বিএনএ, ডেস্ক : দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে এবার অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সরকারের ভুল শুধরে সঠিক রাস্তায় আনতে এবং রাজনৈতিক সরকারের পথ পরিষ্কার করতে দ্রুতই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বিএনপি। তাদের দলের এ পদক্ষেপকে সরকারের সমালোচনা বা আন্দোলনও বলা যেতে পারে।
বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান: গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ বক্তব্য দেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন দেওয়ার ১৪–১৫ দিন পার হয়ে গেছে, কিন্তু রাজনৈতিক, সামাজিক শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি। সংস্কারের নামে নির্বাচনকে বিলম্বিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন সম্পর্কে বিএনপির এই নেতা বলেন, সব বিষয় এখানে আসেনি। কিছু বিষয় অতিরিক্ত এসেছে, যা বাস্তবায়ন করা যাবে না। প্রতিবেদনের সুপারিশ শতভাগ সঠিক, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সংবিধান সংশোধন কমিটি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জুলাই গণ অভ্যুত্থানকে যুক্ত করার সমালোচনা করেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না বা তাদের নিষিদ্ধ করা হবে কি না—তা বাংলাদেশের জনগণ নির্ধারণ করবেন।
এদিকে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর প্রায় ছয় মাসের মাথায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ১৬ ও ১৮ই ফেব্রুয়ারি হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েছে দলটি।
নিজেদের দাবির পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী দুই সপ্তাহ সারা দেশে লিফলেট বিতরণ ও বিক্ষোভ-সমাবেশ পালনেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের এক ধরনের হতাশা ও অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছে দলটি।
প্রসঙ্গত, পাঁচই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সাংগঠনিকভাবে রীতিমত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল আওয়ামী লীগ। শীর্ষ নেতাদের একটি অংশ জেলে, বাকিরা পলাতক। এ অবস্থায় নেতৃত্বশূন্যতায় চরম দিশেহারা তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান।
কিন্তু গত কয়েক মাসে সেই বিপর্যয় কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে ইতোমধ্যেই যোগাযোগের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। তৃণমূলেও কেউ কেউ এলাকায়ও ফিরতে শুরু করেছেন। ফলে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ আবারও স্বাভাবিক রাজনৈতিক অবস্থানে ফিরে আসার ঘোষণায় অনেকটা নড়েচড়ে বসেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি আবারও আওয়ামী লীগকে রাজপথে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ যতক্ষণ পর্যন্ত না গণহত্যা, খুন ও দুর্নীতির জন্য ক্ষমা না চাইবে, বর্তমান নেতৃত্ব ও তাদের ফ্যাসিবাদী আদর্শ থেকে যতক্ষণ সরে না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে কোনো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া সম্ভব না। বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার বিএনপির ঘোষণা, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ১৬ ও ১৮ই ফেব্রুয়ারি হরতাল-অবরোধের ডাক এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রতিহত করার হুশিয়ারি, দেশের সার্বিক রাজনীতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
শামীমা চৌধুরী শাম্মী