27 C
আবহাওয়া
৫:৩৭ অপরাহ্ণ - মে ৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৪০ (বগুড়া-৫)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৪০ (বগুড়া-৫)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে বগুড়া-৫ আসনের হালচাল।

YouTube player

বগুড়া-৫ আসন 

বগুড়া-৫ সংসদীয় আসনটি শেরপুর এবং ধনুট উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৪০ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বগুড়া-৫ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮০ হাজার ১ শত ৬৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮ শত ৬১ জন। নির্বাচনে বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৩শত ৮৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ফেরদৌস জামান মুকুল। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৩ হাজার ৫শত ৬৪ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৩ হাজার ২ শত ৬৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৮ হাজার ৮ শত ৭৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৪ হাজার ৮শত ৪৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ফেরদৌস জামান মুকুল । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৮ হাজার ৫৯ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বিজয়ী হন

২০০১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭ শত ৩১ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ২ শত ৭৮ জন। নির্বাচনে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮ শত ৪২ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস জামান মুকুল । ঘড়ি প্রতীকে তিনি পান ৭৪ হাজার ২ শত ৫০ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের হাবিবর রহমান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭শত ৯৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৩০ হাজার ১ শত ৭৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাবিবর রহমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬ শত ৪০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির জানে আলম খোকা। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫৪ হাজার ৬ শত ৫৩ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাবিবর রহমান বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাবিবর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬ শত ৩৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৯১ হাজার ৭ শত ৫ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৯ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের হাবিবর রহমান, ধানের শীষ প্রতীকে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ প্রকাশ জি এম সিরাজ, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির তাজ মোহাম্মদ শেখ, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির আবদুন নুর, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির সন্তোষ কুমার পাল, কোদাল প্রতীকে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির রঞ্জন কুমার দে, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মীর মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান, মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোটের নজরুল ইসলাম এবং মাথাল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রউফ মণ্ডল জোন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাবিবর রহমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ৩১ হাজার ৫ শত ৪৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৯ হাজার ৭ শত ৭৭ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৫ (শেরপুর এবং ধনুট) আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টি আই এম নুরুন্নবী তারিক, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল সনি এবং মহিলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ প্রকাশ জিএম সিরাজ, শেরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য আসিফ রব্বানী সানভি, পৌর বিএনপির সভাপতি স্বাধীন কুমার কুন্ডু। এ ছাড়া বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শেরপুর পৌরসভার মেয়র জানে আলম খোকা দলীয় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী হতে চান।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন শেরপুর উপজেলা সভাপতি আবদুল কুদ্দুস কুদু ও সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসেবে সন্তোষ সাহা এবং শেরপুর উপজেলা সভাপতি হরিশংকর সাহা মনোনয়ন চাইবেন।

জামায়াতে ইসলামী দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী মাওলানা দবিবুর রহমান ২০দলীয় জোটের শরিক দল হিসাবে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন চাইবেন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বগুড়া-৫ আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে টানা বিএনপির প্রার্থীরা প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্যদিকে নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদে টানা প্রতিনিধিত্ব করেছেন আওয়ামী লীগ।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর বগুড়া-৫ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬২.০৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.৫৬%, বিএনপি ৩৯.৯১ %, জামায়াতে ইসলামী ২৩.২৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩০% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.৮০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.৪৭ %, বিএনপি ৫০.১৮ %, জাতীয় পার্টি ০.৩৪%, জামায়াতে ইসলামী ১০.২৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৭২% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৭.৬৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৭.৮৬%, ৪ দলীয় জোট ৫৫.৪৯ %, জাতীয় পার্টি ০.৩৫%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৬.৩% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯১.৮৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫১.৭৬%, ৪ দলীয় জোট ৪৫.৮১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ২.৪৩% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বগুড়া-৫ আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বললেই চলে। জামায়াতে ইসলামীর প্রচুর ভোট রয়েছে। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলটি দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। জামায়াতে ইসলামী কোন প্রার্থী না দিলে ভোট বিএনপি প্রার্থীর জন্য সাপে বর হবে । দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৪০ নম্বর বগুড়া-৫ আসনটিতে বিএনপিকে জয়ী হতে হলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখী হতে হবে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ