বিএনএ,চট্টগ্রাম: ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামে। টানা বৃষ্টি হালদা বাঁধ ভেগে প্লাবিত হয়েছে উত্তর চট্টগ্রামের বেশ কিছু উপজেলা। চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ভেসে গেছে রোপন করা আমন ও আমনের বীজতলা । তলিয়ে গেছে মৎস্য প্রজেক্ট । সব মিলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্যখাতে।
কৃষি: সৃষ্ট বন্যায় চট্টগ্রাম উপজেলাগুলোতে কৃষিখাতে ৩৯৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের করা সাম্প্রতিক সময়ের বন্যায় জেলার ১৫ উপজেলা ও নগরীর আংশিক অংশে আমন–আউশ ও গ্রীষ্মকালীন সবজিক্ষেতের ক্ষতির তালিকা থেকে এই তথ্য জানা গেছে।ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় চট্টগ্রামে শুধুমাত্র রোপা আমনের ক্ষতি হয়েছে ২৫১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ১৩ হাজার ৮৩১ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় মোট ১ লাখ ৬১ হাজার ৩৭১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবারের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা অনেক কষ্ট হবে বলে জানান বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা।
কৃষির মধ্যে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা হচ্ছে ফটিকছড়ি। ফটিকছড়িতে অতি বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে গত সপ্তাহে মারাত্মক বন্যায় হাজারো কৃষকের স্বপ্ন মূহুর্তে মিশে গেল। তলিয়ে গেছে হালদা, ধুরুং ও সর্তা পাড়ের ধানক্ষেত। নষ্ট হয়েছে আমন ধানের বীজতলা আর শাক-সবজির বাগান। এতে নিঃস্ব হয়েছে হাজরো কৃষক। এছাড়া সাড়ে ৩০ হাজার কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বলছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে থাকবে সরকার। তালিকা করা হচ্ছে এসব কৃষকের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা ১৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার আনুমানিক ৩০০-৩৫০ টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। গত শুক্রবার সকাল থেকে প্লাবিত অধিকাংশ এলাকার পানি কমতেই বেরিয়ে আসছে বন্যার ক্ষত। বন্যার পানিতে গ্রামীণ সড়কগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগান বাজার,দাঁতমারা ও সুয়াবিল এলাকায় অসংখ্য কাঁচা বসতঘর ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া কৃষিতেও বড় ক্ষতি হয়েছে এই বন্যায়। বানের জলে ভেসে আসা বালুতে চাপা পড়েছে ধানের ক্ষেত। এ ছাড়া পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে আমনের আবাদও।
জানতে চাইলে ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ হাসানুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি বন্যায় পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের বীজতলা, আমন ধান ও সবজি। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২০কোটি টাকার মতো। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করছি। তাদেরকে বীজ ও সারসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় ১৫ উপজেলা নগরীসহ কৃষিখাতে ৩৯৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মৎস্য: চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যায় ভেসে গেছে অসংখ্য মাছ চাষের জলাশয়। এতে মৎস্যখাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৯০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অফিস সূত্র বলছে ‘টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের মীরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলার মৎস্যচাষের পুকুর, দিঘি ও হ্যাচারির মাছ ভেসে গেছে। চট্টগ্রামে ৫ হাজার ৫৪১ হেক্টর জমির ১৬ হাজার ৮৬৪টি মাছ চাষের পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১৬ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এর বাইরে ১৪ লাখ বিভিন্ন মাছের পোনা এবং ২ লাখ চিংড়ি পোনা ভেসে গেছে। এ ছাড়াও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার।
এর মধ্যে শুধু মীরসরাই উপজেলায় মৎস্যখাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৪২ কোটি টাকা। মীরসরাইয়ের পর বেশি ক্ষতি হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলায়। এ উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নের পুকুর, দিঘি ও মৎস্য প্রজেক্ট বানের পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ১০ লাখ টাকা।এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্যচাষিরা।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যে আরো জানা যায়, বন্যায় ছোট-বড় ১৬ হাজার ৮৬৪টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কোনোটির অবকাঠামো নষ্ট হয়েছে আবার কোনোটির মাছ ভেসে গেছে। মীরসরাইয়ে মুহুরী নদীকে কেন্দ্র করে মাছের যেসব প্রজেক্ট রয়েছে, সেগুলোর ক্ষতি হয়েছে বেশি। এছাড়া হালদা নদীর কাছাকাছি এলাকার খামারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এবিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ জানান, ফেনী ও খাগড়াছড়ি জেলাসংলগ্ন হওয়ায় চট্টগ্রামেও বন্যায় মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত যে হিসাব পাওয়া গেছে, তাতে জেলায় মৎস্য খাতে ২৯০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মীরসরাইয়ে ১৪২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যার ৮০ শতাংশই মুহুরী প্রজেক্টের। এছাড়া ক্ষতির পরিমাণ ফটিকছড়িতে ৩৩ কোটি, হাটহাজারীতে ২৩ কোটি, রাউজানে প্রায় ১০ কোটি টাকা। অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বিএনএনিউজ/নাবিদ/এইচমুন্নী