।।ইয়াসীন হীরা।।
ইয়াবা ব্যবসা যেন রূপকথার আলাদীনের যাদুর প্রদীপের মতোই। রাতারাতি কোটিপতি! এমন একজন ইয়াবা কোটিপতি জাহিদুল ইসলাম ওরফে আলো। ২০০০ সালে আলো নগরীর নিউমার্কেট ও রিয়াজুদ্দিন বাজার এলাকায় ঘড়ি চুরি ও বিক্রি করত। মোবাইলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আগ্রহ কমে ঘড়ি কেনার প্রতি। পরে সে মোবাইল চুরির সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। চোরাই মোবাইল কিনে রিয়াজ উদ্দিন বাজারের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৭ সালের দিকে রিয়াজ উদ্দিনবাজার মরিয়ম মার্কেটে দুটি দোকান ক্রয় করে আলো। ২০১০ সালের দিকে আলো ভগ্নিপতি মো. সগিরের হাত ধরে ইয়াবা ব্যবসায় নামে । মাত্র ক’বছরে ইয়াবা ব্যবসার বদৌলতে চট্টগ্রামের আলো শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ঢাকায় একটি বাড়ি থেকে ইয়াবা উদ্ধারের সূত্র ধরে র্যাবের একটি দল চট্টগ্রামের হালিশহরে বসবাসকারি আলোকে শনাক্ত করে। সারা দেশে ইয়াবা ব্যবসার সবচেয়ে বড় সিন্ডিকেটটির নেতৃত্বে ছিলেন জাহিদুল ইসলাম আলো ।
১২ ব্যাংক একাউন্টে ১১১ কোটি টাকা!
জাহিদুল ইসলাম ওরফে আলোর চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজার শাহ আমানত টাওয়ারে খাজা টেলিকম নামে আলোর একটি মোবাইলের যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকান ছিল। ১৫৬ বর্গফুটের ওই দোকানের নামেই বিভিন্ন ব্যাংকে তার ১২টি হিসাব খোলা হয়। ওই হিসাবগুলোতেই লেনদেন হতো ইয়াবা বিক্রির শত শত কোটি টাকা। টাকা শুধুই ঢুকেছে কখনও উত্তোলন করা হয়নি।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিশেষ করে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, ঢাকা, বগুড়া, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে তার এসব ব্যাংক হিসাবে ঢুকেছে ১১১ কোটি টাকা। তবে সোনালী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের হালিশহর ও রিয়াজুদ্দিন বাজার শাখায় হিসাব খোলা হয়।
আলো বেশি দিন জ্বলেনি !
জাহিদুল ইসলাম ওরফে আলো মাত্র ক’বছরে ইয়াবা ব্যবসার বদৌলতে চট্টগ্রামের আলো শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ঢাকায় একটি বাড়ি থেকে ইয়াবা উদ্ধারের সূত্র ধরে র্যাবের একটি দল চট্টগ্রামের হালিশহরে বসবাসকারি আলোকে শনাক্ত করে। সারা দেশে ইয়াবা ব্যবসার সবচেয়ে বড় সিন্ডিকেটটির নেতৃত্বে ছিলেন আলো ।
জাহিদুল ইসলাম ওরফে আলো ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর র্যাবের জালে ধরা পড়ে। এর আগে জাহিদুল ইসলাম আলো সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্যই ছিল না চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে।
মিয়ানমার ছাড়াও চীন থেকে গাড়ির ইঞ্জিন, টায়ার-টিউব ও বিভিন্ন মোটর পার্টসের ভেতরে করে আনা হতো লাখ লাখ পিস ইয়াবা। এরপর এসব ইয়াবা চালান হতো সারা দেশে।
অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা
হালিশহরে তার বাসা থেকে কোটিপতি আলো আলোকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৭। উদ্ধার করে ২ লাখ ১৫ হাজার ৩১৪টি ইয়াবা, একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন, বেশকিছু পিস্তলের গুলি, ইয়াবা বিক্রির ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫ টাকা, একটি মোটরবাইক, একটি টয়োটা গাড়ি, ইয়াবা পাচারে ব্যবহার করার জন্য আনা গাড়ির ৩৭টি ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ, তিনটি মোবাইল ফোন, আটটি ল্যাপটপ, ব্যাংকের তিনটি চেক বই এবং ক্রেডিট কার্ড।আলোর বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা হয়।
বন্দুকযুদ্ধে নিহত আলো
পরবর্তীতে জামিনে ছাড়া পান আলো। ছাড়া পেয়ে ফের ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে। এ অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আলো। (চলবে)
আগের পর্ব :
আমিন হুদা ও নিকিতা উপাখ্যান পর্ব- ১২
পবিত্র কোরআন, হেলিকপ্টার ও নারীর যৌনাঙ্গে ইয়াবা পাচার!-পর্ব ১১
টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ি কারা? পর্ব-১০
আত্মসমর্পণকারিরা ফের ইয়াবা ব্যবসায়! পর্ব-৯
বদির ৫ ভাইসহ ২৫ স্বজন ইয়াবা ব্যবসায়ি! পর্ব-৮
রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও সাংবাদিকের সঙ্গে ইয়াবা ডন সাইফুলের সখ্য! পর্ব- ৬
সিআইপি সাইফুল ও বাংলাদেশে ইয়াবার আগমন! পর্ব-৫
টেকনাফের ৮০ শতাংশ মানুষ ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত! পর্ব-৪
টেকনাফের অর্ধশত রুটে আসে ইয়াবা!- পর্ব- ৩
মডেল-নায়িকা-শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা কেন সেবন করে ইয়াবা? পর্ব-২
‘ইয়াবা’ কেন জনপ্রিয় মাদক? পর্ব-১
বিএনএনিউজ২৪