22 C
আবহাওয়া
৩:০৬ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৪৫ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৪৫ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হালচাল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৪৫ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জামায়াতে ইসলামীর লতিফুর রহমান বিজয়ী হন
১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৩ (সদর) আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩২ হাজার ১ শত ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ১ শত ১৪ জন। নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর লতিফুর রহমান বিজয়ী হন। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ৩ শত ৩৩ ভোট।। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সুলতানুল ইসলাম মনি। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৩ শত ৮১ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির হারুনুর রশীদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়
১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। বিএনপির হারুনুর রশীদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে।এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির হারুনুর রশীদ বিজয়ী হন 

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৬ হাজার ৩শত ৬৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির হারুনুর রশীদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৭ হাজার ৯শত ২৯ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর লতিফুর রহমান। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ৪৮ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির হারুনুর রশীদ বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩ শত ৮৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৭ হাজার ২শত ৩৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির হারুনুর রশীদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৫ হাজার ৪ শত ৮৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারি লতিফুর রহমান। ঘড়ী প্রতীকে তিনি পান ৬০ হাজার ৪ শত ৬০ ভোট।
২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯৭ হাজার ৭ শত ৬১ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৩ হাজার ২ শত ১৭ জন। নির্বাচনে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী আব্দুল ওদুদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১২ হাজার ৭ শত ৫৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির হারুনুর রশীদ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৬ হাজার ১ শত ৭৮ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন:  আওয়ামী লীগের আব্দুল ওদুদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল ওদুদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

 একাদশ সংসদ নির্বাচন: বিএনপির হারুনুর রশীদ নির্বাচিত হন
২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫শত ৮০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫ শত ৮৮ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আব্দুল ওদুদ, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির হারুনুর রশীদ, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুল কাদের, টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ এর কামরুজ্জামান খান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির বাবলু হোসেন এবং আপেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে বিএনপির হারুনুর রশীদ নির্বাচিত হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬ শত ৬১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল ওদুদ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৫ হাজার ৯ শত ৩৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

২০২২ সালের ১০ই ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদসহ বিএনপির ৭ সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২০২৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো: আবদুল ওদুদ বিজয়ী হন। ‘নৌকা’ প্রতীকে তিনি পান ৫৯ হাজার ৬ শত ৩৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: সামিউল হক ‘আপেল’ প্রতীকে পান ৫৫ হাজার ৯ শত ৮০ ভোট।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সদ্য উপনির্বাচনে বিজয়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওদুদ। এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. রুহুল আমিন ও ডা. গোলাম রাব্বানী এবং জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এরফান আলী।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. হারুনুর রশিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া, সদস্য সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি সাবেক যুবদল নেতা মো. আবদুল ওয়াহেদ এবং যুবদল নেতা ওবায়েদ পাঠান।
নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াতে ইসলামী দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লায় নির্বাচন করতে পাবেন না। সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াতে নেতা নুরুল ইসলাম বুলবুল ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. লতিফুর রহমান মনোনয়ন চাইবেন।
দলীয় মনোনয়ন চাইবেন, জাসদ থেকে মনিরুজ্জামান মনির, বিএনএফ থেকে কামরুজ্জামান খান, জাকের পার্টি থেকে বাবুল হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে আবদুল কাদের ।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে পঞ্চম সংসদে জামায়াতে ইসলামী, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও একাদশে সংসদে বিএনপি। নবম, দশম ও একাদশ সংসদের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.৯২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫.৫৩%, বিএনপি ৩৩.৮১%, জামায়াতে ইসলামী ২৪.৯০%, জাতীয় পার্টি ০.৬১% , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৫.১৫% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৫৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.৭৯%, বিএনপি ৪৩.০৫%, জামায়াতে ইসলামী ১৮.৪৯%, জাতীয় পাটি ৫.৮০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৮৭% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.৪৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.৬৪%, ৪ দলীয় জোট ৩৯.৫২%, জাতীয় পার্টি ৪.৫৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২০.৩০% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯৪.৪৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৫.০১%, ৪ দলীয় জোট ৪৪.৪১%, জামায়াতে ইসলামী ০.২০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ০.৩৮% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ সদর আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামী এবং ১৯৯৬ সাল থেকে বিএনপি এই আসনে শাসন করে আসছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের এই শিবিরে আঘাত হানেন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা আবদুল ওদুদ। তিনি ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের অবস্থান ভোটের হিসাবে আগের চেয়ে অনেক সুসংহত হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে অনেক। রয়েছে নতুন-পুরনো দ্বন্দ্ব। এতে লাভবান হবে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৪৫ নম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে ভোটের লড়াই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্য সীমাবদ্ধ থাকবে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ