বিএনএ : একের পর এক সেনা চৌকি দখল করে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তওয়ে দখলের মিশনে এগিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। তারই ধারাবাহিকতায় আরাকান আর্মি এবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তওয়ের কাছে একটি থানা দখলে নিয়েছে । ২২ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহী বাহিনীটি জানিয়েছে, পোন্নাগিউন টাউনশিপ পুলিশ স্টেশনটি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।
২৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত মিয়ানমারের দৈনিক ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পোন্নাগিউন, রাজধানী সিত্তওয়ে থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইয়াঙ্গুন–সিত্তওয়ে সড়কে নিরাপত্তা জোরদার করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
ইরাবতীর খবরে আরও বলা হয়, আরাকান আর্মি সম্প্রতি পাকতাও শহর দখল করে। এই শহরটিও সিত্তওয়ের কাছে। বাহিনীটি রাখাইনের সামরিক কমান্ডকে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানিয়েছে। নইলে তাদেরকে পরাজিত করা হবে বলে ঘোষণা করেছে আরাকান আর্মি।
তাদের ভয়ে জান্তা সরকারের বহু কর্মকর্তা সিত্তওয়ে ছেড়ে পালিয়েছে। এছাড়া শহরটির বাসিন্দাদেরও অর্ধেকের বেশি অন্যত্র চলে গেছে। বিদ্রোহী বাহিনীটির দাবি, তারা পোন্নাগিউন, রাথেদাউং, বুথিদাউং এবং মংডু শহরের কমান্ড সেন্টারসহ জান্তা বাহিনীর ঘাঁটিগুলোতে আক্রমণ চালাচ্ছে।
অপরদিকে সিত্তওয়ে, পোন্নাগিউন, রাথেদাউং এবং বুথিডাং শহরে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে জান্তা সরকার।
বৃহস্পতিবার মিনবিয়া টাউনশিপের কান নি গ্রামের কাছে জান্তা বাহিনীর একটি বড় ও শক্তিশালী ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে আরাকান আর্মি।
এর আগে শনিবার থেকে জান্তার ৯ম সেন্ট্রাল মিলিটারি ট্রেনিং স্কুলে আক্রমণ অব্যাহত আছে। এর কাছে থাকা তিনটি ফাঁড়ি দখল করেছে তারা।
বৃহস্পতিবার ওয়াই১২ বিমান থেকে উপকূলীয় শহর রামরিতে বোমা ফেলেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। বিমান হামলা এখনও অব্যাহত আছে। এছাড়া যুদ্ধজাহাজ থেকেও রামরিতে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে জান্তা বাহিনী। তবে আরাকান আর্মির পালটা হামলায় তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
এদিকে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য শিগগিরই জান্তাবাহিনী থেকে মুক্ত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’। গত ২০ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছে তারা।
২২ ফেব্রুয়ারি রাখাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নারিনজারা নিউজ এই তথ্য জানিয়েছে। এরই মধ্যে বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার হামলা চালানো হয় বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে। যদিও এরই মধ্যে আরাকান রাজ্যের অনেকাংশ আরাকান আর্মি (এএ) দখল করে নিয়েছে।
তথ্যমতে, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের চৌকিগুলো বিদ্রোহীদের দখলে যাওয়ায় জান্তাবাহিনীর সদস্যরা মংডুর দিকে পালিয়েছে। আর বিদ্রোহীরা এসব এলাকা নিজেদের আয়ত্তে এনে মংডু শহর দখলে নিতে সেদিকে ছুটছে। এতে সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ অনেকাংশ কমে আসায় গুলির শব্দ কমছে। কয়েকদিন ধরে সীমান্তে স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক কেটে গিয়েছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে হঠাৎ করে থেমে থেমে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং ঝিমংখালী সীমান্তে আবারও গুলি ও মর্টার শেলের শব্দ শোনতে পায় স্থানীয়রা। ফলে নতুন করে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে তাদের মনে।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, কয়েকদিন বিরতির পর ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বিদ্রোহীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোঁড়ে জান্তাবাহিনী। সেই গুলির শব্দ ভেসে আসে বাংলাদেশের এপারে। যার ফলশ্রুতিতে নতুন করে সীমান্ত এলাকার গ্রামবাসীরা আতঙ্ক ও উৎকন্ঠায় রয়েছে।
বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব/এইচ.এম/ হাসনা