বিএনএ ডেস্ক: পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা বাধা দিয়েছিলো, যারা ষড়যন্ত্র করেছিলো তাদের উপযুক্ত জবাব পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়িতে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যারা পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করে দিয়েছিলো। যারা অর্থ বন্ধের পেছনে ইন্ধন দিয়েছিলো। পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা নিরুৎসাহিত করেছিলো তারা আজ জবাব পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বাঙালি জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। কেউ পারেনি দাবায়ে রাখতে। সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আবার পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করা হয়। এরপরও খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু করতে পারবে না। করলেও তা জোড়াতালি দিয়ে করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন মনে হচ্ছে খালেদা জিয়াকে বলি, আসুন, এসে দেখে যান পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে কিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু করতে গিয়ে যারা জমি দিয়েছিলেন, তাদের ঘর করে দেয়া হয়েছে। তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে যারা নিজের বাপ দাদার ভিটে মাটি পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সাহস দিয়েছে, ভালবাসা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলো বলে আজ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা সম্ভব হয়েছে। এজন্য দেশের জনগণকে স্যালুট জানান রাষ্ট্রনায়ক।
জনতার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখবেন, এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছেন; জীবন দিয়েছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। বাবা-মা ভাই সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের পেয়েছি। আপনাদের মধ্যেই আমি পেয়েছি বাবা ও মায়ের স্নেহ। আপনাদের জীবন পরিবর্তনে আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। আপনাদের জন্য প্রয়োজনে আমি আমার জীবনও দিয়ে দেবো।
এই পদ্মা সেতু করতে গিয়ে অনেকে অপমানিত হতে হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের একটাই লক্ষ্য ছিল, পদ্মা সেতু নির্মাণ করবই। সেই সাহস দিয়েছেন আপনারা, শক্তি দিয়েছেন আপনারা। আমি আপনাদের পাশে আছি। এখন তো পদ্মা সেতু হয়ে গেল। আমরা আসব, আপনারাও যাবেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের কাছে তদবির করে, আমেরিকার কাছে তদবির করে পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিলো, দুর্নীতি করা হয়েছে। কে দুর্নীতি করেছে? যে সেতুর সাথে মানুষের জীবন জাড়িত, ভাগ্য জড়িত সেই সেতু নিয়ে কে দুর্নীতি করেছে? তখন আমি ঘোষণা দিলাম, টাকা বন্ধ করে দিলেও বাংলাদেশ বসে থাকবে না। সেতু আমরা নিজের টাকায় করবো। তখন অনেকেই আমাকে বলেছিলেন আমি পারবো না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক দেশেই খাদ্যের অভাব দেখা গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যাতে খাদ্যের কোনো অভাব দেখা না দেয় সেজন্য এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। যার যা আছে সেখানেই বৃক্ষরোপন করুন, উৎপাদন বাড়ান। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে যেমন খাদ্য, বিদ্যুৎ ও গৃহহীনদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে তেমনি ডিজিটাল বাংলাদেশও বিনির্মাণ করা হয়েছে। জনগণ যেন আরও উন্নত জীবন পায় তার ব্যবস্থাও করার ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। সামনে বন্যার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে, স্থানীয় সবাইকেও প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
এর আগে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশেও বক্তব্য রাখেন তিনি।
বিএনএ/ এ আর