26 C
আবহাওয়া
১১:৫৯ অপরাহ্ণ - মে ২০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-২৩৭ (মৌলভীবাজার-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-২৩৭ (মৌলভীবাজার-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-২৩৭ (মৌলভীবাজার-৩)

বিএনএ, ডেস্ক : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে মৌলভীবাজার-৩ আসনের হালচাল।

YouTube player

মৌলভীবাজার-৩ আসন 

মৌলভীবাজার-৩ সংসদীয় আসনটি রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৩৭ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আজিজুর রহমান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬১ হাজার ৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৯ শত ৬১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আজিজুর রহমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ৯ শত ৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৮  হাজার ৫ শত ২৮ ভোট ।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করেনি

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই আসনে  নির্বাচন পন্ড হয়ে যাওয়ায় নির্বাচন কমিশন কাউকে বিজয়ী ঘোষনা করেনি। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এম সাইফুর রহমান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৩ শত ৬৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৮২ জন। নির্বাচনে বিএনপির এম সাইফুর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ২ শত ৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আজিজুর রহমান। নৌকা প্রতীকে  তিনি পান ৬৩ হাজার ১ শত ৭৭ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এম সাইফুর রহমান বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ৬ শত ২৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮ হাজার ৬ শত ৬৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির এম সাইফুর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে  তিনি পান ১ লাখ ৮ হাজার ৫ শত ১৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আজিজুর রহমান। নৌকা  প্রতীকে  তিনি পান ৯৫ হাজার ৩ শত ১৯ ভোট।

সাইফুর রহমান এই আসনটি ছেড়ে দিলে ওই বছর উপ-নির্বাচনে তার ছেলে এম. নাসের রহমান বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত  হন।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সৈয়দ মহসীন আলী বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৭৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৫ হাজার ৪ শত ৮১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ মহসীন আলী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯ শত ১৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এম সাইফুর রহমান ।  ধানের শীষ  প্রতীকে তিনি পান ৬৪ হাজার ৯ শত ৪২ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সৈয়দ মহসীন আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ মহসীন আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয়  জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন  করেনি।

২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। তার মৃত্যুর পর নির্বাচন কমিশন আসনটি শূন্য ঘোষণা করে। পরে এই আসনের উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন প্রয়াত সৈয়দ মহসীন আলীর স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসিন।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের  নেছার  আহম্মদ বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৯১ হাজার ৩ শত ৮৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮ শত ৬৭ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের নেছার  আহম্মদ, ধানের শীষ প্রতীকে নাসের রহমান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোঃ আছলম, রিক্সা  প্রতীকে খেলাফত মজলিস  লুৎফুর রহমান কামালী এবং মই প্রতীকে সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের মোঃ মগনু মিয়া প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের  নেছার  আহম্মদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫ শত ৮১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নাসের রহমান । ধানের শীষ  প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪ হাজার ৫ শত ৯৫ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ষষ্ঠ  সংসদ নির্বাচন পন্ড হয়ে যায়, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, পঞ্চম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর মৌলভীবাজার-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মৌলভীবাজার-৩ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫০.৯৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪২.১০%, বিএনপি ২৬.৬২%, জাতীয় পাটি ২৮.৯৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৩০% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৫.৪৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.১৫%, বিএনপি ৪৯.৫৬% জাতীয় পাটি ৮.৯২%, জামায়াত ইসলামী ২.০৮% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.২৯% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৫.১৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৫.৬৮%, ৪ দলীয় জোট ৫২.০০%, জাতীয় পাটি ১.৯১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪১% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.৯৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৫.১৫%, ৪ দলীয় জোট ৪২.৯৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৮৯% ভোট পায়।

মৌলভীবাজার-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের নেছার আহম্মদ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। নেছার আহম্মদ ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ মহসীন আলীর স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য  সৈয়দা সায়রা মহসীন, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক তরফদার, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের ছেলে ও বিএনপির মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি এম নাসের রহমান। তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। তবে স্থানীয় বিএনপিতে নাসেরের বিরোধীপক্ষ হিসেবে পরিচিত মৌলভী বাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানও মনোনয়ন চাইবেন।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন মৌলভী বাজার জেলা জাতীয় পার্টির সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে কিংবা সাংগঠনিক গুণে ভোটার ও কর্মীদের কাছে পরিচিত মুখ প্রয়াত তিন নেতা। তাঁরা হলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী বিএনপির এম সাইফুর রহমান,সমাজকল্যাণমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সৈয়দ মহসীন আলী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য আজিজুর রহমান। প্রয়াত ওই তিন নেতার জনপ্রিয়তা আছে সংসদীয় আসনটিতে। তাদের পরিবারের সদস্যরা দলীয় মনোনয়ন পেলে সেই ‘ভোটব্যাংক’কে কাজে লাগাতে চান।

মৌলবীবাজার-৩ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। এই আসন থেকে সাইফুর রহমান দুই দফায় মন্ত্রী থাকাকালে মৌলভীবাজার জেলাসহ সিলেট অঞ্চলে বেশ উন্নয়নমূলক কাজ করেন। ফলে এলাকায় বিএনপির বড় একটি ভোটব্যাংক গড়ে ওঠে, যা এখনো আছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বিএনপি।

দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। তার ওপর  রয়েছে গ্রুপিং। যা নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২৩৭তম সংসদীয় আসন (মৌলভীবাজার-৩) আসনটিতে বিএনপি বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, ওজি,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ