বিএনএ ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেজন্য ধনী দেশগুলোকেই মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার(২৭ এপ্রিল) রাতে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন আয়োজিত ভার্চুয়াল ক্লাইমেট সামিটে এক ভিডিও বার্তায় শেখ হাসিান আরও বলেন, পরিবর্তনের কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই। একটি দেশ কার্বন নিঃসরণ করলে প্রতিটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেজন্য প্রতিটি দেশকেই দূষণ বন্ধে ভূমিকা রাখতে হবে। তবে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমাতে ধনী দেশগুলো, বিশেষ করে জি-২০ জোটভুক্ত দেশগুলোর মূল ভূমিকা পালন করা উচিত।প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসাকে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে গত সপ্তাহে ‘লিডার্স সামিট’ আয়োজনের জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশংসা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তির কঠোর বাস্তবায়নই বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন এবং এর ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধের একমাত্র উপায়।গ্রহটিকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নেয়ার সময় আগামীকাল নয়, আজ।বিশ্বব্যাপী নিম্ন পর্যায়ের মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ (কার্বন) নির্গমনের জন্যিএকশটি দেশ দায়ী এবং জি-২০ দেশগুলো ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী।প্যারিস চুক্তিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অভিযোজন এবং প্রশমনের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল গঠনের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়ছে এবং এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি সমস্ত অসুস্থতার জন্য প্রধানত দায়ী। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রার ক্রমাগত বৃদ্ধি মানব জাতির জন্য সবচেয়ে জরুরি উদ্বেগের বিষয়।প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠতে না দিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন রোধে এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট কিছু করা হয়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলো প্রতিনিয়ত ভয়াবহ বন্যা, খরা, জোয়ারের ঢেউ, জলোচ্ছাস, বজ্রপাত ইত্যাদির মতো বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিজ্ঞতা অর্জন করে আসছে।বর্তমানে আমার দেশে তাপপ্রবাহ চলছে।গত বছর বাংলাদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশটির এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়। বাংলাদেশে গত বছর ভারী বৃষ্টিপাত ছাড়াও সুপার সাইক্লোন আমফানসহ বেশ কয়েকটি সাইক্লোন আঘাত হানে।এই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ নয়, এবং বাস্তবিক অর্থে শুধু বাংলাদেশই নয়, বরং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ)-এর কোন সদস্য রাষ্ট্রই উল্লেখযোগ্য কার্বন নিঃসরণকারী নয়।কিন্তু তা সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশ ২ শতাংশ জিডিপি হারাচ্ছে।
সিভিএফ জলবায়ু অভিযোজনের সম্মুখভাগে রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম একটি ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে।৮শ’র বেশি অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে ৪১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।বাংলাদেশ পার্লামেন্ট চলমান জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণতাকে ২০১৯ সালে একটি বৈশ্বিক জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে।দেশব্যাপী ৩০ মিলিয়ন বৃক্ষ রোপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।কম-কার্বনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান’ প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর দেশের জিডিপি’র প্রায় ২.৫ শতাংশ বা প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবেলায় টেকসই জলবায়ু সহনশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যয় করা হয়। উপকূলীয় এলাকায় ১২ হাজার সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ এবং ২০০ হাজার হেক্টর ‘গ্রিন বেল্ট’ নির্মাণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা লবণাক্ততা ও বন্যা সহনশীল শস্য, বৃষ্টির পানির সংরক্ষণের জলাধার ও পুকুর-বালি-ফিল্টার উদ্ভাবন করেছে। এছাড়াও তারা উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য পানির ওপর ভাসমান কৃষি প্রযুক্তি ও ভ্রাম্যমাণ পানি শোধানাগার প্লান্ট উদ্ভাবন করেছেন।উপকূলীয় জেলাগুলোর চরাঞ্চলে কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ বন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তাঁর সরকার সাইক্লোন-প্রবণ এলাকাগুলোর দরিদ্রদের জন্য সাইক্লোন সহনশীল টেকসই বাড়ি-ঘর নির্মাণ করছে।পানি সংরক্ষণ ও জলাশয়গুলো নাব্যতা বাড়াতে সারাদেশে নদী ও খাল ড্রেজিং করা হচ্ছে।
ঢাকায় সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল অফিস অব গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন স্থাপনের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কেন্দ্রটি স্থানীয় উদ্ভাবিত অভিযোজন প্রচারণায় কাজ করে যাচ্ছে।
চলমান করোনা ভাইরাস মহামারি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্ব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।মারাত্মক ভাইরাসটি থেকে মুক্তি পেতে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
করোনার পর, সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনর সবচেয়ে আলোচিত বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি এখন প্রতিটি দেশের জন্য, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু দুর্বল দেশগুলোর জন্য একটি বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় ১১ লাখের বেশি রোঙ্গিাকে আশ্রয় দিয়েছে। জোরপূর্বক-বাস্তুচ্যূত এই সব মিয়ানমারের নাগরিকদের পরিবেশগত-সংকটপূর্ণ কক্সবাজারে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদেরকে আশ্রয় দেয়ায় ওই এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিএনএনিউজ/আরকেসি
