।।আশরাফ উদ্দিন।।
দ্বিতীয় বার বাধার কারণে গত ২ বছর ধরে ওই রাস্তার সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে ছিল। সংস্কার কাজের মাঝ পথে বাধা পড়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন সড়কটির ব্যবহারকারী কয়েক হাজার বাংলাদেশি। জরুরী খাদ্য-শস্য পরিবহন, রোগী পরিবহনসহ যাবতীয় স্বাভাবিক চলাচলে মারাত্মক বাধাগ্রস্থ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন সড়ক ব্যবহারকারীরা। তবে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লিখিতভাবে সড়কটির উন্নয়ন কাজের বাধা তুলে নেয় বিএসএফ।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, দুই বছর আগে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ নো-ম্যান্স ল্যান্ড এরিয়ায় পড়েছে অভিযোগ এনে সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিএসএফ কাজ বন্ধ করে দেওয়া আবার অনুমোদন দেওয়া দু:খের বিষয়।
স্থানীয় হেড়ম্যান হাফেজ আহম্মদ জানান, ফেনী নদীর ভাঙ্গনে শত বছর বয়সী রাস্তাটির বেশ কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়দের সহায়তায় নিজেদের অর্থায়নে মেরামত করে চালু রাখা হয়েছিল মানুষের চলাচলের জন্য। গত বছরের প্রথম দিকে সরকারীভাবে টেন্ডার করে ব্রিকসলিং এর কাজ চলছিলো। বিএসএফ সংস্কার কাজে বাধা দেয়ার কারণে গত ২বছর রাস্তাটি বিকল হয়ে ছিল। বিএসএফ কিছুদিন পরপর বাংলাদেশের দিকে সীমানা বাড়ায়। ফেনী নদীর মাঝ বরাবর থেকে দেড়শত গজ উত্তরে ভারতীয় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে বিএসএফ। সেই হিসেবে ১৫০ গজ দক্ষিণে হিসেব করলে আমার বাড়ি ঘর কিছুই নাই সব নো-ম্যান্স ল্যান্ডে পড়ে গেছে। আমরা কোথায় যাবো এখন?
শতবর্ষী খোরশেদ আলম জানান, যুদ্ধের ৩বছর পর থেকেই সড়কের পাশে ঘর করে এই বাড়িতে আছি আমি। কখনো ভারতীয় বাহিনীকে দেখিনি এই রাস্তা নিয়ে কথা বলতে, কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সরকারে বসার পর থেকেই সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রাস্তা সহ যে কোন উন্নয়ন কাজে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে বিএসএফ।
রাস্তার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বীথি বিল্ডকমের অংশীদার ঠিকাদার সেলিম জানান, সাড়ে ১১শত মিটার রাস্তার মধ্যে ৫শত মিটার রাস্তা নির্মাণে বাধা দিলে অর্ধেক কাজ সমাপ্ত করে চুড়ান্ত বিল উত্তোলন করি। এতে আমাদের প্রায় ৪ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাধা দেওয়া অংশের বাধা তুলে নিলেও নতুন করে টেন্ডার করা ছাড়া কাজ করা যাবে না।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আজাদ জানান, সড়ক সংস্কারে বাধা দানের পর বিজিবি ও বিএসএফের সাথে বৈঠক হয় কয়েকবার। বৈঠকের ভিত্তিতে বিএসএফ সড়কটি সংস্কারের অনুমতি দিয়েছিল তবে কোন এক কারণে সেই অনুমতি আবার ফেরত নিয়ে যায় তারা। গত বৃহস্পতিবার পতাকা বৈঠকে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে পুনরায় চুড়ান্ত অনুমোদন দেয় বিএসএফ। কিন্তু তাদের বাধা ও অনুমোদন দেওয়া বিতর্কিত বিষয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়াম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন জানান, বিএসএফ এর বাধা দেওয়া ও চুক্তির মাধ্যমে পুনরায় অনুমোদন দেওয়াটা আইনি ভাবে যুক্তি সংগত কিনা সে ব্যাপারে আমার জানা নেই। তবে বাধা দেওয়া অংশ নোম্যান্স ল্যান্ডের মধ্যে পড়েনা।
বাংলাদেশ (বিজিবি) ফেনী ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর জাকির হোসেন জানান, ‘আমরা সড়কনির্মাণ প্রসঙ্গে বিএসএফএর ক্যাম্প কমান্ডার বরাবরে চিঠি দেওয়ার পর তাদের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) রাস্তা সংস্কার কাজ আরম্ভ করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।
স্থানীয় ইতিহাস বিশেষজ্ঞ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার জামশেদ আলম ক্ষোভের সাথে জানান, স্বাধীনতার পরেও ফেনী নদীর মালিকানা ছিলো বাংলাদেশের। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা মুজিব চুক্তিতে ভারত ফেনী নদীতে ভাগ বসায়। সেই অজুহাতে ওই এলাকায় যে কোন উন্নয়ন কাজে বাধা প্রদান করে আসছে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ। ওখানকার নদীর পানি অবৈধ ভাবে উত্তোলন করছে ভারতীয়রা। বাংলাদেশ সীমান্তে ব্যক্তিগত কোন ভূমিতে যে কেউ স্থায়ী ভবন নির্মাণ করতে গেলেই বিএসএফ বাধা সৃষ্টি করে। ভারতীয় সীমানা থেকে থেকে ৮শ মিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রামগড় হাইস্কুলের উন্নয়ন কাজেও বাধা সৃষ্টি করেছিল বিএসএফ। পরবর্তীতে সেই বাধা ও তুলে নেয়। দু:খের বিষয় হচ্ছে সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে কোন উন্নয়ন কাজে ভারতীয় বাহিনী কেন বাধা দিবে? আবার কেনই বা সেই কাজের অনুমতির জন্য তাদের সাথে চুক্তি করতে হবে? কেন চুক্তির মাধ্যমে তাদের থেকে আমাদের অভ্যন্তরীণ কাজের অনুমতি নিতে হবে?? এব্যাপারে আমাদের সীমান্ত বাহিনীদের করনীয় কি কিছুই নেই। ভারতীয়রা সীমান্তের কাঁটা তার ঘেঁষে সড়ক নির্মাণ, নিরাপত্তা চৌকি নির্মাণ সহ বিভিন্ন স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে যাচ্ছে। এতে কি আমাদের সীমান্ত বাহিনী কখনো ভারতের সীমানা টপকে তাদের বাধা দিয়েছিল?? বা এদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় বাহিনী যখন অন্যায়ভাবে বাধা সৃষ্টি করে তার উপযুক্ত শক্ত জবাব দিয়েছে?? কেন আমাদের দূর্বলতা?
বিএনএ/ ওজি