25 C
আবহাওয়া
১১:১২ অপরাহ্ণ - মে ৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১০২ (খুলনা-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১০২ (খুলনা-৪)


বিএনএ ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে খুলনা-৪ আসনের হালচাল।

খুলনা-৪ আসন

খুলনা-৪ আসনটি দিঘলিয়া, রূপসা ও তেরখাদা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১০২তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫ হাজার ২ শত ৫৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৬ শত ৮৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ৬ শত ৯৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আ.খালেদ মো. জিয়াউদ্দিন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৭ হাজার ৭১ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এম নুরুল ইসলাম কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় 

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির এম নুরুল ইসলাম কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন:আওয়ামী লীগের এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫ শত ৬৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫ শত ৪০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৯ হাজার ৫ শত ৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি’র এম নুরুল ইসলাম । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৭ হাজার ২ শত ২১ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এম নুরুল ইসলাম বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫ শত ৯০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯০ হাজার ৩৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির এম নুরুল ইসলাম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২ হাজার ৯ শত ৫৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮০ হাজার ৩ শত ৭ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোল্ল্যা জালাল উদ্দিন বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৩ শত ৫২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৫ হাজার ৪ শত ২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোল্ল্যা জালাল উদ্দিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭ হাজার ৭ শত ১৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শরীফ শাহ কামাল। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৬ হাজার ৮ শত ২৪ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবদুস সালাম মুশের্দী বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১০ হাজার ৪ শত ৭৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪ শত ৬৪ জন।

একাদশ জাতীয় সংসদে খুলনা-৪ আসনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আবদুস সালাম মুশের্দী, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আজিজুল বারী হেলাল, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির শেখ আনছার আলী, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইউনুস আহম্মেদ শেখ, টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ এর শেখ হাবিবুর রহমান, ও কোদাল প্রতীকে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কে এম আলী দাদ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুস সালাম মুশের্দী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২৩ হাজার ৩ শত ১১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আজিজুল বারী হেলাল। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১৪ হাজার ১ শত ৮৭ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, খুলনা-৪ আসনে পঞ্চম,সপ্তম, নবম ,দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ এবং ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি বিজয়ী হয়।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর খুলনা-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৮.৩১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৪.৮৩%, বিএনপি ৩০.৯৭%, জাতীয় পার্টি ১৮.২৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৫.৯৭% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৮.৭৭%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪০.১০%, বিএনপি ৩৮.৫২%, জাতীয় পাটি ৭.০৬%, জামায়াতে ইসলামী ৮.৫২ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.০৮% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮১.০১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪২.২৬%, ৪দলীয় জোট ৫৪.১৮%, জাতীয় পার্টি ৩.৩৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.১৯% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯২.৯৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫০.৪৭%, ৪ দলীয় জোট ৪৫.০৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৪.৪৬% ভোট পায়।

খুলনা-৪ (দিঘলিয়া, রূপসা ও তেরখাদা) সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী ও সাবেক জাতীয় তারকা ফুটবলার আবদুস সালাম মুর্শেদী। দশম জাতীয় সংসদের সদস্য মোস্তফা রশিদী সুজা ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। এরপর রাজনীতিতে আসেন ব্যবসায়ী ও সাবেক জাতীয় ফুটবলার আবদুস সালাম মুর্শেদী। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে এই আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন সালাম মুর্শেদী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন।

মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে আবদুস সালাম মুর্শেদীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড.মসিউর রহমান। এ ছাড়া খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী মনোনয়ন চাইবেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির একক প্রার্থী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী ছিলেন। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. সৈয়দ আবুল কাশেম এবং জাতীয় পার্টির খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এম হাদিউজ্জামান।

এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহম্মেদ শেখ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কে এম আলী দাদ আবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, খুলনা-৪ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ। ১৯৯১ সাল থেকেই আসনটি রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে। বিএনপি চাইবে আওয়ামী লীগের দুর্গটি দখলে নিতে। আওয়ামী লীগ চাইবে ধারাবাহিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে। বিএনপিতে দলীয় কোন্দল নেই। আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল রয়েছে। যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১০২তম খুলনা-৪ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ