১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় উগ্রবাদী সেনা সদস্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে।হত্যাকারিরা ক্ষমতাসীন হয়ে ওই বছর ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ ইনডেমনিটি ‘ অডিন্যান্স জারি করে। যা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে সেটিকে আইনে পরিণত করেন। হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হয় আওয়ামী লীগ।
বাতিল করে ‘ইনডেমনিটি অ্যাক্ট’। এরপর ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা জেলা দায়রা জজ আদালত ১৮ আসামির মধ্যে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। আসামিরা আপিল করেন। ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টে বিভক্ত রায় প্রকাশ হয়। পরে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।
কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা মামলার বিচার হয়েছিল তা নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছে অজানা! বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি(বিএনএ) বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।
আজ প্রকাশিত হল পর্ব-২৬
প্রসিকিউশনের ৬নং সাক্ষী হাবিলদার সোহরাব আলী বলেন, ১৯৭৫ সনের জুলাই মাসের শেষের দিকে কুমিল্লা ১ ফিল্ড আর্টিলারি হইতে অন্যান্যদের সাথে তাহাকেও ঢাকায় গণভবন ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে নিরাপত্তা ডিউটির জন্য বদলী করা হয়। ক্যাপ্টেন বাশার তাহাদের নেতৃত্ব দেন। তাহাদের ২৫ জনের একদল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে পালাক্রমে ডিউটি করে। ১৪ই আগস্ট সকাল ৬টা হইতে হাবিলদার গণির নেতৃত্বে তাহাদের ডিউটি শুরু হয়। ১৫ই আগস্ট সকাল ৬টা পর্যন্ত তাহাদের ডিউটিতে থাকার কথা ছিল। ২ ঘন্টা পর পর তাহাদের ডিউটি বদলীর নিয়মে ১৪ই আগস্ট দিবাগত রাত্রে ২-৪টা তাহার ডিউটি শেষ হইলে গার্ড রুমে চলিয়া যান। তখন পুলিশের ডিউটিও ছিল। হাবিলদার অনুমান ৪.৩০টার সময় তাহাদের নিকট হইতে গুলি জমা নেয়। তারপর তিনি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনের রাস্তায় দাঁড়াইয়া ছিলেন।
কিছুক্ষণ পর পরবর্তী গার্ড দল আসে। আরো দেখে কালো পোষাক পড়া আর্মির কিছু ফোর্স ২/৩টা ট্রাকে করিয়া পূর্বদিক হইতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের ২/১টা বাড়ির পশ্চিমে গিয়া থামে। তখন লেকের দক্ষিণ দিক হইতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গুলি আসিতে দেখে। তখন ভয়ে বঙ্গবন্ধু বাসভবনের পূর্বদিকে দেওয়ালের পাশে গিয়া দাঁড়ায়। ৫/৬ মিনিট পর গুলি বন্ধ হয়। তখন বঙ্গবন্ধুকে রিসেপশন রুম হইতে বাহির হইয়া দোতলার দিকে যাইতে দেখে। একটু পরে রিসেপশন রুমের সামনে দাঁড়াইয়া শেখ কামাল বলেন,“আর্মি-পুলিশ ভাই আপনারা আমার কাছে আসেন।”
এই সময় খাকী পোষাকধারী ক্যাপ্টেন হুদাসহ খাকী ও কালো পোষাকে আরো অফিসার এবং কিছু সৈনিক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের ভিতরে ঢুকিয়া ক্যাপ্টেন হুদা ও অন্য অফিসার শেখ কামালকে গুলি করে, শেখ কামাল চিৎকার দিয়া রিসেপশন রুমের দরজার কাছে পড়িয়া যায়। ক্যাপ্টেন হুদা আবার তাহাকে গুলি করে। তারপর ক্যাপ্টেন হুদাই বাড়ির কাজের লোকদেরকে নিয়া লাইনে দাঁড় করাইয়া দোতলায় যায়। কিছুক্ষণ পরপর দোতলায় গুলি ও আর্ত-চিৎকারের শব্দ শোনে। ২০/২৫ মিনিট পর হত্যাকারীরা দোতলা হইতে নিচে নামিয়া গেইটের দিকে যায়। তিনি দোতলার সিঁড়িতে গিয়া বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে। এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখিয়া দোতলায় না গিয়া গেইটের কাছে চলিয়া আসে। ঐ সময় ক্যাপ্টেন হুদা কোন সিভিলিয়ান যাতে বাড়িতে ঢুকিতে না পারে সেই জন্য তাহাদের গার্ডদেরকে পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দিয়া চলিয়া যায়। কিছুক্ষণ পর ক্যাপ্টেন হুদার সঙ্গে সুবেদার মেজর আবদুল ওহাব জোয়ারদারকে ঘুরিতে দেখে।
একসময় গেইটের সামনে ল্যান্সারের একজন অফিসারকে ক্যাপ্টেন হুদার ব্যাজ বদল করিয়া তাহাকে মেজরের ব্যাজ এবং হুদার ব্যাজ খুলিয়া জোয়ারদারকে পড়াইয়া দেয়। তারপর সামনে ট্যাংকের শব্দ শুনিয়া বাড়ির উত্তর পাশে ডিউটি পোস্টে গিয়া ডিউটি করিতে থাকে। ১৬ই আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধুর লাশ বাদে বাকী লাশগুলি একটি আর্মি ট্রাকে করিয়া নিয়া যাইতে দেখে। ১৬ই আগস্ট অনুমান ৯.৩০টার দিকে একটি আর্মির পিকআপে বঙ্গবন্ধুর লাশ নিয়া যায়। ১৬ই আগস্ট বিকালে গণভবনে এবং ১৭ই আগস্ট দিনগত রাত্রে কুমিল্লায় চলিয়া যায়।
তথ্যসুত্র: বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায়, গ্রন্থনা ও সম্পাদনা- রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী পৃষ্ঠা নং-৪৬ (চলবে)
আরও পড়ুন :
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-২৫
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-২৪
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-২৩
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-২২
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-২১
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-২০
গ্রন্থনা: ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনায়: এইচ চৌধুরী