দু’জনই এসব কোম্পানির পরিচালক এবং মালিক হিসেবে তালিকাভুক্ত। এই আটটি কোম্পানি এবং সহায়ক সংস্থাগুলো যুক্তরাজ্যে ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি সংগ্রহ করেছে।

জাভেদ দম্পতির ১৭৫টিরও বেশি সম্পত্তি কেনায় ঋণের ব্যবস্থা করেছেন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পরেশ রাজা।  এই দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের পেশাদারদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান সলিসিটর রেগুলেটরি অথরিটির প্রধান নির্বাহী পল ফিলিপ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা মানি লন্ডারিং প্রবিধানের সম্ভাব্য লঙ্ঘনের বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিই।  আমরা যদি দেখতে পাই যে, সংস্থাগুলো এই বাধ্যবাধকতা পূরণ করছে না, তবে আমরা ব্যবস্থা নেব।

দৃশ্যত এই কেলেঙ্কারির কারণে জাভেদ এবার এমপি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হলেও মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। তবে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হয়েছেন।

জাবেদ তাঁর প্রয়াত পিতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ইন্তেকালের পর ২০১৩ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এক বছর পর তিনি ভূমি প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০১৪ সালে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি খালি হাতে এসেছি এবং আমি খালি হাতে চলে যাব।’ ২০১৯ সালে তিনি ভূমিমন্ত্রী হন।

প্রায় দুই মাস পর ২ মার্চ রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে লন্ডনে ব্যবসা ও সম্পদ থাকার কথা স্বীকার করেন। এরপর নিজের বিরুদ্ধে এক টাকা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও বর্তমান ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

লন্ডনে পৈতৃক ব্যবসার কথা উল্লেখ করে বিদেশে নিজের ব্যবসা ও সম্পদ থাকার কথা স্বীকার করে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানান, তার বাবা ১৯৬৭ সাল থেকে লন্ডনে ব্যবসা করেন। তিনি নিজেও যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করে ১৯৯১ সাল থেকে সেখানে ব্যবসা করেন। এরপর তিনি লন্ডনে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন।

গত ডিসেম্বরে নির্বাচনী হলফনামায় জাভেদ তাঁর মোট সম্পদ দেখান মাত্র ২৫.৮৩ কোটি টাকার। তাঁর স্ত্রী রুখমিলা জামানের সম্পদ দেখানো হয় মাত্র ১১ কোটি টাকার। জাভেদ বাংলাদেশে সম্পদের ঘোষণায় তাঁর যুক্তরাজ্যের সম্পত্তির বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেননি।

জাভেদ যুক্তরাজ্যের মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় ‘রাজনৈতিকভাবে উন্মোচিত ব্যক্তি’ বিভাগে নজরদারির আওতায় রয়েছেন। যুক্তরাজ্যে জাভেদের রিয়েল এস্টেট সম্পদ বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অন্তত ১%।

শামীমা চৌধুরী শাম্মী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ