বিএনএ ডেস্ক: বরিশালের বাকেরগঞ্জে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান রত্না আমিন দম্পতির বাড়িতে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) হামলা-ভাঙচুর হয়েছে। সরকার পতনের ১৭ দিন পর পরিবেশ যখন শান্ত হয়ে আসছে, তখন এ ধরনের হামলা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুর্নীতির অভিযোগে রুহুল আমিন দম্পতি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সদ্য সাবেক পৌর মেয়র লোকমান ডাকুয়ার বিচার দাবিতে বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে যৌথ সমাবেশ করে বিএনপি-জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন। এতে নেতৃত্ব দেন চারদলীয় জোট আমলে বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের এমপি আবুল হোসেন খান। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ জমাদ্দার, সদস্য সচিব নাসির হাওলাদার, জামায়াত আমির অধ্যাপক ফিরোজ আলম, ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি নাসির উদ্দিন রোকন ডাকুয়া প্রমুখ সমাবেশে বক্তৃতা করেন। এতে তিন সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত থাকলেও যাননি পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান মোল্লার অনুসারীরা। সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। পরে ফেরার পথে একদল বিক্ষুব্ধ রুহুল আমিন হাওলাদারের বাড়িতে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক মো. লিটন জানান, বাসার ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে হামলাকারীরা দুটি মোটরসাইকেল, একটি পাজেরো গাড়ি, আসবাব ভাঙচুর ও মালপত্র লুট করে নিয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনী এলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীর দাবি, ১৫ আগস্ট পৌর মেয়র লোকমান ডাকুয়ার বাড়িতে নির্বিঘ্নে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি হয়। মূলত দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খানকে ‘টাকার মাধ্যমে ম্যানেজ’ করে আওয়ামী লীগ এ কর্মসূচি করে। বিষয়টি জানাজানি হলে আবুল হোসেনের ভূমিকা নিয়ে জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীর মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গুঞ্জন রয়েছে, বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিতেই বৃহস্পতিবার আবুল হোসেন যৌথ বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করেন। আর জাপা নেতা হাওলাদারের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়। যদিও এসব অভিযোগের সত্যতা সমকাল নিশ্চিত হতে পারেনি।
হামলার পর আবুল হোসেন খান ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক নাছির জমাদ্দার বাড়িটি পরিদর্শন করেন। এ সময় সাংবাদিকদের আবুল হোসেন বলেন, ‘বাড়িতে হামলার সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত নন। যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে।’ লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সভার পর স্থানীয় প্রশাসন আওয়ামী লীগের সঙ্গেও বৈঠক করে। এর পর তাদের ঘরোয়াভাবে কর্মসূচি পালনের মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়। এখানে ভিন্ন কিছু খোঁজার চেষ্টা অযৌক্তিক।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে মেয়র পদে থাকা লোকমান ডাকুয়া ছিলেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী। অর্থবিত্তে তিনি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। ১৬ বছর হাওলাদার পরিবার এমপি থাকলেও উপজেলায় সব দখল বাণিজ্যের মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন লোকমান। মহাজোটের সমর্থনে হাওলাদার ২০০৮ সালে এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তার স্ত্রী রত্না আমিন বরিশাল-৬ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিরোধিতার মুখে পড়ে হাওলাদার পরিবার। পরে রুহুল আমিন হাওলাদার পটুয়াখালী-১ (সদর-দুমকী-মীর্জাগঞ্জ) আসনে মহাজোটের সমর্থনে এমপি হন।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ