বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রকাশ করছে। আজ থাকছে নীলফামারী-৪ আসনের হালচাল।
নীলফামারী -৪ আসন
নীলফামারী-৪ সংসদীয় আসনটি সৈয়দপুর এবং কিশোরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৫ নাম্বার আসন।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কানাই লাল সরকার বিজয়ী হন
১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি রংপুর-১৫ নামে পরিচিত ছিল নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ২১ হাজার ৮ শত ৬৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৫২ হাজার ২ শত ৮১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কানাই লাল সরকার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ৮ শত ৬৩ জন।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ মোজাফফর এর আবুল কাসেম মিয়া। তিনি পান ১৩ শত ১ শত হাজার ৯০ ভোট।
দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির মুজিবুর রহমান
১৯৭৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি পরিচিতি হয় রংপুর-৪ নামে। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৬শত ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৬৩ হাজার ৮ শত ৪০ জন। বিএনপির মুজিবুর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৯ হাজার ৮ শত ৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ
মোজাফফর এর অধ্যাপক আব্দুল আজিজ। কুড়েঁঘর প্রতীকে তিনি পান ১৮ হাজার ৮ শত ৩২ ভোট।
তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রওশন আলী মিয়া বিজয়ী
১৯৮৬ সালের ৭মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৪ আসনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, নীলফামারী-৪। নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮ হাজার ৬ শত ২১ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রওশন আলী মিয়া বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ১ শত ৮৯ ভোট। নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ মোজাফফর এর আব্দুল
হাফিজ। কুড়েঁঘর প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ৯ শত ৪ ভোট। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি।
চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ফারুক কাদের নির্বাচিত
১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ, বিএনপিসহ পরিচিত রাজনৈতিক দল গুলো অংশগ্রহণ করেনি। প্রতিদ্বন্দ্বীতা বিহীন এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ফারুক কাদের বিজয়ী হন।
পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ন্যাপ মোজাফফর এর আব্দুল হাফিজ বিজয়ী হন
১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬ শত ৭১ জন। ভোট প্রদান করেন ১লাখ ২ হাজার ৯ শত ৮৭ জন। নির্বাচনে ন্যাপ মোজাফফর এর আব্দুল হাফিজ বিজয়ী হন। কুড়েঁঘর প্রতীকে তিনি পান ৩৫ হাজার ১ শত ২২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির কাজী ফারুক কাদের। ভোটের ব্যবধান মাত্র ১শত ১৩ ভোট। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৫ হাজার ৯ ভোট।
সপ্তম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ডক্টর আসাদুর রহমান বিজয়ী
১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮০ হাজার ১ শত ৭৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩ শত ৬২ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ডক্টর আসাদুর রহমান বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫৭ হাজার ২ শত ৬৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোখলেছুর রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ৫৩ ভোট।
অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আমজাদ হোসেন সরকার নির্বাচিত
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২১ হাজার ৮ শত ১৯ জন । ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৩ শত ৮৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির আমজাদ হোসেন সরকার বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬০ হাজার ১ শত ৯৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত
এ মারুফ সাকলান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৭ হাজার ২ শত ৮৫ ভোট।
নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত এ মারুফ সাকলান বিজয়ী
২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯০ জন । ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭ হাজার ৩ শত ৩৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত এ মারুফ সাকলান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৭ হাজার ৩ শত ১৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আমজাদ হোসেনসরকার। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ৮৭ ভোট।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শওকত আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯০ জন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী শওকত আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আহসান আদেলুর রহমান বিজয়ী হন
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে নীলফামারি-৩ আসনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭১ হাজার ৯ শত ৮৫ জন । ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩ শত ১৯ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন।
লাঙ্গল প্রতীকে আহসান আদেলুর রহমান, ধানের শীর্ষ প্রতীকে আমজাদ হোসেন সরকার, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনে বাংলাদেশের শহীদুল ইসলাম, আম প্রতীকে পিপলস পার্টির আব্দুল হাই সরকার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
জাতীয় পার্টির আহসান আদেলুর রহমান বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯শত ৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শহীদুল ইসলাম। হাতপাখা প্রতীকে তিনি পান ২৭ হাজার ২ শত ৯৪ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নীলফামারি-৪ আসনে প্রথম, নবম, দশম সংসদে আওয়ামী লীগ, দ্বিতীয় ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, তৃতীয়, চতুর্থ ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি, পঞ্চম সংসদে ন্যাপ মোজাফ্ফর প্রার্থীরা বিজয়ী হন। এই আসনে বিএনপি শুধু ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ১১ দিন মেয়াদী সংসদে বিজয়ী হন।
এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত নয়। জাতীয় পার্টি সাংগঠনিক অবস্থান মজবুত বলা যায়। একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচনে নীলফামারী-৪ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি । জাতীয় পার্টিকে ওয়াকওভার দেয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক সমীকরণ কী হয়, তার ওপর নির্ভর করছে সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত নীলফামারী- ৪ সংসদীয় আসনে কোন দলটি প্রতিনিধিত্ব করবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ।
বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ