28 C
আবহাওয়া
৩:৪৫ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » স্কাউটিং ও স্মার্ট বাংলাদেশ!

স্কাউটিং ও স্মার্ট বাংলাদেশ!

স্কাউটিং ও স্মার্ট বাংলাদেশ!

।। মিজানুর রহমান মজুমদার ।।

স্কাউটিং বিশ্বব্যাপী একটি যুব সংস্থা। ১৯০৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল যুক্তরাজ্য থেকে স্কাউট আন্দোলন শুরু করেন। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত ল্যাফটেনেন্ট জেনারেল।

সেবাই মানব জীবনের একমাত্র ব্রত। মানুষের হৃদয়ের সমস্ত তৃপ্তি, সুখ এবং সাফল্য সেবার মধ্যে নিহিত। মাত্র ২০ জন কিশোর নিয়ে প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজ বিশ্বের ১৬৯টি দেশে স্বীকৃতভাবে ৪০ মিলিয়নের অধিক স্কাউটার রয়েছে, যারা বিশ্বের আনাচে-কানাচে নিরলসভাবে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত।

স্কাউটিং-এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিশু, কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সামাজিক গুণাবলী উন্নয়নের মাধ্যমে তাদেরকে পরিবার, সমাজ, দেশ তথা বিশ্বের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। স্কাউট কার্যক্রমে কতগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। হাতে-কলমে কাজ শেখা; ছোট-দল পদ্ধতিতে কাজ করা; ব্যাজ পদ্ধতির মাধ্যমে কাজের স্বীকৃতি প্রদান; মুক্তাঙ্গনে কাজ সম্পাদন, তিন আঙ্গুলে সালাম ও ডান হাত করমর্দন, স্কাউট পোশাক, স্কার্ফ ও ব্যাজ পরিধান এবং সর্বদা স্কাউট আইন ও প্রতিজ্ঞা মেনে চলা। স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা লর্ড ব্যাডেন পাওয়েলের নির্দেশিত নিয়ম অনুসারে অনুশীলন, প্রতিজ্ঞাপাঠ ও দীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে স্কাউট আন্দোলনের সদস্য হতে হয়।

স্কাউটিং এমন একটি আন্তর্জাতিক, শিক্ষামূলক ও অরাজনৈতিক আন্দোলন- যার মাধ্যমে শিশু, কিশোর ও যুবকদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, বুদ্ধিভিত্তিক ও আধ্যাত্মিকভাবে যোগ্য করে গড়ে তোলা হয়।

এটি বিশ্বের একমাত্র সংগঠন, যেখানে যোগদান করতে হলে আত্মশুদ্ধি পালন করতে হয়। স্কাউটিংয়ে সব বদঅভ্যাস পরিত্যাগ করার শপথ নিতে হয়। মদ, জুয়া, যৌনতা, শঠতা ও নাস্তিকতা থেকে দুরে থাকার পাশাপাশি স্কাউট-প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হয়।

বর্তমানে বিশ্বে ১৬৯টি দেশে স্কাউটং কার্যক্রম চালু আছে যার মধ্যে ৮৪টি দেশে গার্ল-ইন-স্কাউটিং রয়েছে। এসব বিবেচনায় স্কাউটিং আজ বিশ্বের সর্ববৃহৎ শিক্ষামূলক যুব আন্দোলন হিসেবে স্বীকৃত। স্কাউটিং তারাই করবে যারা সমাজ ও রাষ্ট্রের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার মানসিকতা রাখে। এক কথায় দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশের মানুষকে ভালোবাসার নামই স্কাউটিং।

বিশ্বে স্কাউটদের সংখ্যা চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৭ লক্ষাধিক স্কাউট রয়েছে।

সমগ্র বাংলাদেশের ৬৪টি প্রশাসনিক জেলা, ৫টি মেট্রোপলিটন এলাকা এবং ৪৮৯টি উপজেলায় স্কাউটিং এর সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ১৯১১ সালে অবিভক্ত উপমহাদেশে স্কাউট আন্দোলনের সুত্রপাত। আমাদের দেশের স্কাউট আন্দোলনের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ স্কাউটস নব উদ্যম ও প্রেরণা নিয়ে অগ্রযাত্রা শুরু করে। দেশে শিশু-কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের বিভিন্ন স্তর বিশিষ্ট ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, সৎ, চরিত্রবান, কর্মোদ্যোগী, সেবাপরায়ণ এবং সর্বোপরি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্কাউটস নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ সামাজিক অবস্থা ও মূল্যবোধ অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতি গঠনে স্কাউট আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির ১১১নং আদেশ বলে ১৯৭২ সালে “বাংলাদেস বয় স্কাউট সমিতি” নামে স্কাউটিং কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১৯৭৮ সালে ১৮ জুন জাতীয় কাউন্সিলের পঞ্চম সভায় বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতির নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয় “বাংলাদেশ স্কাউটস”।

১৯৯৪ সালে দেশে গার্ল-ইন-স্কাউটিং-এর কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডার গার্টেন স্কুল, এবতেদায়ী মাদ্রাসা ও সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ১৯৯৫ সাল থেকে কাবিং সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ থেকে ১০+ বছর বয়সী বালক বালিকাদের মধ্যে কাবিং এর দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটছে।

নিরক্ষর ও মাদকমুক্ত সমাজ, সুন্দর পরিবেশ তৈরিতে এবং ছিন্ন মানুষের সেবা ও সহযোগিতা করার জন্য স্কাউটরা সমাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে দেশের সরকার ও সাধারণ মানুষের সমর্থন পেতে সক্ষম হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর স্মাট বাংলাদেশ গড়তে স্কাউটরা নিজেদের তৈরি করার অদম্য কর্মস্পৃহা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

Loading


শিরোনাম বিএনএ