29 C
আবহাওয়া
৯:৫২ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » চট্টগ্রামে করোনা রোগীর ঠাঁই নেই, আইসিইউ ও অক্সিজেন সংকটে হাহাকার

চট্টগ্রামে করোনা রোগীর ঠাঁই নেই, আইসিইউ ও অক্সিজেন সংকটে হাহাকার

করোনার বিশ্ব পরিস্থিতি, ২৪ ঘন্টায় প্রাণ গেল ৮ হাজার জনের

বিএনএ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি কোন হাসপাতালে করোনা রোগীর শয্যা খালি নেই। কোথাও ঠাঁই হচ্ছে না করোনা রোগীর। অক্সিজেন ও আইসিইউ সংকটে মারা যাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা।প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, বেসরকারি বড় হাসপাতালগুলো রোগীদের চিকিৎসা দীর্ঘ করছে। তাদের বিল বেশি করার জন্য হাসপাতালে রোগী ভর্তি হওয়ার ৩-৪দিন পর চিকিৎসা শুরু করছে। বিষেশায়িত হাসপাতালগুলোতে রোগীর অভিভাবকদের ঢুকতে দেয় না। যার ফলে রোগীর অবস্থা জানতে পারেন না তারা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছেমতো রোগীর অবস্থা জানান। হাসপাতালগুলোতে রোগীর প্রতি নার্স ও জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্তরিকতার অভাব নেই। সিনিয়র চিকিৎসকরা দৈনিক একবার পরামর্শ দিয়ে যান। রোগীর সংকটাপন্ন অবস্থায় তাদের পাওয়া যায় না। সময়মতো তাদের সিদ্ধান্ত পাওয়া না যাওয়ায় জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষে রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে বিলম্ব হয়।

বিভিন্ন হাসপাতাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে কোনো শয্যা খালি নেই। খালি নেই আইসিইউ শয্যাও। মহিলা ওয়ার্ডে পুরুষ ও পুরুষ ওয়ার্ডে মহিলা রোগী ভর্তি করা হয়েছে। চমেক হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকায় ফ্লোরে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আবার মহিলা ওয়ার্ডে অক্সিজেনের চাপ কম থাকায় ফাতেমা খাতুন নামে এক রোগীকে পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম অক্সিজেন পাচ্ছে চমেক হাসপাতালের রোগীরা।

ফলে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি ও কোভিড-১৯ রোগে মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।  এরমধ্যে নগরীর ৭ জন ও উপজেলার ১০ জন।জেলায় চলতি মাসের ২৭ দিনে কোভিড-১৯ রোগে ২২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রামে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩২ জনে। এর মধ্যে নগরে ৫৬১ জন ও উপজেলার ৩৭১ জন।

চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি মিলে শয্যা রয়েছে ৩হাজার৮৭২টি। সেন্ট্রাল অক্সিজেন ২৬টির মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১২টি ও বেসরকারিতে ১৪টি। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আছে ১৭১টি। যার মধ্যে সরকারি ৪৭টি ও বেসরকারি ১২৪টি। ৮০টি কনসেনট্রেটরের মধ্যে সরকারি ৬৯ ও বেসরকারি ২৪টি। আইসিইউ রয়েছে মাত্র ১৬২টি। যার মধ্যে সরকারি ৪৩টি ও বেসরকারি ১১৯টি। সরকারি-বেসরকারি মিলে ভেন্টিলেটর আছে ৪২টি। সরকারি ৩৮টি ও বেসরকারি ৪টি।

চট্টগ্রামে করোনায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৭৮ হাজার ৪৩৬ জন। নগরে ৫৮ হাজার ৯৬৪ জন এবং উপজেলায়  ১৯ হাজার ৪৭২ জন।  নগরে আক্রান্তের হার ৭৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ও উপজেলায় ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ৫৪ হাজার ৯৯২ জন।

করোনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে গ্রামের মানুষ।কিছুদিন আগেও গ্রামের মানুষের মধ্যে ধারণা ছিল সেখানে তেমন একটা করোনার সংক্রমণ হবে না। এখন দেখা যাচ্ছে গ্রামেই করোনার সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। তারা স্বাস্থবিধি না মানার পাশাপাশি চিকিৎসা নিতেও দেরি করছে। যার ফলে আক্রান্তের সঙ্গে প্রতিযোগিতা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এখন যারা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে তাদের মধ্যে গ্রামের রোগী ৭৫ শতাংশ। প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে-গঞ্জে। গ্রামে-গঞ্জে করোনা পরিস্থিতি দিনে দিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ডেলটার সংক্রমণ নগর ছাড়িয়ে গ্রামে পৌঁছে যাওয়ায় বয়স্ক মানুষের পাশাপাশি কম বয়সিদের মৃত্যু বেড়েছে।

গ্রামে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে কেউ না কেউ সর্দি, জ্বর-কাশি ও গলায় ব্যথায় আক্রান্ত। এদের বেশির ভাগই নমুনা পরীক্ষা করাতে আগ্রহী নয়। তাই ঘরে বসেই প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাচ্ছেন তারা। যাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো তারা হয়তো কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না। সর্দি-কাশি-জ্বর শ্বাসকষ্ট নিয়ে কেউ কেউ শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে যাওয়ায় বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।

গ্রামে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতিশীল

গ্রামাঞ্চলে করোনা মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করবে। গ্রামে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সহযোগিতা করা, কারোর শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তাকে পরীক্ষা করানো, আইসোলেশনে রাখাসহ সার্বিক অবস্থা দেখভাল করবে এই কমিটি। কমিটি করে দায়িত্ব শেষ করেছে সরকার।তৃণমূলের এসব কমিটি কাজ করছে কি না, তা মনিটরিং করা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে গ্রামে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

বিএনএনিউজ২৪/আমিন,এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ