বিএনএ, ঢাকা : দেশের সর্বত্র আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে বিষাক্ত ও হিংস্র চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপ। অনেক জায়গায় এই সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় এবং সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হওয়ায় বাড়ছে উদ্বেগ। এই অবস্থায় বাংলাদেশ বন বিভাগের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২১ জুন) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিস্তারিত তুলে ধরেছে বাংলাদেশ বন বিভাগ।
বন বিভাগ বলেছে, গত ১০ বছর আগেও এই চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার তেমন চোখে পড়ত না। মূলত ২০১২ সালের পর থেকে এই সাপের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। রাসেলস ভাইপার দক্ষ সাঁতারু হওয়ায় নদীর স্রোতে ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে।
রাসেলস ভাইপার স্বভাবগতই কিছুটা তেজী। এটি মেটে রঙের হওয়ায় মাটির সাথে সহজে মিশে যেতে পারে। মানুষ খেয়াল না করে সাপের খুব কাছে চলে যায়, ফলে সাপটি বিপদ দেখে ভয়ে আক্রমণ করে। এই সাপটির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পেছনে মূলত মানুষ হিসেবে আমরাই দায়ী। যেসব প্রাণী রাসেলস ভাইপার খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে, প্রকৃতিতে এদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। কিছু সাপ যেমন, শঙ্খচূড়, খইয়া গোখরা, কালাচ বা কেউটে, শঙ্খিনী, রাসেলস ভাইপারসহ অন্যান্য সাপ খেয়ে থাকে। বেজি, গুইসাপ, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বন বিড়াল, মেছো বিড়াল এরাও রাসেলস ভাইপার খেয়ে থাকে।
এছাড়া তিলা নাগ ঈগল, সারস, মদন টাক এই সাপ খেতে পারে। বন্যপ্রাণী দেখলেই তা নিধন করার প্রবণতা, কারণে অকারণে বন্যপ্রাণী হত্যা, এদের আবাসস্থল ধ্বংস করাসহ বিভিন্ন কারণে দেশের সর্বত্রই এ সকল শিকারি প্রাণী আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ফলে রাসেলস ভাইপার অত্যধিক হারে প্রকৃতিতে বেড়ে গেছে।
রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা বিষধর সাপ। কিন্তু এই সাপ দৌড়ে তাড়া করে না, বাসায় এসে কামড়াবে না। এরা সাধারণত কৃষি জমিতে ইঁদুর, ব্যাঙ, কীট-পতঙ্গ অন্যান্য প্রাণী খেয়ে থাকে। ফলে আতঙ্ক না ছড়িয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালাতে হবে। প্রথমত, চেনানো দরকার সাপটা দেখতে কেমন।
সম্প্রতি দেশের ২৭টি জেলায় রাসেলস ভাইপার ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রামের ভেনম রিসার্চ সেন্টার।
বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, ভুটান, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, চীন ও মিয়ানমারেও এই ভয়ংকর বিষধর সাপের উপস্থিতি রয়েছে বলে জানিয়েছে ভেনম রিসার্চ সেন্টার। এ সাপ সাধারণত ঘাস, ঝোঁপ, বন, ম্যানগ্রোভ ও ফসলের ক্ষেতে বাস করে।
এ সাপের নাম রাসেলস ভাইপার কেন-
ভারতে কাজ করতে এসেছিলেন স্কটিস সার্জন প্যাট্রিক রাসেল। ১৭৯৬ সালে তিনি এই সাপ সম্পর্কে গবেষণা করেন। পরে তার নাম অনুসারে এই সাপের নামকরণ করা হয় ‘রাসেলস ভাইপার।’ তবে বাংলাদেশে এটি চন্দ্রবোড়া ও উলুবোড়া নামেও পরিচিত।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো-
. রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
- যথাসম্ভব সাপ এড়িয়ে চলুন, সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্য নিন বা নিকটতম বন বিভাগ অফিসে খবর দিন।
- যেসব এলাকায় রাসেলস ভাইপার দেখা গিয়েছে, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।
- রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চ লাইট ব্যবহার করুন।
- সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। রোগীকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। দংশিত স্থানের উপরে হালকা করে বেঁধে দিন।
- রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যান।
- আতঙ্কিত হবেন না, রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টি ভেনম নিকটস্থ হাসপাতালেই পাওয়া যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে অনুযায়ী বাংলাদেশে বছরে অন্তত ছয় হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যান। রাসেলস ভাইপার গোখরো-কেউটের চেয়েও বিষধর। সাপটির দংশনে রোগীরা চিকিৎসাধীন অবস্থাতেও প্রতি তিনজনে একজন মারা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে।
বিএনএ,নিউজ / রেহানা/এইচ.এম/হাসনা