বিএনএ ফেনী: প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে কার না ভালো লাগে? নীরবতা, প্রকৃতির সৌন্দর্য ও পর্যটন সেবার বহুমুখিতা সারা পৃথিবীর মানুষকে টানে।আমাদের দেশেও পর্যটনের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। এ জন্য একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়ে দ্রুত কাজ করতে হবে, যাতে দেশি–বিদেশি পর্যটকেরা বেশি করে আকৃষ্ট হন। সুমুদ্রের নিকটবর্তী জেলা ফেনীতেও রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা।
ফেনী জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা। এসব স্থানের মধ্যে তালিকার প্রথম দিকে রয়েছে সোনাগাজীতে মুহুরী প্রজেক্ট বা মুহুরী সেচ প্রকল্প। জেলার এ উপজেলা জুড়ে রয়েছে বিস্তীর্ণর্ উপকূল। এছাড়া ফেনীর অন্যতম আরেকটি স্থান হচ্ছে ফেনী শহরের প্রাণকেন্দ্র অবস্থিত রাজাঝির দিঘি, মহিপালে বিজয় সিংহ দিঘি। ছাগলনাইয়ায় রয়েছে শিলুয়ার শিলপাথর, জগন্নাথকালী মন্দির, সাত মন্দির, কৈয়ারা দীঘি, শমসের গাজীর সুড়ঙ্গ, চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ, বাঁশপাড়া জমিদার বাড়ি।
স্থানীয়দের দাবি, জেলায় ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কেন্দ্রীক রিসোর্ট হলে ভালো হত, বিস্তীর্ণ র্ মাঠ ও পানির সৌন্দর্য উপভোগ করা যেত। তাদের চাওয়া ফেনীর পর্যটন গড়ে উঠুক পেশাদারিত্ব নিয়ে। যেখানে থাকবে নীরবতা, প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং সবধরনের পর্যটন সুবিধা।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা হতে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী পর্যটন এখন বৃহৎ শিল্প। বলা হয়ে থাকে, প্রতি ১২ জনে একজন পর্যটনখাত হতে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো পর্যটনকে শিল্পে রূপান্তরের চেষ্টায় রয়েছে।
ফেনীর পর্যটনে অপার সম্ভাবনা নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এজিএম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, ফেনী হচ্ছে প্রকৃতির অপরূপ দান। একদিকে নদী উপকূল, অন্যদিকে পাহাড়। মাঝে পাঁচ নদী ঘিরে সবুজের সম্মিলন। রয়েছে ঐতিহাসিক স্থাপনা, প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। এত কিছু খুব কম জেলাতেই রয়েছে যা পর্যটন বিকাশে খুবই সহায়ক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আলা উদ্দিন বলেন, উপকূল, দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মুহুরী সেচ প্রকল্প এবং ইকোনমিক জোন মিলে সোনাগাজী দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বিনোদন পার্ক, রিসোর্ট এবং পর্যটনসেবা নিশ্চিত হলে এখানে পেশার ব্যাপক গতিশীলতা তৈরি হবে। আয়ের নতুন খাত তৈরি হবে।
ফেনীর পর্যটন প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, ফেনীতে ব্যাপক আকারে পর্যটন বিকাশে সবধরনের সম্ভাবনা এবং উপযোগিতা রয়েছে। জেলার প্রত্যন্ত এলাকাতেও রয়েছে পাকা সড়ক। রেস্তোরাঁ, আবাসিক হোটেল এবং বড় শপিং মল সুবিধা রয়েছে। এখন প্রয়োজন বিনোদনের উপযোগী করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। সরকারের পক্ষ হতে দাপ্তরিক সবরকম সেবা উদ্যোক্তার জন্য রয়েছে। ফেনীর এক পাশে অবারিত শিল্পায়ন অন্যদিকে প্রকৃতির দান। এখন প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ, পর্যটন উপযোগী অবকাঠামো।
জানা গেছে, ফেনীর বিজয়সিংহ দিঘির দক্ষিণ পাড়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত হোটেল, রিসোর্ট ও অবকাশ কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করছে জেলা প্রশাসন। এর অপার সম্ভাবনাও রয়েছে কিন্তু এ সম্ভাবনার বিপরীতে সুযোগ সীমিত, এমন বৃহৎ ব্যয় সরকারিভাবে বহনের সুযোগ আপাতত নেই। এমন মন্তব্য করলেন জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল-হাসান। তিনি বলেন, শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, বেসরকারি উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসতে হবে। বেসরকারিভাবে যদি রিসোর্ট ও অবকাশ কেন্দ্র তৈরি করা হয় তাহলে জেলার পর্যটন সমৃদ্ধ হবে।
জেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে সদরের কাজিরবাগ ইকো পার্ক, হর্টিকালচার সেন্টার, কালীদহ বরদা বাবু জমিদার বাড়ি, চৌধুরী বাগান বাড়ি,দাগনভ’ঁয়া জমিদার বাড়ি, প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি, ফেনী নদী, ভাষা শহীদ সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর, শর্শদীতে শাহী মসজিদ, সেনেরখিল জমিদার বাড়ি ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে হয়রত পাগলা মিয়ার তাকিয়া, শতাব্দী প্রাচীন ফেনী সরকারি পাইলট হাই স্কুল ও ফেনী সরকারী কলেজ, পরশুরামে রাবার বাগান, বাউরখুমা আশ্রয়ণ প্রকল্প। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন।
আরও পড়ুন : আধুনিক ফেনীর ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ