বিএনএ, ডেস্ক: আজ ১৭ রমজান, ঐতিহাসিক বদর দিবস। আজকের দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে হিজরি দ্বিতীয় সনের ১৭ রমজান মদিনা থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের লড়াই ‘বদরযুদ্ধ’। বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)- এর নিয়ে আসা ধর্ম, ইসলামের বিরুদ্ধবাদী বিশাল সৈন্য-সামন্তের মোকাবিলায় ঈমানদার বান্দাদের ছোট একটি দলের সশস্ত্র সংগ্রাম ছিল এটি। ১৭ রমজান মদিনার মুসলিম ও কুরাইশদের মধ্যে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
এ যুদ্ধে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে তার সঙ্গে মুসলিম বাহিনীতে ছিলেন আবু বকর, উমর ইবনুল খাত্তাব, আলি ইবনে আবি তালিব, হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব, মুসআব ইবনে উমাইর, যুবাইর ইবনুল আওয়াম, আম্মার ইবনে ইয়াসির ও আবু যার আল-গিফারি। মুসলিম বাহিনীতে সৈনিক সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন। এর মধ্যে মুহাজির ছিলেন ৮২ জন এবং আনসারদের মধ্যে আওস গোত্রের ছিলেন ৬১ জন ও খাজরাজ গোত্রের ছিলেন ১৭০ জন। মুসলিমদের সাথে ৭০টি উট ও দুইটি ঘোড়া ছিল। ফলে তাদের সামনে পায়ে হেঁটে যাওয়া বা প্রতি দুই বা তিনজনের জন্য একটি উট ব্যবহার ছাড়া উপায় ছিল না।
কুরাইশরা ১৩শ’ সৈনিকের এক বাহিনী গড়ে তোলে এবং আবু জাহেল বাহিনীর প্রধান হন। এই বাহিনীতে অসংখ্য উট, ১০০ ঘোড়া ও ৬০০ লৌহবর্ম ছিল। আবু জাহেল, উতবা ইবনে রাবিয়া, শাইবা ইবনে রাবিয়া, আবুল বাখতারি ইবনে হিশাম, হাকিম ইবনে হিজাম, নওফেল ইবনে খুয়াইলিদ, হারিস ইবনে আমির, তুয়াইমা ইবনে আদি, নাদার ইবনে হারিস, জামআ ইবনে আসওয়াদ ও উমাইয়া ইবনে খালাফসহ মক্কার অনেক অভিজাত ব্যক্তি এই বাহিনীতে যোগ দেন।
মক্কার কুরাইশরা যখন দেখল- নবী করিম (সা.) মদিনায় হিজরত করে পৌত্তলিক, ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমানদের সমন্বয়ে পৃথিবীর প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র ‘মদিনা সনদ’- এর ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করেছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও দলমত নির্বিশেষে তার নেতৃত্বে মদিনাবাসী বিনা প্রতিবন্ধকতায় নিঃশঙ্কুচ জীবনযাপন করছেন। ইসলামের মর্মবাণী ধীরে ধীরে আরব উপদ্বীপ ছেড়ে বহির্বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছিল, তখন মক্কার কাফের সম্প্রদায় ও মদিনার ষড়যন্ত্রকারী মুনাফিকরা চক্রান্ত করে নবী করিম (সা.) ও ইসলামকে দুনিয়া থেকে চিরতরে উৎখাত করতে যুদ্ধের রণপ্রস্তুতি গ্রহণ করে।
বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘আজ যে ব্যক্তি কাফিরদের বিরুদ্ধে ধৈর্যের সঙ্গে সওয়াবের প্রত্যাশায় যুদ্ধ করবে, শহীদ হবে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন।’ (বায়হাকি)
আল্লাহর নবীর সঙ্গে মাত্র ৩১৩ জন মুজাহিদ। তারা প্রায় নিরস্ত্র। অপর পক্ষে অবিশ্বাসীদের নেতা আবু জাহেলের নেতৃত্বে এক হাজার প্রশিক্ষিত সৈন্যের সুসজ্জিত বাহিনী। এ যুদ্ধে মানুষের ধারণাপ্রসূত সব ধরনের চিন্তা ও উপলব্ধির বাইরে গিয়ে আল্লাহতায়ালা অস্ত্রশস্ত্রহীন ঈমানদারের অতিক্ষুদ্র দলটিকে বিজয় দান করেন।
আরবের তৎকালীন যুদ্ধরীতি অনুযায়ী প্রথমে সংঘটিত মল্লযুদ্ধে মুসলিমদের হাতে কাফের বাহিনী পরাজিত হয়। মুসলিম বাহিনী বীরবিক্রমে লড়াই করে ইসলামের বিজয় কেতন ছিনিয়ে আনেন। বদর যুদ্ধে ৭০ জন কাফের নিহত ও ৭০ জন বন্দী হয়। অন্যদিকে মাত্র ১৪ জন মুসলিম বীর সেনা শহীদ হন; কাফেরদের বহু অস্ত্র ও রসদপত্র মুসলমানদের হস্তগত হলো।
১৭ রমজান বদর যুদ্ধ থেকেই শুরু হয় ইসলামের যাত্রা। তওহিদ ও ঈমান যে এক অজেয় শক্তি, এর সামনে দুনিয়ার সব শক্তিই মাথা নত করতে বাধ্য, এ কথা মুসলমানরা পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। বস্তুত, বদর যুদ্ধ ছিল ঈমানের মহাপরীক্ষা। এতে রোজাদার সাহাবিরা যেভাবে সফলকাম হতে সক্ষম হয়েছেন, ইতিহাসে তার তুলনা নেই। সাফল্যের অপূর্ব বিজয়গাথা ইসলামের ত্যাগের শিক্ষায় সত্য ও ন্যায়ের পথে মুসলমানদের যুগ যুগ ধরে প্রাণশক্তি জুগিয়ে আসছে।
বিএনএনিউজ/ রেহানা/ বিএম/হাসনা