বিএনএ, বিশ্বডেস্ক: বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সী এক আলজেরীয়-বংশোদ্ভূত তরুণ নিহত হওয়ার পর থেকে তিন রাত ধরে ব্যাপক সহিংসতা চলছে। বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) রাত থেকে ফ্রান্সজুড়ে চলা এই সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৪২১ জনকে আটক করা হয়েছে বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন।
বৃহস্পতিবার ছিল বিক্ষোভের তৃতীয় দিন। এদিন বিকেলে নিহত কিশোরের মায়ের নেতৃত্বে একটি মিছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তৃতীয় রাতে লিলি ও মার্সেইতে বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয় ৪০ হাজার পুলিশ।
এর আগে প্যারিসের পশ্চিম দিকে নান্তেরে এলাকায় নাহেল এম নামের এক তরুণ মঙ্গলবার (২৭ জুন) গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাফিক পুলিশ তাকে থামতে বলে। সে না থামলে পুলিশ খুব কাছে থেকে তাকে গুলি করে। পরে আহত নাহেলকে চিকিৎসা দিয়েও বাঁচানো যায়নি। আটক করা হয়েছে গুলি চালানো সেই অফিসারকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নিহত নাহেল ফরাসি-আলজেরিয়ান পরিবারের সন্তান।
তার মা মুনিয়া সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন ‘নাহেল সকাল বেলাও বলছিল , ‘মা আমি তোমাকে ভালোবাসি’, তারপর আমি কাজে যাই, এর এক ঘণ্টা পর একটা ফোন পাই, আমাকে বলা হয়, আমার ছেলেকে গুলি করা হয়েছে।’
এ ঘটনার প্রতিবাদে প্যারিসসহ আরও কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ ও সহিংসতা শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ স্টেশনেও আগুন দেয়। ফ্রান্সজুড়ে প্রায় ৪০ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা এই বিক্ষোভ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বিবিসি জানায়, অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার নাহেলের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তার উকিল বলেছেন মক্কেলের অবস্থা বেগতিক। এ ঘটনায় নাহেলের মা পুরো পুলিশ বাহিনী নয় বরং শুধু তার ছেলেকে হত্যা করা পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়ী করেছেন।
প্যারিসের কেন্দ্রে অবস্থিত রু দে রিভলিতে দোকানপাট লুটের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীরা পোশাকের দোকান জারাসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে লুট করছে। এ ছাড়াও ওয়েস্টফিল্ডের নাইকি স্টোরের সামনেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা।
পশ্চিম ফ্রান্সের নতে শহরে লিডিল সুপারমার্কেটের বাইরে কাচের দরজার ভেতর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে প্রবেশদ্বার ভেঙে ফেলা হয়েছে। আশেপাশে দাঁড়ানো বিক্ষোভকারীদের এ সময় উল্লাস করতে দেখা যায়। মনট্রিউলের উত্তরে লাঠিসোঁটাসহ কিছু যুবক ম্যাকডোনাল্ডসের একটি আউটলেট, এটিএম বুথ, ফার্মেসিতে ভাঙচুর করে। এসময় পুলিশ তাদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের দুজন কর্মকর্তা গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করছেন। তাদের একজন গাড়ির জানালা দিয়ে চালকের দিকে অস্ত্র তাক করেন। চালক গাড়ি চালানো শুরু করলে খুব কাছ থেকে গুলি করেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। কয়েক মিটার দূরে গিয়ে গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
এরপর এ ঘটনায় কার্যত বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ফ্রান্স। বিভিন্ন শহরের টাউন হল, বিদ্যালয় ও পুলিশ স্টেশন লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীদের চালানো হামলাকে ‘ভয়াবহ সহিংসতা’ বলে অভিহিত করেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বৃহস্পতিবার জরুরি বৈঠক ডাকেন।
বিএনএ/এমএফ/এইচ এইচ