বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র নদী হালদায় মা-মাছের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে মা-মাছের হালদায় ডিম ছাড়ার বেশ সম্ভাবনা রয়েছে এবার। নদীর সংযুক্ত খালে অবস্থানকারী মা-মাছগুলো এখন হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার জন্য অবস্থান করছে। হালদা পাড়ের জেলেরা বলছেন, পরিবেশ অনুকূলে থাকলে রোববার অমাবস্যার প্রথম জো রয়েছে। তারা আশা করছেন, প্রথম জোতে নদীতে মা-মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্য হালদায় বেড়েছে মা-মাছের চঞ্চলতা। বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল সৃষ্টি হলে নদীতে মা-মাছ প্রথমে নমুনা ডিম, পরে পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়বে বলে মনে করছেন জেলেরা।
সরেজমিন দেখা যায়, সংগ্রহকারীরা ইতিমধ্যে ডিম আহরণের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। নদীর দুই পাড়ে জেলেদের ব্যাপক কর্মব্যস্ততা দেখা গেছে। এ সময় অনেকে পুরোনো নৌকা মেরামত করছেন। আবার কেউ কেউ নতুন নৌকা বানাচ্ছেন। অন্যদিকে ডিম থেকে রেণু পোনা ফোটানোর জন্য সরকারি হ্যাচারির পাশাপাশি ব্যক্তিগত মাটির কুয়া প্রস্তুত করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।
হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারী মো. ইলিয়াস বলেন, আমাদের নৌকা ও কুয়া সব প্রস্তুত। এখন অপেক্ষায় আছি ডিম ছাড়ার। তবে তিনি বলেন, হয়তো অমাবস্যার মধ্যে ডিম ছাড়তে পারে না হলে পূর্ণিমায় পুরোপুরি ডিম দেবে মা-মাছ। মো. নুরুল আলম নামের আরেক ডিম সংগ্রহকারী বলেন, ৫০ বছর ধরে আমরা ডিম সংগ্রহ করছি। নৌকাসহ সবকিছু প্রস্তুত রেখেছি। এখন আশায় আছি। নদীতে কবে ডিম ছাড়বে মা-মাছ। জানা গেছে, প্রতি বছর চৈত্র থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্যে হালদায় মা-মাছ ডিম ছাড়ে। প্রবল বর্ষণ ও বজ্রপাত হলে নদীতে পানির গভীরতা বাড়ে। ফলে পাহাড়ি ঢল তীব্র হয়ে নদীর পানি ঘোলাটে হলে ডিম দেয় মা-মাছ।
এদিকে হালদায় মাছের আগমন অবাধ ও নিরাপদ করতে রাউজান ও হাটহাজারী এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মৎস্য বিভাগ ও হালদার নৌপুলিশ সার্বক্ষণিক নদী পাহারায় অভিযান জোরদার করেছে। নদীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মা-মাছের নিরাপত্তায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, হালদায় ডিম সংগ্রকারীরা প্রস্তুত রয়েছেন। হ্যাচারি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে আগামী পূর্ণিমার প্রথম জোতে মা-মাছ ডিম ছাড়তে পারে।
হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হালদা নদী দক্ষিণ এশিয়ার একটি অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। এই নদী থেকে প্রতি বছর প্রাকৃতিক প্রজনন মৌসুমে কার্পজাতীয় রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালি বাউস, মা মাছের ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে হালদায় শুরু হয়েছে মেজর কার্পজাতীয় মা-মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন মৌসুম। স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তারা নৌকা তৈরি, নৌকা মেরামত এবং মাছের কুয়া তৈরি ইত্যাদি আনুষঙ্গিক কাজে ব্যস্ত। পাশাপাশি সরকারি হ্যাচারিগুলোতে চলছে ডিম ফোটানোর পূর্বপ্রস্তুতি। তিনি আশা করছেন, এ বছর প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলে হালদা থেকে আহরিত ডিমের পরিমাণ বাড়বে।
বিএনএনিউজ/নাবিদ