ধর্ম ডেস্ক: প্রতিটি মুমিন প্রিয়নবী (স.)-এর সঙ্গ পাওয়ার সুপ্ত কামনা হৃদয়ে লালন করেন। এই আকুলতা থেকেই দেখবেন হজযাত্রীরা মদিনায় নবীজির রওজায় গিয়ে হাজির হন। তাঁর জিয়ারতের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করেন। জান্নাতেও প্রিয়নবীজির সান্নিধ্য লাভ করবেন নবীপ্রেমিকরা। এ আকাঙ্ক্ষা পূরণে কিছু আমলের কথা বলা হয়েছে হাদিস শরিফে। যেসব আমল পালন করলে মুমিন ব্যক্তি জান্নাতে তাঁর সান্নিধ্য লাভ করবেন। যার কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো।
বেশি বেশি সেজদা করা
হজরত রাবিআহ ইবনে কাব (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে রাতযাপন করতাম। একদা আমি তাঁর অজু ও ইস্তিঞ্জা করার জন্য পানি আনলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কিছু চাওয়ার থাকলে চাইতে পারো। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার সঙ্গে জান্নাতে থাকতে চাই। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ওটা ছাড়া আর কিছু চাও কি? আমি বললাম, এটাই চাই। রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তাহলে বেশি বেশি সেজদার দ্বারা তুমি এই ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করো। (মুসলিম: ৪৮৯)
উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, একবার রাসুল (স.) বললেন, আমি কি তোমাদের ওই ব্যক্তি সম্পর্কে অবগত করব না যে কেয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে? সাহাবায়ে কিরাম চুপ রইলেন। রাসুল (স.) একই প্রশ্ন করলেন দুই বা তিনবার। তখন তাঁরা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, সে হলো ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। (মুসনাদে আহমদ: ৬৭৩৫)
নবীজিকে ভালোবাসা
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী কারিম (স.)-কে জিজ্ঞাসা করল, কেয়ামত কখন হবে? তিনি বলেন, তুমি কেয়ামতের জন্য কী জোগাড় করেছ? সে বলল, কোনোকিছু জোগাড় করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসি। তখন তিনি বলেন, তুমি তাঁদের সঙ্গেই থাকবে, যাঁদের তুমি ভালোবাসো। আনাস (রা.) বলেন, নবী কারিম (স.)-এর কথার দ্বারা আমরা এত আনন্দিত হয়েছি যে অন্যকোনো কথায় এত আনন্দিত হইনি। আনাস (রা.) বলেন, আমি নবী কারিম (স.)-কে ভালোবাসি এবং আবু বকর, ওমর (রা.)-কেও। আশা করি তাঁদের প্রতি আমার ভালোবাসার কারণে তাঁদের সঙ্গে জান্নাতে বসবাস করতে পারব, যদিও তাঁদের আমলের মতো আমল আমি করতে পারিনি। (মুসলিম: ২৬৩৯)
বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, শুনে রাখো, যে আমার ওপর বেশি পরিমাণে দরুদ পাঠ করবে নিশ্চয় কেয়ামতের দিন সে আমার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৩২৪৪৭)
আল্লাহভীতির ওপর জীবন-যাপন করা
হজরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) যখন তাকে ইয়েমেনে পাঠান তখন তিনি তাকে বিদায় দিতে বের হন। মুয়াজ (রা.) সওয়ারিতে চলছেন, রাসুল (স.) পায়ে হাঁটছেন আর অসিয়ত করছেন। অসিয়ত করা শেষ হলে রাসুল (স.) বললেন, হে মুয়াজ! সম্ভবত এই বছরের পর আমার সঙ্গে তোমার আর দেখা হবে না। হয়ত তুমি আমার মসজিদের পাশ দিয়ে হাঁটবে, আমার কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে! (কিন্তু আমার দেখা পাবে না) এই কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আসন্ন বিচ্ছেদ-বিরহে মুয়াজ (রা.) অঝোরে কাঁদতে শুরু করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (স.) মদিনার দিকে ফিরে তাকালেন এবং বললেন, আমার পরিবারের এই লোকেরা মনে করে, তারা আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। অথচ বিষয়টা এমন না; আমার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত হলো ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহভীতির জীবন অবলম্বন করে। সে যে কেউই হোক এবং যেখানেই অবস্থান করুক। (মুসনাদে আহমদ: ২২০৫২)
এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করা
হজরত সাহাল বিন সাদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব (তিনি তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন এবং এই দুটির মধ্যে তিনি সামান্য ফাঁক রাখেন)। (বুখারি: ৫৩০৪)
কন্যাসন্তান লালন-পালন করা
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন রাসুল (স.) বলেন, যে ব্যক্তি দুটি কন্যাসন্তানের ভরণপোষণ করবে আমি এবং সে এভাবে জান্নাতে থাকব। (মধ্যমা ও শাহাদাত আঙুল যেমন পাশাপাশি থাকে)। (তিরমিজি: ১৯১৪)
বোনদের প্রতিপালন করা
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, একবার রাসুল (স.) মধ্যমা ও শাহাদাত অঙ্গুলির দিকে ইশারা করে বলেন, যে ব্যক্তি দুই কন্যা বা দুই বোনের ভরণপোষণ করবে কিংবা তিন কন্যা বা তিন বোনের ভরণপোষণ করবে, যতক্ষণ না তাদের বিয়ে হবে কিংবা সে মৃত্যুবরণ করবে, আমি এবং সে জান্নাতে এভাবে (পাশাপাশি) থাকব। (ইবনে হিব্বান: ৪৪৭)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথ পালনের মাধ্যমে জান্নাতে প্রিয়নবী (স.)-এর সান্নিধ্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ