27 C
আবহাওয়া
৫:৩৯ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ইসলামে যাকাত ও ফিতরার ফজিলত

ইসলামে যাকাত ও ফিতরার ফজিলত

ইসলামে যাকাত ও ফিতরার ফজিলত

বিএনএ, ডেস্ক: রমজান ফার্সি শব্দ। অর্থ হচ্ছে, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া। অর্থাৎ যে ব্যক্তি রমজানের হক আদায় করে রোজা রাখে আল্লাহতায়ালা তার গুনাহকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেন। ঈদুল ফিতরের আগেই সাদকায়ে ফিতর দেয়া জরুরি। রমজানের রোজা পালন শেষে গরিবের মুখে হাসি ফোটানোর অন্যতম মাধ্যম সাদকাতুল ফিতর। এ অর্থ দিয়েই তো গরিব-অসহায়রা পরিবারের জন্য ব্যয় করবে। ধনীর সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করবে। এমন অনেকেই আছেন, যারা সাদকায়ে ফিতর সম্পর্কে ধারণা রাখেন না।

সাদাকায়ে ফিতর দ্বারা কোরআনুল কারিমে পরিশুদ্ধ হওয়ার কথা বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে পরিশুদ্ধ হয় ৷’ (সুরা আলা: আয়াত ১৪)। মুফাসসিরিনের কেরামের মতে, এ পরিশুদ্ধ দ্বারা সাদকায়ে ফিতরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা সাদকায়ে ফিতর আদায় করবেন তারাই লাভ করবেন সফলতা।

হাদিসের আলোকে সাদকায়ে ফিতরের গুরুত্ব

সাদকায়ে ফিতর আদায় করা মুমিনের জন্য আল্লাহ কর্তৃক অত্যাবশ্যকীয় বিধান। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী- ‘তুহরাতুল্লিস সায়িম’ অর্থাৎ একমাস সিয়াম সাধনায় মুমিনের অনাকাঙ্খিত ত্রুটি-বিচ্যুতির কাফফারা হলো সাদকায়ে ফিতর। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী- ‘তুমাতুল্লিলমাসাকিন’ অর্থাৎ সমাজের অসহায়, দুঃস্থ-দরিদ্র, রিক্তহস্ত জনগোষ্ঠি যাতে বছরান্তে একটি দিন অন্তত খেয়ে-পরে আনন্দ উদযাপন করতে পারে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পরে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক পানাহারের অনুমতি মিলায় তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সাদকায়ে ফিতর আদায় করা।

ফিতরার পরিমাণ

এ বছর ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন।

আটা, যব, খেজুর, কিশমিশ ও পনিরের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে এ ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে। মুসলমানরা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী উপর্যুক্ত পণ্যগুলোর যেকোনো একটি পণ্য বা এর বাজারমূল্য দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন।

গম বা আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১১৫ (এক শ পনের) টাকা প্রদান করতে হবে, যব দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ৪০০ টাকা, কিশমিশ দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২ হাজার ১৪৫ টাকা, খেজুর দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২ হাজার ৪৭৫ টাকা ও পনির দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২ হাজার ৯৭০ টাকা ফিতরা প্রদান করতে হবে। উপর্যুক্ত পণ্যসমূহের স্থানীয় খুচরা বাজারমূল্যের তারতম্য রয়েছে। তদনুযায়ী স্থানীয় মূল্যে পরিশোধ করলেও ফিতরা আদায় হবে।

রমজানে যাকাত দেওয়া বেশি সওয়াব

যাকাত (আরবি) “যা পরিশুদ্ধ করে”, আরও আরবি “সম্পদের যাকাত” হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়। সাধারণত নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পত্তি হিজরি ১ বছর ধরে থাকলে মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ বিতরণ করতে হয়। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাত শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে “যাকাত” শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার। নামাজের পরে সবচেয়ে বেশি বার এটি উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে কতিপয় শর্তসাপেক্ষে তার উপর যাকাত ফরয হয়ে থাকে। রমজানে যাকাত দেওয়া বেশি সওয়াব।

যেসব জিনিসের যাকাত দেওয়া ফরজ

ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ যাকাত। ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হলো- নামাজ ও যাকাত। কোরআন মজিদের বহু স্থানে নামাজ ও যাকাতের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

যাকাত কাদের ওপর ওয়াজিব, কী কী জিনিসে যাকাত ওয়াজিব হয় এবং যাকাত কাদের দেওয়া যায়- ইত্যাদি বিষয়সহ আরও অন্যান্য যাকাতের বিষয় নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক লেখা রয়েছে। এই লেখায় আলোচনা করা হবে- কোন কোন জিনিসে যাকাত ফরজ হয় বা যাকাত দিতে হয়।

১। সব ধরনের সম্পদ ও সামগ্রীর ওপর যাকাত ফরজ হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার পণ্যে যাকাত ফরজ হয়।

২। সোনা-রুপার অলংকার সর্বদা বা কালেভদ্রে ব্যবহৃত হোক কিংবা একেবারেই ব্যবহার না করা হোক- সর্বাবস্থাতেই তার যাকাত দিতে হবে। (সুনানে আবু দাউদ ১/২৫৫; সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২৫৮; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৭০৫৪-৭০৬১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৯৯৭৪)

৩। অলংকার ছাড়া সোনা-রুপার অন্যান্য সামগ্রীর ওপরও যাকাত ফরজ হয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭০৬১; ৭০৬৬; ৭১০২)

৪। জামা-কাপড় কিংবা অন্য কোনো সামগ্রীতে সোনা-রুপার কারুকাজ করা থাকলে তা-ও যাকাতের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং যে পরিমাণ সোনা-রুপা কারুকাজে লেগেছে- অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে তারও যাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭০৬৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ১০৬৪৮-১০৬৪৯)

সোনা-রুপা ছাড়া অন্য কোনো ধাতুর অলংকার ইত্যাদির ওপর যাকাত ফরজ নয়। তদ্রূপ হীরা ও মণি-মুক্তা ইত্যাদি মূল্যবান পাথর ব্যবসাপণ্য না হলে সেগুলোতেও যাকাত ফরজ নয়। (কিতাবুল আছার, মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৭০৬১-৭০৬৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৬/৪৪৭-৪৪৮)

মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্বৃত্ত টাকা-পয়সা নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর স্থায়ী হলে বছর শেষে তার যাকাত আদায় করা ফরজ হয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৭০৯১-৭০৯২)

তদ্রূপ ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, সার্টিফিকেট ইত্যাদিও নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপরও যাকাত ফরজ হয়।

৫। টাকা-পয়সা ব্যবসায় না খাটিয়ে এমনি রেখে দিলেও তাতে যাকাত ফরজ হয়। (আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৬৭; রদ্দুল মুহতার : ২/২৬২-৩০০)

৬। হজের উদ্দেশ্যে কিংবা ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ছেলে-মেয়ের বিয়ে-শাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হচ্ছে- তা-ও এর ব্যতিক্রম নয়। সঞ্চিত অর্থ পৃথকভাবে কিংবা অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে এবং নিসাবের ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে- যাকাত ফরজ হবে। বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তা যদি খরচ হয়ে যায়, তাহলে যাকাত ফরজ হবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭০৩২; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ১০৩২৫)

৭। দোকান-পাটে যা কিছু বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা থাকে তা বাণিজ্য-দ্রব্য। এর মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত আদায় করা ফরজ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১/২১৮; সুনানে কুবরা, বায়হাকি : ৪/১৫৭; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, পৃষ্ঠা : ১০৮; মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭১০৩,৭১০৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ১০৫৫৭, ১০৫৬০, ১০৫৬৩)

৮। ব্যবসার নিয়তে কোনো কিছু ক্রয় করলে তা স্থাবর সম্পত্তি হোক যেমন জমি-জমা, ফ্ল্যাট কিংবা অস্থাবর- যেমন মুদী সামগ্রী, কাপড়-চোপড়, অলংকার, নির্মাণ সামগ্রী, গাড়ি, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, হার্ডওয়ার সামগ্রী, বইপুস্তক ইত্যাদি- তা বাণিজ্য-দ্রব্য বলে গণ্য হবে এবং মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত দেওয়া ফরজ হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭১০৩-৭১০৪)

৯। নিসাবের অতিরিক্ত সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা ও বাণিজ্যদ্রব্যের যাকাত আনুপাতিক হারে দিতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭০৩২-৭০৭৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৬/৩৯০; আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৯৯)

১০। কারো কাছে সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য পৃথকভাবে বা সম্মিলিতভাবে নিসাব পরিমাণ ছিল, বছরের মাঝে এ জাতীয় আরও কিছু সম্পদ কোনো সূত্রে পাওয়া গেল- তাহলে এক্ষেত্রে নতুন প্রাপ্ত সম্পদ পুরাতন সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে এবং পুরাতন সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের যাকাত দিতে হবে। বছরের মাঝে যা যোগ হয়েছে তার জন্য পৃথক বছর পূর্ণ হওয়া লাগবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৬৮৭২, ৭০৪০-৭০৪৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ১০৩২৫,১০৩২৭)

১১। বছরের শুরু ও শেষে নিসাব পূর্ণ থাকলে যাকাত আদায় করতে হবে। মাঝে নিসাব কমে যাওয়া ধর্তব্য নয়। অবশ্য বছরের মাঝে সম্পূর্ণ সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তবে ওই সময় থেকে নতুন করে বছরের হিসাব আরম্ভ হবে এবং এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত আদায় করতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭০৪২,৭০৪৪; আদ্দুররুল মুখতার : ২/৩০২)

যাকাত কত প্রকার ও কি কি

যাকাত আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, বিশুদ্ধতা, বৃদ্ধির পাওয়া। আল্লাহ তায়ালা যাকাতের গুরুত্ব বোঝাতে পবিত্র কোরআন মজিদে অসংখ্য জায়গায় প্রায় ৩২ জায়গায় যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন। আমরা এখন জানব যাকাত কত ধরনের বা কত প্রকার ও কি কি?

যাকাত চার ধরনের বা প্রকারের হয়ে থাকে।
১। ফসলের যাকাত- ফসলের যাকাত প্রদানের জন্য শরিয়তের নির্দিষ্ট নিসাব পরিমাণ ফসল হলে যাকাত প্রদান করতে হবে।
২। গবাদি পশুর যাকাত- গবাদি পশুর যাকাত প্রদানের জন্য শরিয়তের নির্দিষ্ট নিসাব পরিমাণ গবাদি পশু থাকলে যাকাত দিতে হবে।
৩। সোনা বা রুপার যাকাত- অর্থাৎ শরিয়তে নির্দিষ্ট নিসাব পরিমাণ সোনা রুপা থাকলে যাকাত প্রদান করতে হবে।
৪। রোজার যাকাত- মূলত এই যাকাতকে সদকাতুল ফিতর বা যাকাতুল ফিতর বলা হয়। এই চার প্রকার যাকাতকে মূলত যাকাতের ধরণ বা প্রকার হিসেবে গন্য করা হয়।

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত

ইসলামের মুল ৫টি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি। ইসলামে নামাজ, রোজা, হজ্জ পালনের জন্য কতগুলো শর্ত মেনে চলতে হয়। যাকাত ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম নয়। যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কতগুলো শর্ত প্রযোজ্য রয়েছে। নামাজ আদায়ের সাথে বান্দার মনস্তাত্ত্বিক বিষয় জড়িত আর যাকাত এর ক্ষেত্রে বান্দার আর্থিক সংশ্লিষ্টতা জড়িত। গরীব মানুষের জন্য যাকাত ফরজ নয়। যাকাত ফরজ ধনবান বিত্তশালী মুসলমানদের জন্য। নিচে যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ১০টি শর্ত বর্ণিত হলো-

১। মুসলিম হওয়া– যাকাত ফরজ হওয়ার ১ম শর্ত হলো মুসলমান হওয়া। ধনবান বিত্তশালী মুসলমানদের উপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে। যাকাত ফরজ হওয়ার প্রধান শর্তই হলো মুসলমান হওয়া। কোন অমুসলিম ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ নয়।

২। নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া-যাকাত ফরজ হওয়ার ২য় শর্ত হলো নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা এর সমপরিমাণ টাকা বা ব্যবসার মালের মালিক হলে তাকে ইসলামের বিধান অনুযায়ী যাকাত প্রদান করতে হবে। নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হলে তার উপর যাকাত ফরজ নয়।

৩। বালেগ হওয়া অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া– যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য আরেকটি শর্ত হলো পূর্ণবয়স্ক হওয়া। যাকাত প্রদান করতে হলে তাকে প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞান থাকতে হবে। নাবালক এর জন্য যাকাত ফরজ নয়।

৪। বিবেক ও বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া– যাকাত প্রদান করতে হলে তাকে বিবেক ও বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ হতে হবে। পাগলের উপর যাকাত ফরজ নয়। পাগল যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক ও হয় তবুও তার উপর যাকাত ফরজ নয়। তবে কিছু কিছু মাযহাব মতে পাগল যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে। সেই ক্ষেত্রে তার অভিভাবকগণ তা আদায় করবে।

৫। স্বাধীন হওয়া– যাকাত ফরজ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো স্বাধীন হওয়া। কোন দাস-দাসীর উপর যাকাত ফরজ নয়।

৬। সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা থাকা– যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত হলো যে সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হবে ওই সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা থাকতে হবে অর্থাৎ ভোগ দখলের পূর্ণ অধিকার থাকতে হবে। অন্যথায় যাকাত ফরজ হবে না।

৭। সম্পদ বর্ধনযোগ্য হওয়া– যাকাত দেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হলো দরিদ্রকে সহযোগিতা করা এবং তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা। কিন্তু আল্লাহ চান না যে কোন ব্যক্তি যাকাত দিতে গিয়ে দারিদ্র হয়ে যাক। কোন ব্যক্তির সম্পদ যদি বর্ধনশীল না হয় তাহলে বছরের পর বছর যাকাত প্রদানের ফলে সেই ব্যক্তির সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই কোন ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হওয়ার ক্ষেত্রে তার সম্পদ বর্ধনশীল হওয়া অপরিহার্য।

৮। সম্পদ মৌলিক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত হওয়া– যাকাতের অন্যতম শর্ত হলো যাকাতের সম্পদ মৌলিক প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত হওয়া। নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদের উপর যাকাত ফরজ নয়। তাই যে ব্যক্তির মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ রয়েছে সেই ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ।

৯। সম্পদ ঋণ মুক্ত হওয়া– যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে সম্পদ ঋণ মুক্ত হতে হবে। ঋণ পরিশোধ করার পর যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ মজুদ থাকে তবে সেই সম্পদের যাকাত প্রদান করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন যদি কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্থ থাকে তাহলে সে প্রথমে ঋণ পরিশোধ করবে তারপর যাকাত প্রদান করবে।

১০। সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকা। কোন ব্যক্তির সম্পদ যদি হিজরি ১ বছরের কম সময় তার মালিকানায় থাকে তবে সেই ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরজ নয়। এ শর্তটি ব্যক্তির নগদ অর্থ, সোনা-রুপা, ব্যবসায়িক মালামালসহ যাবতীয় সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

হাদীস শরীফে এসেছে- ‘যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার যাকাত দেয়নি কিয়ামতের দিন তা বিষধর স্বর্পরূপে উপস্থিত হবে এবং তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার উভয় অধরপ্রান্তে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ঐ ধন, আমিই তোমরা পুঞ্জিভূত সম্পদ।’ -সহীহ বুখারী

বিএনএনিউজ/ রেহানা/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ