বিএনএ, ডেস্ক: মসজিদে প্রবেশের সময় এর আদব রক্ষা করা এবং সুন্নতগুলোর প্রতি যত্নশীল হওয়া আবশ্যক। কারণ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নত অনুসরণকারীদের জান্নাতের অধিবাসী বলে সুসংবাদ দিয়েছেন। একজন মুমিনের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মসজিদের গভীর সম্পর্ক। রবের সান্নিধ্য পেতে এবং তার সামনে হাজিরা দিতে প্রতিদিন পাঁচবার মসজিদে যেতে হয়। বেশি বেশি মসজিদে যাতায়াত করা ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে হাদিসে।
সুন্নত পালনের গুরুত্ব
এ সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বানী-ইসরাইলী বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মাত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে, সকলেই জাহান্নামে যাবে, কিন্তু একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে। সাহাবাগণ রা. জিজ্ঞাসা করলেন, এই দল কারা? রসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা আমার ও আমার সাহাবাদের সুন্নতের উপর কায়েম থাকবে। (তিরমিজি : হাদিস, ২৫৭৮।)
মসজিদে প্রবেশের আগে যেসব সুন্নত অনুসরণ করতে হবে
১। চোখ নিচু করে, আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভয় রেখে প্রবেশ করা।
২। মসজিদে প্রবেশের আগে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে।
৩। মসজিদে প্রবেশের আগে জুতা খুলে নিতে হবে। জুতা ভেতরে নিতে হলে আগেই ঝেড়ে পরিস্কার করে নিতে হবে।
৪। মসজিদে প্রবেশের সময় প্রথমে বাম পায়ের জুতা খুলতে হবে এরপর ডান পায়ের জুতা।
৫। মসজিদে প্রবেশের সময় আগে ডান পা দিতে হবে।
৬। দরুদ শরীফ, সালাম ও দোয়া পড়তে হবে। দরুদ শরীফ, সালাম ও দোয়া – এই তিনটিকে একসঙ্গে এভাবে পড়া যায়-
বাংলা উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রহমাতিক।‘
অর্থ: ‘আল্লাহ তাআলার নামে শুরু করছি, দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসুলের প্রতি। হে আল্লাহ আপনার রহমতের দরজাগুলো আমার জন্য খুলে দিন। (ইবনে মাজাহ: ৬৩৩)
৭। মসজিদে প্রবেশের সময় এই দোয়াটিও চাইলে পড়া যায় –
বাংলা উচ্চারণ: রব্বি আনঝিলনি মুনঝালামমুবারাকান ওয়া আনতা খয়রুল মুনঝিলীন।
অর্থ: হে আমার রব! আমাকে এমনভাবে অবতরণ করিয়ে নিন যা হবে কল্যাণকর; আর আপনিই শ্রেষ্ঠ অবতরণকারী। ( সুরা মুমিনুন, আয়াত, ২৯)
মসজিদে প্রবেশের পর যেসব কাজ সুন্নত
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে যায়, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারির ব্যবস্থা করেন। সকালে অথবা সন্ধ্যায় যতবার সে মসজিদে যায়, ততবারই আল্লাহ তায়ালা তার জন্য মেহমানদারির ব্যবস্থা করেন। (সহিহ বুখারি, ৬৩১, সহিহ মুসলিম, ১৫৫৬, সহিহ ইবনে খুজাইমা, ১৪৯৬, সহিহ ইবনে হিব্বান, ২০৩৭)
মসজিদে প্রবেশের পর সুন্নতগুলোর প্রতি যত্নশীল হওয়া আবশ্যক। যেসব সুন্নতের প্রতি খেয়াল রাখবেন
১। মসজিদে প্রবেশের সময় নফল ইতেকাফের নিয়ত করা।
২। মসজিদে বসে আছেন বা নামাজ পড়ছেন না এমন ব্যক্তিদের এমনভাবে সালাম দিতে হবে যেন নামাজরতদের নামাজে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে।
৩। হারাম এবং মাকরুহ সময় না হলে মসজিদে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা দুখুলুল মসজিদ নামাজ পড়া।
৪। কাউকে কোনও গুনাহের কাজ করতে দেখলে বাধা দিতে হবে।
৫। মসজিদে কোরআন তেলাওয়াত, হাদিস, ফেকাহ, ইত্যাদি দ্বীনী কাজ করা উত্তম।
৬। আল্লাহর জিকির, তাসবিহ ছাড়া জোরে আওয়াজ করে কথা না বলা।
৭। কোনও ধরনের হইচই না করা এবং দুনিয়াবী কথা না বলা।
৮। মানুষের ঘাড় বা কাঁধের উপর দিয়ে সামনের কাতারে না যাওয়া।
৯। কাতারের মাঝে ঠাসাঠাসি করে না দাঁড়ানো।
১০। কোনও নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া-আসা না করা।
১১। মসজিদে ময়লা-আবর্জনা এবং কফ, থুথু, নাকের সর্দি না ফেলা।
১২। মসজিদে আঙ্গুল না ফোটানো।
১৩। মসজিদে বেচা-কেনা করা যাবে না।
মহান আল্লাহ আমাদের উক্ত আমলগুলো করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
বিএনএনিউজ/বিএম