24 C
আবহাওয়া
৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ১৮, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » বর্ষবরণ: পর্যটকদের পদচারণায় মূখর কক্সবাজার

বর্ষবরণ: পর্যটকদের পদচারণায় মূখর কক্সবাজার

বর্ষবরণ: পর্যটকদের পদচারণায় মূখর কক্সবাজার

বিএনএ,ঢাকা: লোকে বলে দরিদ্র পিতার সুন্দরী কন্যার নাম কক্সবাজার। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। তাই পর্যটন নগরীতে বর্ষ বরণ উৎসবে কালের সাক্ষী হতে কে না চায়! বছরের শেষ সূর্যাস্ত বা গোধূলি লগ্ন দেখতে,থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন ও নব বর্ষের সূর্যোদয় দেখার আগ্রহ নিয়ে পর্যটকের মহা মিলন ঘটতে যাচ্ছে কক্সবাজারে।

বিদায় ২০২২ । ।সু স্বাগতম ২০২৩ ইংরেজি নববর্ষ । বিদায়ী বর্ষের শেষ সূর্যাস্ত এবং নববর্ষকে স্বাগত জানাতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত নগরী কক্সবাজারে জোরেশোরে প্রস্তুতি চলছে। হোটেল-মোটেল এবং পর্যটন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নব উদ্যোমে সেজেছে । বর্ষ বরণে বিভিন্ন হোটেলে থাকছে ইনডোর আয়োজন। কয়েক বছরের মতো এবারও সমুদ্র সৈকতসহ আউটডোরে কোনো আয়োজন নেই।

তা না থাকলেও দেশী বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মূখর থাকবে কক্সবাজার। প্রায় হোটেল মোটেল ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অগ্রীম বুকিং হয়েছে। প্রায় সাড়ে পাঁচ শ’ হোটেল মোটেল, গেষ্ট হাউস, রেষ্ট হাউস ও বিভিন্ন ফ্ল্যাটবাড়িতে পর্যটক রাত্রি যাপনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন দেড় লাখ। ।অনেকে গাড়িতে,বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান,সরকারী বেসরকারি ভবনের বারান্দা, সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে খোলা আকাশের নীচে ও বাসাবাড়িতে আরো লক্ষাধিক পর্যটক কোন প্রকার রাত পার করার কক্সবাজারে নতুন কোন ঘটনা নয়।সর্বশেষ বড়দিনসহ টানা তিন দিনের ছুটিতে ও লাখো পর্যটক ছিল খোলা আকাশের নীচে।

অন্যদিকে বছরের শেষ সূর্যাস্ত অবলোকন ও নতুন বছরকে বরণ করতে বরাবরের মতো এবারও কক্সবাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে বহু পর্যটক। ইতিমধ্যে হোটেল বুকিং দিয়ে তারা তাদের আগমন নিশ্চিত করেছেন। তবে গত চলতি সপ্তাহের শুরুতে টানা ছুটি থাকায় অতীতের মতো এবারের থার্টিফার্স্ট নাইটে অগ্রিম বুকিং হয় । ।থার্টি ফাষ্ট নাইটকে কেন্দ্র করে কয়েক লাখ পর্যটক আসার প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাইরে বড় কোন অনুষ্ঠান না থাকলে ও বিভিন্নভাবে বড় পরিসরে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন হবে কক্সবাজারে। শেষ সূর্যাস্তকে বিদায় ও রাতে বিভিন্ন হোটেলের ইনডোরে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এবং বিশাল সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়িয়ে ইংরেজি নতুন বছর ২০২২ সালকে বরণ করতে থাকছে নানা আয়োজন।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লোনা জলে গা ভাসানো আর বালুকা বেলায় দাঁড়িয়ে নতুন বছরের নতুন সূর্যের রোদে আলোকিত হয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। সে বিষয়কে কেন্দ্র করে হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস গুলোকে আলাদা করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। নববর্ষের সাজ-সজ্জাসহ নানা ধরণের কারুকার্য করছে। ইতিমধ্যে অনেক হোটেল চুড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।প্রশাসনিক প্রস্তুতিও চলছে জোরেশোরে। অন্যান্যরাও কাজ করছেন পর্যটকদের নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে।

হোটেল দি গ্র্যান্ড সেন্ডি ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রহমান জানান, নববর্ষ উপলক্ষ্যে হোটেল বুকিংয়ের ক্রমান্বয়ে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষ বুকিং হয়েছে। তবে চলতি সপ্তাহে একটি টানা ছুটি হয়ে যাওয়ায় সেভাবে সাড়া মিলবে কীনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

স্বপ্নালয় স্টুডিও এ্যাপার্টম্যান্টের ইনচার্জ কুতুব উদ্দীন জানান, তাদের হোটেলে থার্টি ফাস্ট নাইটের জন্য ৬০ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রিম কক্ষ বুকিং হয়েছে। প্রত্যাশা ছিলো অন্তত শতভাগ কক্ষ অগ্রিম বুকি হবে। অন্যান্য হোটেল-মোটেলেও খোঁজ নিয়ে জানাগেছে ৮০ শতাংশের উপর হোটেল কক্ষ অগ্রীম বুকিং হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে।
বর্ষবরণ: পর্যটকদের পদচারণায় মূখর কক্সবাজার
তবে তারকা মানের হোটেলকে গুলোতে বরাবরের মতোই ফুল বুকিংয়ের প্রত্যাশা রয়েছে। সবকটি তারকা হোটেলে থার্টিফাস্ট নাইটের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানের জন্য অগ্রিম টিকিটও বিক্রি শুরু করেছে।সব টিকটাক থাকলে বর্ষ বিদায় ও নব বর্ষ বরণ উপলক্ষে কক্সবাজার পর্যটন খাতে ১২ শ’ থেকে দেড় হাজার টাকার ব্যবসা হতে পারে বলে আশাবাদী কক্সবাজার চেম্বার এন্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিসের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা। গেল সপ্তাহে ও কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে।

ইনানীর তারকা হোটেল রয়েল টিউলিপের এজিএম নাভেদ চৌধুরী বলেন, ১জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের হোটেল শতভাগ অগ্রিম বুকিং রয়েছে। থার্টিফাস্ট নাইট ও নববর্ষ বরণের নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। দুইজন তারকার শিল্পী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন।

একইভাবে তারকামানের হোটেল ওশ্যান প্যারাডাইস,সীগাল,প্রাসাড প্যারাডাইস, কক্স টুডে,শৈবাল,উপল, প্রবাল,লাবনী, সায়মন বীচ ও লংবীচেও নানা জমকালো আয়োজন থাকবে বলে জানা গেছে। এছাড়াও আরো কিছু বড় মানের হোটেলেও নানা অনুষ্ঠান থাকবে।

জেলা প্রশাসন ও পুলিশ জানিয়েছে, নতুন বছর বরণকে কেন্দ্র করে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। একইভাবে জেলা প্রশাসন বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করেছেন। শৃঙ্খলা রক্ষায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে জোরদার।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান জানান, সরকারিভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে এবারও উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফাস্ট নাইটের কোন আয়োজন করা যাবে না। তাই কক্সবাজারেও কাউকে উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়নি।

কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের এসপি জিল্লুর রহমান জানান, কক্সবাজারে সাড়ে ৫ শ আবাসিক হোটেলে প্রায় দেড় লাখ লোক রাত্রিযাপন করতে পারেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি হোটেলে সিসিটিভি ক্যামেরা নিশ্চিত করা হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল শুরু হলে সেখানেসহ হিমছড়ি, ইনানী ও পাটুয়ারটেকে জোনে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। একইসাথে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বীচকর্মী ও লাইভগার্ডের সাথে সমন্বয় করে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করবে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এজন্য বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সাদা পোশাকধারী পুলিশ সব সময় মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের পর্যটকদের জানমালসহ সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছেন। এবার থার্টি ফাস্ট নাইটসহ পুরো পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবা প্রদানে বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে এবং সেইভাবে মাঠে রয়েছের ট্যুরিস্ট পুলিশ।’

জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান বলেন, ‘কক্সবাজার শুধু দেশের নয় পৃথিবীর একটি আকর্ষণীয় পর্যটন জোন। তাই যে কোন বিশেষ দিন উপলক্ষে কক্সবাজারে পর্যটকের ভীড় থাকে। এবারও পর্যটকরা থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজারমুখী হবে বলে প্রত্যাশা করছি। তাই পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতে এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মনিটরিং কমিটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে থাকবেন। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে র‍্যাব থাকবে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে।

এ দিকে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত বিভিন্ন ভাস্কর্য সমূহে চলছে বর্ণিল আলোকসজ্জা। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অবঃ কমোডর) নুরুল আবছার বলেন, কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পরিকল্পিত নগরায়নের কাজ চলছে।যা দেখে মুগ্ধ হবে প্রকৃতিপ্রেমীরা। বর্ষ বরণে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

বিএনএ/ এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ