বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নবম শ্রেণি পড়ুয়া তাসফিয়া আমিনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলার তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) শাহাবুদ্দিন আহমদ। আগামী ২৭ ডিসেম্বর পিবিআই’র দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
পিবিআই তদন্তে বলা হয়েছে, তাসফিয়া আমিন বাবা-মায়ের ভয়ে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমিতে গিয়ে আত্মহত্যা করার জন্য নদীতে ঝাপ দেয়। পরেরদিন মৃত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। এই মৃত্যুর জন্য ভিকটিম তাসফিয়া আমিন নিজেই দায়ী। তাসফিয়ার শরীরে যে সমস্ত বাহ্যিক ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে তা নদীর পানির ঢেউতে পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে হয়েছে বলে তদন্ত ও ডাক্তারের মতামতে পাওয়া গেছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, আসামি আদনান মির্জার সাথে তাসফিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার দিন তাসফিয়া ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিল। বাবা-মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পরে বন্ধুদের মাধ্যমে খবর পেয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য তাসফিয়া আমিনকে একটি সিএনজিতে তুলে দিয়ে অন্য সিএনজি নিয়ে চলে যায়। আদনান মির্জার কল লিস্ট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়—ঘটনার সময় আসামির অবস্থান পতেঙ্গা এলাকায় ছিল না। তাই এজাহারভুক্ত আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে সুপারিশ করা হয়।
পিবিআইয়ের তদন্তে বলা হয়েছে, ভিকটিম তাসফিয়া আমিনের সাথে মামলার এজহারনামীয় আসামি আদনান মির্জার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা দুজনই ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রী। তাসফিয়া আমিনের লেখা-পড়ার প্রতি অমনোযোগী হওয়ার বিষয়টি তার বাবা মায়ের নজরে পড়লে বিভিন্ন খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন—তাদের মেয়ের সাথে তার একই ক্লাসের ছাত্র আদনান মির্জার প্রেমের সম্পর্ক আছে। এরপর মামলার বাদী ও তার স্ত্রী নাইমা খানম তার মেয়ের মোবাইল ফোনের সিম খুলে নিয়ে নেয়। এরপরও তাদের বাসায় ওয়াইফাই নেট ওয়ার্ক থাকায় তাসফিয়া আমিন ও আসামি আদনান মির্জার ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন ২০১৮ সালের ১ মে বিকাল বেলার দিকে তাসফিয়া আমিন ড্রয়িং রুমে বসে ছোট বোনকে নিয়ে টিভি দেখছিল। তার বাবা আসরের নামাজ পড়ার জন্য বাইরে যান। মা রান্নাবান্না করে কক্ষে ছিল (শবেবরাতের বিশেষ রান্না)। ইতিমধ্যে ভিকটিমের মা ড্রয়িং রুমে এসে দেখে যে, তাসফিয়া আমিন বাসায় নেই। এরপর সে প্রথমে তার স্বামীকে ও পরবর্তীতে আসামি আদনান মির্জার বন্ধুকে মোবাইল করে তার মেয়ের অবস্থান জানতে চান। বন্ধুর মাধ্যমে আদনান মির্জা খবর পেয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য তাসফিয়া আমিনকে একটি সিএনজিতে তুলে দিয়ে সে অন্য একটি সিএনজিতে করে চলে যায়।
প্রসঙ্গত, মরদেহ উদ্ধারের পর তাসফিয়াকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে তার বাবা মো. আমীন ২০১৮ সালের ৩ মে দুপুরে আদনান মির্জাকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেছিলেন।
বিএনএনিউজ/মনির