24 C
আবহাওয়া
১০:৩৪ অপরাহ্ণ - মে ৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৩৮ (বগুড়া-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৩৮ (বগুড়া-৩)

বগুড়া-৩

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে বগুড়া-৩ আসনের  হালচাল।

বগুড়া-৩ আসন 

বগুড়া-৩ সংসদীয় আসনটি আদমদিঘী ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৩৮ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আব্দুল মজিদ তালুকদার বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বগুড়া-৩ আসনে ভোটার  ছিলেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৬ শত ৮৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৪ শত ৬ জন। নির্বাচনে  বিএনপির আব্দুল মজিদ তালুকদার বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪০ হাজার ১ শত ৮৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর মোফাজ্জল হক।  দাঁড়ি পাল্লা প্রতীকে তিনি পান ২৯ হাজার  ৫শত ৬৩ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল গোলাম মাওলাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল গোলাম মাওলাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এই সংসদের মেয়াদ ছিল  মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির আব্দুল মজিদ তালুকদার বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম  সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ৪ শত ৯১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৮ শত ৫৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির আব্দুল মজিদ তালুকদার বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৫ হাজার ১শত ৪০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সোলাইমান আলী। নৌকা   প্রতীকে তিনি পান ৩৫ হাজার ৯ শত ২৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আব্দুল মোমিন তালুকদার বিজয়ী

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮ হাজার ৯ শত ৬৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮০ হাজার ২ শত ৪৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির আব্দুল মোমিন তালুকদার বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৪ হাজার ৫ শত ৩৩ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগ দিয়ে মনোনয়ন পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল গোলাম মওলা। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬০ হাজার ৭ শত ৬৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির  আব্দুল মোমিন তালুকদার  বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন  ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪ শত ৫৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৪ হাজার ১ শত ৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির  আব্দুল মোমিন তালুকদার  বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে  তিনি পান ১ লাখ ৪ হাজার ৬ শত ২২ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আনসার আলী মৃধা। আনারস  প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ৩ শত ১৬ ভোট।২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন   ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪ শত ৬৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৬ শত ৭ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। আওয়ামী লীগ এই আসনে কোন প্রার্থী দেয়নি। বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আব্দুল মহিত তালুকদার মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও তার প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যায়। নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শাহজাহান আলী তালুকদার, কোদাল প্রতীকে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির লিয়াকত আলী, টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ এর আব্দুল কাদের জিলানী, মোটর গাড়ী প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজরুল ইসলাম, আপেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আফজাল হোসেন, ডাব প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মজিদ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭ শত ৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির  মাসুদা মোমিন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ৫ শত ৮০ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

আদমদীঘি ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৩ এর বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার। তিনি এবারও মনোনয়ন চাইবেন। একই সঙ্গে মহাজোটের সমর্থনও চাইবেন জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন  আদমদীঘি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অজয় সরকার, সান্তাহার ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মহিত তালুকদার, বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল, বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরী হিরু, শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক লায়ন ফরিদ আহম্মেদ, বিএনপি নেতা ও সান্তাহার পৌরসভার সাবেক মেয়র ফিরোজ মো. কামরুল হাসান, বিএনপি নেতা আতাউর রহমান খান মুক্তা।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একাদশ নির্বাচনের প্রার্থী শাহজান আলী তালুকদার আদমদীঘি উপজেলা নেতা আবদুর রাজ্জাক, বিএনএফ থেকে আব্দুল কাদের জিলানী, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির  লিয়াকত আলী দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতাকারি আব্দুল মজিদ,  নুরুল ইসলাম ও আফজাল হোসেন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায় বগুড়া–৩ আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদে টানা বিএনপি প্রার্থীরা বিজয়ী হন। শুধু  দশম, একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি প্রার্থী  বিজয়ী হন।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও  অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর বগুড়া-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৭.৯৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২১.৩৪%, বিএনপি ৩৪.২৩ %, জাতীয় পার্টি ১৮.৬৫%, জামায়তে ইসলামী ২৫.১৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৬০% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৮০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৪.১৩ %, বিএনপি ৪৩.৭৬ %, জাতীয় পার্টি ১৪.৯৬%, জামায়াত ইসলামী ১৬.৫৪%, স্বতন্ত্র ও  অন্যান্য ০.৬১% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.২৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৩.৭১%, ৪ দলীয় জোট ৫২.৪৫ %, জাতীয় পার্টি ১৩.৫১%,স্বতন্ত্র ও  অন্যান্য ০.৩৩% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯০.৫৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় মহাজোট ১১.২১%, ৪ দলীয় জোট ৪৯.১১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৩৯.৬৮% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বগুড়া-৩ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই মজবুত। এরপর রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা তলানীতে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৩৮ নম্বর  বগুড়া-৩ আসনটিতে বিএনপি প্রার্থীই বিজয়ী হবেন তা নিশ্চিত করে বলা যায়।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ