বিএনএ, বিশ্বডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র বি-টু বোমারু বিমান দিয়ে ইরানে হামলা চালিয়েছে ।বিমানে বহন করা হয়েছে বাঙ্কার-বিধ্বংসী ভয়ঙ্কর বোমা। ফোরদো, নাতানজ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় ‘অত্যন্ত সফল’ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ফোরদোতে ছয়’টি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ ফেলা হয়েছে। তা ফেলার জন্য বি ২ স্পিরিট বোমারু বিমানকে ব্যবহার করেছে আমেরিকা, যে বিমান ১৫ টন ওজনের বোমা বহনে সক্ষম। শুধু ‘বাঙ্কার বাস্টার’ই নয়, আমেরিকার নৌবাহিনী ‘টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েও নাতান্জ় এবং ইস্পাহান পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে।
মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা স্বীকার করে নিয়েছেন, পাহাড়ে ঘেরা মাটির প্রায় ৩০০ ফুট নীচে থাকা ফোরদোর পরমাণুকেন্দ্রটি তাঁরা ধ্বংস করতে পারেননি। তবে ‘মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে।
প্ল্যানেট ল্যাবস পিবিসি’-ও একটি উপগ্রহচিত্র প্রকাশ করেছে। সেই ছবি বিশ্লেষণ করে সংবাদসংস্থা এপি দাবি করেছে, এই উপগ্রহচিত্রটি ফোরদোর। ছবিতে দেখা গেছে, একসময়ের বাদামি রঙের পাহাড়ের কিছু অংশ ধূসর হয়ে গিয়েছে। বাতাসেও হালকা ধূসর ধোঁয়া। হামলার আগের উপগ্রহচিত্রের থেকে যা কিছুটা আলাদা। সেই ছবি থেকে মনে করা হচ্ছে, ওই পরমাণুকেন্দ্রের একাধিক প্রবেশপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে!
আমেরিকার হামলার দু’দিন আগেই কিছু অস্বাভাবিক তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল ফোরদোর পরমাণুকেন্দ্রে। পরমাণুকেন্দ্রটির যে জায়গায় সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, সেই রাস্তায় ১৬টি মালবাহী ট্রাক দেখা গিয়েছিল গত ১৯ জুন। পরের দিনের উপগ্রহচিত্রে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েকটি ট্রাক উত্তর-পশ্চিম দিকে আরও এক কিলোমিটার মতো সরে গিয়েছে। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি ট্রাক এবং বুলডোজ়ার দেখা গিয়েছে পরমাণুকেন্দ্রে ঢোকার মুখে।
ধারণা করা হচ্ছে হামলার আগেই মূল্যবান পদার্থগুলো সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ইরান।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের সবচেয়ে বড় ও সুরক্ষিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফোরদো-তে মার্কিন হামলার প্রভাব ঠিক কতটা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এক ইরানি আইনপ্রণেতার ভাষ্যমতে, স্থাপনাটির কেবল বাহ্যিক বা সামান্যই ক্ষতি হয়েছে।
অন্যদিকে, ইরান ও পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্যে বলা হয়েছে, হামলার পর উল্লেখযোগ্য মাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়নি। এ থেকে বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, হামলার আগেই হয়তো ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত সেখান থেকে সরিয়ে ফেলেছে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলেছে, সেগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেলেও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আবার শুরু করার সক্ষমতা রয়ে গেছে। কারণ, তাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা অক্ষত রয়েছে। এর পাশাপাশি, দেশটির এমন গোপন স্থাপনাও থাকতে পারে, যা এখনো হামলা থেকে সুরক্ষিত।
পারমাণবিক শক্তির বিষয়ে ইরানের জ্ঞান, হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির আণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি।
কামালভান্দি বলেছেন, “ইরানে পারমাণবিক শিল্পের শেকড় আছে। এই শেকড় ধ্বংস করা যাবে না।”
তিনি আরও বলেন,“আমরা ক্ষতির শিকার হয়েছি, কিন্তু পারমাণবিক শিল্প ক্ষতির শিকার হওয়া এবারই প্রথম নয়”।
এদিকে মার্কিন হামলার কড়া নিন্দা করেছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় বসতে সে দেশে গিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রি আরাগচি।
পুতিন ঘনিষ্ঠ দিমিত্রি মেদভেদেভ আমেরিকার হামলাকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করে বলেছেন, ‘‘ইরানে পারমাণবিক পদার্থের সমৃদ্ধকরণ এবং ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্রের উৎপাদন অব্যাহত থাকবে। বেশ কয়েকটি দেশ ইরানকে সরাসরি নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করতেও প্রস্তুত।’’
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী হামলাটি যদি সত্যিই ‘চোখধাঁধানো সামরিক সাফল্য’ হয়ে থাকে, তাহলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বড় ধরনের ধাক্কা খাবে। এর ফলে দেশটির এই কর্মসূচি কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে। কিন্তু ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণ নির্মূল হওয়ার দাবির সঙ্গে একমত নন বিশ্লেষকরা।
শামীম আরা চৌধুরী শাম্মী