29 C
আবহাওয়া
৮:০৫ অপরাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দুই বছরে বরিশাল নগরীতে ৪৫৬টির বেশি বিবাহ বিচ্ছেদ

দুই বছরে বরিশাল নগরীতে ৪৫৬টির বেশি বিবাহ বিচ্ছেদ


বিএনএ, বরিশাল: বরিশাল মহানগরীতে গত দুই বছরে ৪৫৬টি বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন নারীরা। ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন মাসে সবচেয়ে বেশি বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে।

সিটি করপোরেশন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২২ সালের জুন মাসে ২৪৭টি ও ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ২৩ মার্চ মাস পর্যন্ত ২০৯টি বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডেই এ ঘটনা ঘটেছে। একই বছরের মধ্যে ২২৯ জন নারী বিবাহ বিচ্ছেদ করেছেন।

এ ছাড়া পুরুষদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন ১২৫ জন। এই সময়ের মধ্যে তালাক সংক্রান্ত সালিশ মীমাংসা হয়েছে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ১টি, ২০২২ সালের এপ্রিলে ১টি ও একই বছরের জুনে ২টি।

সিটি করপোরেশন থেকে পাওয়া ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের তালাক মীমাংসা সংক্রান্ত সালিশ পরিষদ কর্তৃক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ১৯৭টি সালিশ হয়েছে। কিন্তু নিস্পত্তি হয়েছে মাত্র ৪টি।

অন্যদিকে ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে মোট তালাক হয়েছে ১৬টি। এর মধ্যে নারীদের কাছ থেকে তালাক হয়েছে ১০টি, পুরুষের ২টি, নথিজাত তালাক ৪টি। এ সময়ের মধ্যে মীমাংসা হয়নি একটিও।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহ, মাদকাসক্তি, যৌতুক ও নির্যাতনসহ বিভিন্ন কারণে নারীরা স্বামীকে তালাক দিচ্ছেন।

বিচ্ছেদ হওয়া এক নারী বলেন, স্বামী কথায় কথায় সন্দেহ করতেন। আবার তিনি অন্য নারীর প্রতি আসক্তি থাকায় সংসারে প্রায় অশান্তি লেগে থাকত। তাই বাধ্য হয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিচ্ছেদ হওয়া এক পুরুষ জানান, বিয়ের পর নানা কারণে মিল না হওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছি।এদিকে বিবাহ এবং তালাক রেজিস্ট্রি করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানছেন না অনেকেইে। এখানকার নিম্ন আয়ের অধিকাংশ মানুষ বিনা রেজিষ্ট্রেশনে যেমন বিয়ে করছেন, তেমন বিচ্ছেদও ঘটাচ্ছেন একই কায়দায়। এমনকি তালাকের পর সিটি কর্পোরেশনের সালিশী নোটিশেও তেমন সাড়া মিলছে না।

বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন মতে তালাক অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং তালাকের পর সিটি করপোরেশন এলাকায় হলে সালিশী বোর্ডে অবশ্যই নোটিশের এক কপি পাঠাতে হবে। পরবর্তীতে করপোরেশন সালিশী শাখা বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকের ঘটনা সমাধানের জন্য উভয়পক্ষকে নোটিশ পাঠান। এরপর দু’পক্ষ সাড়া না দেয়ায় দাম্পত্যজীবন বজায় রাখার জন্য সিটি কর্পোরেশনের ভুমিকা খুব একটা কাজে আসছে না।

সিটি করপোরেশনের এক হিসেবের তথ্যমতে, ২০২০ সালে মহানগরীতে ২০৫টি তালাকের নোটিশ পৌঁছে নগর ভবনে। আর পরবর্তী বছরে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৪৪টি। কিন্তু শতকরা ১০ ভাগের ক্ষেত্রেও দাম্পত্য জীবন পুন:স্থাপনে নগর ভবনের পদক্ষেপ কাজে আসেনি। আইন অনুযায়ী নগর ভবন এসব তালাক নোটিশের অনুলিপি পাওয়ার পরেবিচ্ছেদের নোটিশদাতাসহ স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই সমঝোতার চিঠি দেন।৯০ দিনের মধ্যে এ ধরনের সমঝোতা হলে তারা পুনরায় দম্পত্য জীবন শুরু করতে পারেন। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নোটিশ পেয়ে বিচ্ছেদকৃতরা নগর ভবনের সংশ্লিষ্ট শাখায় হাজির হচ্ছেন না। ফলে ৯০ দিন পরে স্বাভাবিকভাবেই বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর হয়ে যাচ্ছে।

নগর ভবন সূত্র মতে, নোটিশের অনুলিপি পেয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই আমন্ত্রণ জানানো হলেও অর্ধেকেরও বেশীরভাগ তাতে সাড়া দেন না। গত বছর ২৪৪টি তালাক নোটিশের মধ্যে ১০টি ক্ষেত্রেও সমঝোতা সম্ভব হয়নি। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সমঝোতা হয়েছে মাত্র ৪টি। আগের বছরের চিত্রও প্রায় একই। অথচ প্রতিবছরই তালাকের সংখ্যা ২০-২৫ ভাগ পর্যন্ত বাড়ছে।
বিসিসির ২৪,২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সেলিনা বেগম জানান, বিবাহ বিচ্ছেদে দু’পক্ষেরই দোষ থাকে। কিন্তু তালাকের বিষয়ে নোটিস পাঠানো হলেও বেশিরভাগ সময়েই নারীরা উপস্থিত থাকেন। এজন্য মীমাংসা হয় না।
সচেতন নাগরিক কমিটির বরিশাল জেলার সভাপতি গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, বাল্যবিয়ের কারণে দাম্পত্য কলহ  শুরু হয়। শেষ পরিণতি বিবাহ বিচ্ছেদ। তাই বিবাহ বিচ্ছেদ ঠেকানোর জন্য নোটারীর মাধ্যমে বিয়ে বন্ধ করা জরুরি।

এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিপ্লব কুমার রায় বলেন, তালাকের জন্য প্রথমে নোটিশ পাঠাতে হয়। এরপর সালিসের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন পড়ে। সব শেষ ৯০ দিন অতিবাহিত হেওয়ার পরে একজন রেজিস্টার্ড নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তালাকের সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হয়।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, কোনো পক্ষই আপস না হওয়ায় তালাক সংক্রান্ত সালিশ মীমাংসা কম হয়েছে।

গত বছর (২০২২ সালে) বরিশাল বিভাগে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ছিল ০ দশমিক ৩১ শতাংশ। এ সংখ্যার নিচে আর কোনো বিভাগ নেই। আর তালাকপ্রাপ্ত হয় ০.২৯ ভাগ স্ত্রী। অর্থাৎ বরিশাল বিভাগে তালাক ও বিচ্ছেদের সংখ্যা ছিল অন্যান্য বিভাগের চেয়ে সবচেয়ে কম।

বিএনএ/ সাইয়েদ কাজল,ওজি

 

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ