বিএনএ, নওগাঁ: বিলের মধ্যে এতিম হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার সেতু। দুই পাশের সংযোগ রাস্তা না থাকায় সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। এখন খরা মৌসুমে বিলের মাঝখানে জেগে ওঠা ভাঙাচোরা রাস্তা এবং বর্ষা মৌসুম এলেই বিলে থই থই করে পানি। তখন পাড়ি দিতে হয় নৌকায়। এরপর পায়ে হেঁটে কাদা-পানি মাড়িয়ে চলাচল কিছুদিন। এই ভোগান্তি যেন দেখার কেউ নেই।
এভাবেই চরম দুর্ভোগ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলাচল করছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের অন্তত ৬ থেকে ৭ হাজার মানুষ। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি প্রত্যন্ত এই জনপদে।
সরেজমিনে শংকরপুর গ্রামের বিলে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে বিস্তৃত ফসলের মাঠ। ঠিক মাঠের মাঝখানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। তার দুই পাশে নেই সংযোগ রাস্তা। বিলের ভেতর দিয়ে আধা ভাঙা রাস্তায় কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ বাইসাইকেল, কেউবা মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করছেন। অনেকে যাতায়াত করছেন চার্জারভ্যানেও।
জানা গেছে, ২৪ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ৭৪৬ টাকা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে ইথেন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কয়েক দফা দর বাড়িয়ে কাজটি শেষ করা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের অন্তত ৬ থেকে ৭ হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন এই রাস্তা দিয়ে। দুর্ভোগ সঙ্গী করে যেতে হয় উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চৌবাড়িয়া হাটে। এছাড়া নওগাঁর নিয়ামতপুর ও রাজশাহীর তানোর উপজেলার সঙ্গে স্বল্প সময় ও সহজে এ জনপদের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বিলের ভেতরের এই রাস্তাটি। কিন্তু মান্দা উপজেলা এলজিইডি দপ্তর রাস্তা ছাড়াই খাম-খেয়ালিভাবে বিলের মাঝখানে সেতুটি নির্মাণ করে। রাস্তা না থাকায় জনগণের কোনো কাজেই আসছে না সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি।
শংকরপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. হাসেম বলেন, সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় বর্তমানে খরা মৌসুমে বিলের ভাঙাচোরা রাস্তায় যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে বর্ষার মৌসুম এলেই জনপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়ায় নৌকায় করে যাতায়াত করতে হয়। এতে করে খরা ও বর্ষা মৌসুমে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা মো. সোহেল বলেন, বিলের মধ্যে যে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে সেটা আমাদের প্রয়োজন নেই। মূলত যোগাযোগের সুবিধার্থে সংকরপুর বিলের মধ্যে আগে রাস্তাটি নির্মাণ করা দরকার ছিল। ফলে আমাদের যাতায়াতের জন্য এভাবে বছরের পর বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম মোকলেছুর রহমান (কামরুল) বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক যে, সংকরপুর বিলে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার যে ব্রিজ নির্মাণ হয়েছে, তাতে ব্রিজের দুই পাশে মাটি দিয়ে যে সংযোগ রাস্তা করার প্রয়োজন ছিল সেটা এখন পর্যন্ত হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি ঠিকাদারকে জানালে তিনি একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরপরও এখন পর্যন্ত কাজ হয়নি। পরে এলজিইডি অফিসারকে জানালে তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমের আগেই রাস্তার নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ শেষ করা হবে।
এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা প্রকৌশলী আবু সায়েদ বলেন, সেতুটির নির্মাণ শেষ হলেও পুরো কাজ এখনো শেষ হয়নি। অতি শিগগিরই রাস্তার জন্য মাটি কাটা শুরু হবে। আশা করছি বর্ষার আগেই রাস্তাটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে।
বিএনএনিউজ/ বিএম/শাম্মী