বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঢাকা-১৩ আসনের হালচাল।
ঢাকা- ১৩ আসন
ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসনটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ও ৩৪, নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এই আসনটি মোহাম্মদপুর, আদাবর নামে পরিচিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৮৬ তম আসন। ২০০৮ সালের সীমানা পরিবর্তনের আগে আসনটি ঢাকা-৯ এর অংশ ছিল।
পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির জিয়াউর রহমান খান বিজয়ী হন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯০ হাজার ৯ শত ২১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৭ শত ১৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির জিয়াউর রহমান খান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮১ হাজার ৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বেনজির আহমেদ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৫ হাজার ১ শত ৯৪ ভোট।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির জিয়াউর রহমান খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির জিয়াউর রহমান খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির জিয়াউর রহমান খান বিজয়ী হন
১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭ শত ২২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬ শত ৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির জিয়াউর রহমান খান বিজয়ী হন। । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৬ হাজার ৪ শত ২৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের খান মোহাম্মদ ইকবাল। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৫ হাজার ১ শত ৬৪ ভোট।
অষ্টম সংসদ নির্বাচন:বিএনপির জিয়াউর রহমান খান বিজয়ী হন
২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৬ শত ৪৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫ শত ৪৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির জিয়াউর রহমান খান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬ হাজার ৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বেনজির আহমেদ । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৬ হাজার ৪ শত ৯৫ ভোট।
নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক বিজয়ী হন
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৩ হাজার ৬৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৮ হাজার ১ শত ৪১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৫ হাজার ২ শত ৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৭ হাজার ২ শত ৯৫ ভোট।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ সাদেক খান বিজয়ী হন
২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭ শত ৭৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৪ শত ৭০ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ১০ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ সাদেক খান, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মো: আব্দুস সালাম ,লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় শফিকুল ইসলাম, টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ এর দুলাল কান্তি লালা, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের মুরাদ হোসেন, কাস্তে প্রতীকে বাংলাদেশ সিপিবি’র আহাসান হাবিব, মোমবাতি প্রতিকে ইসলামী ফ্রন্ট এর আবদুল হাকিম, ফুলের মালা প্রতীকে তরিকত ফেডরেশন এর কামরুল আহসান, বাঘ প্রতীকে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপির জিয়াদুল করিম টিপু, কুলা প্রতীকে বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর মাহবুবুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ সাদেক খান বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩ হাজার ১ শত ৬৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মো: আব্দুস সালাম । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৪৭ হাজার ২ শত ১৫ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, সংসদে বিএনপি, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ঢাকা-১৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা-১২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.৫২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৪.০৫%, বিএনপি ৬১.০৬%, জাতীয় পাটি ০.৮৭% জামায়াত ইসলামী ১.৫০ %স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৫২%ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.৭৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩২.৩৫%, বিএনপি ৫৪.৭৪%, জাতীয় পাটি ৩.৩১%, জামায়াত ইসলামী ১.৭১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৭.৮৯%ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮১.৩৪ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪১.৬৮%, ৪ দলীয় জোট ৫৭.৭৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৫৭% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৭.১০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৭.৩১%, ৪ দলীয় জোট ৩৫.৯৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৬.৭৩% ভোট পায়।
ঢাকা-১৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাদেক খান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। আরো মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতিমণ্ডলির সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদের বিএনপির প্রার্থী আব্দুস সালাম, ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সেন্টু। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর।
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসনে ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের গাজী গোলাম মোস্তফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আবুল হাসনাত, ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির খান মোহাম্মদ ইসরাফিল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম থেকে ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে টানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির জিয়াউর রহমান খান। ২০০৮ সালের নবম ও ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেট চলে যায় মোহাম্মদ সাদেকের কাছে। তিনিই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এই আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। দলটির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত। সেই তুলনায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত নয়। এর অন্যতম কারণ কোন্দল ও বিরোধ। সেই দিক থেকে নির্ভার রয়েছে বিএনপি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৮৬তম (ঢাকা-১৩) সংসদীয় আসনটিতে বিএনপিকে ফেবারিট বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৮৫ (ঢাকা-১২)
বিএনএ/ শাম্মী, রেহেনা, ওজি, ওয়াইএইচ