24 C
আবহাওয়া
৮:৫৬ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » এই বাংলাদেশ দেখতে চাই না!

এই বাংলাদেশ দেখতে চাই না!

এই বাংলাদেশ দেখতে চাই না!

বিএনএ, ঢাকা: সারাদেশ এখন অশান্ত। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি। ছাত্র বনাম ছাত্র সংঘাত, চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার শঙ্কা, ভারত সরকারের কড়া বার্তার প্রেক্ষাপটে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন ৫ আগস্টের বিপ্লবের তিন মাস না যেতেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
‘এই চেহারা নিয়ে কোনো দিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না, যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি। নিজের ঘরেই যদি বিভেদ থেকে যায়, আমরা সেটা কখনোই ঠিক করতে পারব না।’

YouTube player

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের কী দুর্ভাগ্য, কী ব্যর্থতা—আমরা ডাক্তার মিলনের সেই আত্মত্যাগ সত্যিকার অর্থে বাস্তবে রূপ দিতে পারিনি। তাঁরা ১৯৯০ সালে প্রাণ দিয়েছিলেন ভোটের অধিকারের জন্য, স্বৈরাচার দূর করার জন্য। আর আজকে এই ২০২৪ সালে ভোটের অধিকারের জন্য যুদ্ধ করতে হয়েছে। এ কোন জাতি আমরা। এবার সে সুযোগ হয়েছিল সবাই মিলে একসঙ্গে একজোটে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসার। ছেলেরাও ছিল, আমরাও ছিলাম।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে, কারাগারে গেছে, নির্যাতিত হয়েছে। সেই মানুষগুলো ২০২৪-এর ৫ আগস্ট আরেকটি বিজয় অর্জন করেছে। সেই বিজয় অর্জন হয়েছে রাজপথে অনেক রক্তের মধ্য দিয়ে, অনেক প্রাণের ভেতর দিয়ে। কিন্তু তার ফল কি এই বাংলাদেশ? তিন মাস হয়নি, এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে। একজন আরেকজনের বুকের রক্ত ঝরাচ্ছি। এখন পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, আক্রমণ করছে।’

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এই কয়টা দিনে আমরা খুব চিন্তিত, উদ্বিগ্ন, ভয়াবহভাবে উদ্বিগ্ন। আপনি চিন্তা করতে পারেন, ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে! আপনি চিন্তা করতে পারেন, যে মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য আমরা এত দিন লড়াই করলাম, তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে! এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না, আমি অন্তত চাই না।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া আমি দেখি না সহজে। কিন্তু যখন দেখি, আতঙ্কিত হই। ‘কী উন্মাদনা! পুড়িয়ে দাও জ্বালিয়ে দাও—এ ধরনের কথাবার্তা। চিন্তা করতে পারেন, কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে।

আমরা কি বুঝি আমাদের ভয়টা কোথায়, আতঙ্কটা কোথায়? আমরা কি বুঝি আততায়ী কোথায় ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আমাদের পেছনে। বুঝি না, বুঝলে এ ধরনের দায়িত্বহীন কথাবার্তা আমাদের মুখ দিয়ে বের হতো না।’

হতাশা প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, কিছুসংখ্যক মানুষ—তাঁরা নিজেদের অত্যন্ত জনপ্রিয়, সবচেয়ে দেশপ্রেমিক মনে করেন, আর গোটা জাতিকে আজকে তারা বিভাজনের দিকে উসকে দিয়ে একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।’ কারও নাম উল্লেখ না করে বিএনপি মহাসচিব উপস্থিত চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা গভীরভাবে চিন্তা করবেন, আমি কারও নাম বলব না। কারও নাম বলতে চাই না। আপনারা ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করবেন যে যারা আজকে দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলছে, অনৈক্যের দিকে ঠেলছে, তারা আমাদের আসলে শত্রু নাকি মিত্র?

বিএনপির মহাসচিব প্রথম আলো, ডেইলি স্টার পত্রিকা বন্ধ করার দাবি ও পত্রিকা দুটির প্রধান কার্যালয়ের ফটক ঘিরে বিক্ষোভের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আপনি এক ফ্যাসিস্টকে উৎখাত করেছেন। কারণ, সে আপনার গলা টিপে ধরেছিল, সে আমাদের মেরে ফেলছিল, কথা বলতে দিত না, ভোট প্রদান করতে দিত না, হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে। আবার এখন আরেকটা…একে বলতে দেওয়া যাবে না, একে নিশ্চিহ্ন করো, হাউ ডু ইউ জাস্টিফায়েড।

আপনারা বলেন, এভাবে একটা সমাজ এগোতে পারে?’ সমাজে ঘৃণা ও বিভাজন দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আর কত এই বিভাজন নিয়ে, আর কত ঘৃণা নিয়ে অমরা বাংলাদেশকে টেনে ওপরে তোলার চেষ্টা করব। বারবার টেনে তোলা হবে, আবার পড়বে ঘৃণা নিয়ে। দানবীয় শক্তি দিয়ে আবার উঠবে, আবার পড়বে।’

বিএনপি মহাসচিব দেশে চলমান পরিস্থিতি উত্তরণ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচনের পথে যেতে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে যাঁরা সরকারের দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের এমন কোনো কথা না বলার অনুরোধ করেছেন, যাতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।

বিএনএনিউজ/ সৈয়দ সাকিব/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ