বিএনএ, সাভার: ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে খেলার মাঠের জন্য আবেদন করে এক ব্যক্তির জমি দখলের লক্ষ্যে হামলা চালিয়ে অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষকের পরিবারের সদস্যদের মারধর ও তার বাড়িতে ভাংচুরের অভিযোগে ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (২২ মার্চ) এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা ও তার সরকারি চাকরিজীবী ছেলেসহ ৩৫ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক।
এর আগে সোমবার (২০ মার্চ) বিকেলে উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রামে ওই হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
গ্রেপ্তাররা হলেন আব্দুল জলিলের ছেলে জসিম উদ্দিন (২০) ও মো. মানিক মিয়ার ছেলে মো. শামসুল হক (৪৫)। অভিযুক্তরা হলেন মৃত ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে ও গাংগুটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ লীগের সহ-সভাপতি মো. আওলাদ হোসেন (৬৫) এবং তার ছেলে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সাটুরিয়া উপজেলার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান (৪৫), মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে সাজ্জাদ হাসেন কালু (৪০), বাচ্চু মিয়ার ছেলে আকাশ (২০), মো. মানিক মিয়ার ছেলে মো. শামসুল হক (৪৫), আব্দুল জলিলের ছেলে জসিম উদ্দিন (২০), মদন আলীর ছেলে রবিউল (২২), ছমুর উদ্দিনের ছেলে আমির হামজা (২০), মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে ওবায়দুল্লাহ (৩০), খোরশেদের ছেলে সোলায়মান (২০), মৃত গোপালের ছেলে ইমান আলী (৫৫), আব্দুল লতিফের ছেলে নুরল ইসলাম (২২) ও শাহ অলম (১৮), মৃত কোরবান আলীর ছেলে আল আলীম (৪০), খলিলুর রহমান (২৫), আব্দুল জলিল (৪০), আ. খালেক শরীফুল ইসলাম (২৫), মহিউদ্দিনের ছেলে সোহাগ (২০), গোলাম মোস্তফার ছেলে আলমগীর (২৬) ও মেহেদী হাসান (২১), মৃত বশির উদ্দিনের ছেলে রাশেদ আলী (৩৫), মৃত রহমত আলীর ছেলে শাহজাহান (৩৫), আব্দুল কাদেরের ছেলে ইব্রাহীম (২৬), মতিয়ার রহমানের ছেলে মামুন (২২), মেছের আলীর ছেলে সলিম উদ্দিন (২৮) ও বাবু (২৫), বাচ্চু মিয়ার ছেলে শাহ আলম (২৬), বিল্লাল হোসেনের ছেলে ইকবাল (২৮), নূর ইসলামের ছেলে শরীফ (৩৫), কামাল উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম ওরফে শরীফ (২৬), ইয়ার হোসেনের ছেলে ইউসুফ (২২), মৃত আসমান আলীর ছেলে সেলিম (২৭) ও হারুন (২৭), মৃত আমির উদ্দিনের ছেলে শুকুর আলী (৩৫)। তারা সবাই ধামরাই উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বড় নালাই গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী মো. ফজলুল হক মাস্টার (৬৫) ধামরাই উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বড় নালাই গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বড়নালাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
ভুক্তভোগী মো. ফজলুল হকের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, সম্প্রতি বড়নালাই গ্রামে গাজীখালি নদীপাড়ের ১৫১ নম্বর দাগের খাস জমিতে একটি মাঠ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন মো. আতিকুর রহমান। ওই জমি ১ নম্বর খতিয়ানের ১৫১ নম্বর দাগের। জমির পরিমাণ প্রায় ৬০ শতাংশ, যার প্রায় ৪০ শতাংশই নদীগর্ভে। জমির পাশেই এসএ খতিয়ান ২৭৬, এসএ ৮৯৫, আরএস খতিয়ান ১১৪, আরএস ১৫২ নম্বর দাগে ৭৯ শতাংশ জমি রয়েছে তাদের।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জমি পরিদর্শন করে সীমানা নির্ধারণ করেন। সীমানার ভেতরে নিজেদের ওই ৭৯ শতাংশের মধ্যে ৪০ শতাংশ জমি থাকায় বিষয়টি ধামরাইয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তারকে জানান তারা। এ সময় ফারজানা জমির মালিক দাবিদারদের সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়ে দেন। বিষয়টি জানতে পেরে আতিকুর ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার রাতে ১৫-২০ জনকে নিয়ে শাহজাদা কবিরদের জমির লাউয়ের মাচা ভেঙে ফেলেন এবং কাঁঠালগাছসহ বিভিন্ন ধরনের গাছপালা কেটে ফেলেন। এ ঘটনার পরে অভিযুক্তরা জোর করেই জমিটি দখল করে ও মাঠ তৈরির নামে পুরো জমিটিতে লাল পতাকা লাগায়। এরপর বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করলেও অভিযুক্তরা তাতে সাড়া দেননি।
পরে গত ২০ মার্চ ভুক্তভোগী শিক্ষক আদালতে গিয়ে জমিটিতে ১৪৪ ধারা চেয়ে ও জমি মালিকানা দাবি করে মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি জানতে পেরে মো. আওলাদ হোসেন ও মো. আতিকুর রহমানের অনুসারীরা ২১ মার্চ রাত ১০টার দিকে আবারও ওই শিক্ষকের বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় দা, লাঠি, লোহার রড, ছ্যান, শাবল, চাপাতিসহ দেশিয় অস্ত্রসহ জোটবদ্ধ হয়ে বাড়ির পাশের গাছ কাটার চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে তারা হামলা চালিয়ে ওই শিক্ষক ও তার ভাতিজাকে মারধর করে নিলাফুলা জখম করে। একপর্যায়ে তারা বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ঘর ভাংচুর ও গাছপালা কেটে ফেলে, ঘর থেকে ট্রাংকে রক্ষিত ৩.৫ (সাড়ে তিন ভড়ি) ওজনের স্বর্ণালংকার (মূল্য- ৩,৫০,০০০ টাকা) ও ঘরে থাকা ৫০,০০০ টাকা ছিনিয়ে লুট করে। এতে মোট প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
বুধবার (২২ মার্চ) ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক ধামরাই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ ও মামলা (নং- ৪৯) দায়ের করেন। এ মামলায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে।
ধামরাই থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি অপারেশন) নির্মল কুমার দাস বলেন, জমি ও বাড়ি দখল চেষ্টা এবং মারধরের মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের ধরতেও অভিযান চলছে।
ধামরাইয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার বলেন, ‘মাঠের আবেদন করা হলেও এখনো মাঠ হিসেবে সেটি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ওই স্থানটিতে ব্যক্তিগত জমি রয়েছে বলে শুনেছি।’
বিএনএ/ইমরান, এমএফ