বিএনএ, ডেস্ক: বাংলাদেশে সরকারিসহ দু-একটি ক্ষেত্র ছাড়া আর কোনো খাতে ঘোষিত বেতন কাঠামো নেই৷ বিশেষ করে কর্পোরেট খাতে কে কত বেতন পান, তা তাঁর সহকর্মীরাও জানেন না। তাই এখানে বেতন বৈষম্য প্রকট। নিজের বেতন কত তা প্রকাশ করাও চাকরি-শৃঙ্খলার বিরোধী। ফলে বেতন বৈষম্য থেকেই যায়। অর্থাৎ ১০ হাজার টাকা বেতনের কর্মচারী যেমন আছে, তেমনই আবার পাঁচ লাখ টাকাও বেতন পান কেউ কেউ। অভ্যন্তরীণ একটি বেতন কাঠামো আছে বটে, তবে তা কর্মচারীদের কেউ দেখতে পারেন না।
আপনার বেতন যদি ৫০ হাজার টাকা এর আশেপাশে হয়, তাহলে আপনাকে একটা মজার জিনিস দেখাই।
২০১১ সালে ডলারের দাম ছিল ৭৭ টাকার আশেপাশে। ২০২১ সালে সেটা হলো ৮৫ টাকা। তার মানে, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডে আপনি ২০১১ সালে বেতন পেতেন ৬৪৯ ডলার (ভগ্নাংশ বাদ দিচ্ছি সব জায়গাতেই)।
পরবর্তী ১০ বছরে আপনার বেতন যদি ইনক্রিমেন্টে ৫০০ টাকা করেও বাড়ে, তাহলে আপনার বেতন ২০২১-এ ৫৫ হাজার টাকা। মানে ডলারে ৬৪৭ ডলার (২০২১-এ ১ ডলার = ৮৫ টাকা ধরে)।
অর্থাৎ, বৈশ্বিক ইনফ্ল্যাশনের সাথে তালমিল রাখতেই আপনাকে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়েছে, এবং সেটা আপনার বেতনকে মোটামুটি সাম্যাবস্থায়ই রেখেছে। যদিও এটা ঠিক প্রক্রিয়া নয়, কারণ এই ১০ বছরে আপনার কাজের মান বেড়েছে, অভিজ্ঞতা বেড়েছে, বাসায় মানুষ বেড়েছে, খরচ বেড়েছে, তাই আপনার বেতনও বাড়া উচিত ছিল। কিন্তু তারপরও তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি এই সাম্যাবস্থাটাই অনেক বড় পাওয়া।
এবার দেখি গত তিন বছরের হিসেবে। ২০২১-এ ৫০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করা একজন মানুষ ২০২৪-এ সর্বোচ্চ ৫১ হাজার ৫ শত বেতন পাচ্ছেন। বা একটু বাড়িয়ে ধরলাম ৫২ হাজার টাকা।
২০২১-এ ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডে বেতন পেতেন ৫৮৮ ডলার। ২০২৪-এ এসে আপনি বেতন কতো পান জানেন? ৫২,০০০ ÷ ১২৫ = ৪১৬ ডলার!!
এই যে আপনার তিন বছরে চাকরির অভিজ্ঞতা বাড়লো, কাজের মান বৃদ্ধি পেলো, ঘরে খরচ বাড়লো, তাহলে আপনার বেতন কমলো কেন? কেউ জানলো না আপনার বেতন যে কমে গেছে, কারণ, ব্যাংক একাউন্টেতো আগের চেয়ে দেড়-দুই হাজার টাকা বেশি ঢুকছে। কিন্তু বাস্তবে আপনার বেতন কতো?
যেই বেচারা ৫০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করে তার থেকে ১০-১৫ হাজার টাকা জমানোর চিন্তা করতে পারতো ভবিষ্যতের কথা ভেবে, তারা এখন জমানোর চিন্তা বা নিজের শখ পূরণের চিন্তা তো দূরের কথা, নিজের পরিবারের নূন্যতম চাহিদা পূরণ করতেও হিমশিম খাচ্ছে! দোষ কার জানি না। কেউই জানলেও বলার কিছু নেই।
কেউ ১৫ লাখ টাকা দামের ছাগল কিনে ইনস্টাগ্রামে রিলস বানায়। আর কেউ ভাগে কুরবানি দিতে গেলেও ১৫ হাজার টাকা দিতে হিমশিম খায়। যে সৎভাবে বাঁচতে চায় সে প্রতি রাতে মরতেছে মানসিক যন্ত্রনায, আর যে অসৎভাবে চলতেছে সে রাজার হালে বেহেশতি সুখ নিচ্ছে!
জীবন চলে যাচ্ছে। কেউ হিমশিম খাচ্ছে। কেউ সাদিক এগ্রোর কোটি টাকার গরু খাচ্ছে। কেউ পুরো দেশ খেয়ে রিসোর্ট-হোটেল বানায়ে টাকার পাহাড় বানাচ্ছে। আর কেউ মরুভূমিতে চাঁদের আলোর জোছনায় খেয়ালি পোলাও বানাচ্ছে। খাদ্যশৃংখলে কখনো কখনো বড় মানুষ ছোট মানুষকে গিলে খাচ্ছে।
বিএনএনিউজ/ রেহানা/ বিএম