28 C
আবহাওয়া
১:৩৭ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » গ্রামে বেড়াতে গিয়ে ফেরা হলোনা মা-ছেলের

গ্রামে বেড়াতে গিয়ে ফেরা হলোনা মা-ছেলের

গ্রামে বেড়াতে গিয়ে ফেরা হলোনা মা-ছেলের

।। আজিজুল হাকিম ।।

বিএনএ, ঢাকা: নেত্রকোনায় গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন স্ত্রী-সন্তানেরা। রাতে ঢাকার উদ্দ্যেশে রওনা দেন তারা। তাদের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয় রাত সাড়ে ১২টার দিকে তারা আমাকে রেলস্টেশন থাকতে বলে। আমি বললাম থাকবো। কিন্তু সকালে মিজানুর রহমান খবর পান, যে ট্রেনে স্ত্রী-সন্তানেরা ফিরছিলেন সেই ট্রেনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত গিয়ে স্ত্রী নাদিয়া তিন বছরের সন্তান ইয়াসিনকে কোলে নিয়ে বসে থাকতে দেখেন মিজানুর। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ নেই তাদের। আগুনে পুড়ে মারা গেছেন তারা। তাদের পুরো শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

স্ত্রী নাদিয়া আক্তার পপি (৩৫) ও ছেলে ইয়াসিনের (৩) মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা জানান মিজানুর রহমান।

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয় দূবৃর্ত্তরা। এতে নিহত হন গৃহবধূ নাদিয়া আক্তার পপি ও তার তিন বছরের শিশুসন্তান ইয়াসিনসহ চারজন। মঙ্গলবার ভোর ৫টার পরে এ আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তাদের মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের মর্গে নিয়ে আসে রেলওয়ে থানা পুলিশ।

 

গ্রামে বেড়াতে গিয়ে ফেরা হলোনা মা-ছেলের
মিজানুরের আহাজারি

নিহত শিশুর বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি পেশায় হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী। নেত্রকোনায় গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল আমাদের পরিবারের নয়জন সদস্য। ব্যবসার কাজের জন্য আমার যাওয়া হয়নি তাদের সাথে। পরিবারের পাঁচজন সদস্য এয়ারপোর্ট রেল স্টেশনে নেমে যায়। তখন ট্রেনে ছিল আমার শ্যালক হাবিবুর রহমান, আমার স্ত্রী নাদিয়া আক্তার পপি, আমার বড় ছেলে মাহিম এবং আমার তিন বছরের আদরের ছেলে ইয়াসিন।’

মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘আমার শ্যালক হাবিব আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, তেজগাঁও রেল স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছার একটু দূরেই নাকি ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে তেজগাঁও রেল স্টেশনে ট্রেনটি থেমে গেলেও আগুন জ্বলতে থাকে। ট্রেন থেকে শ্যালক ও আমার বড় ছেলে নামতে পারলেও ধোঁয়ার কারণে ওই জ্বলন্ত টেনে আটকা পড়ে আমার স্ত্রী ও ছোট ছেলে। সে আর কি বলবো! বীভৎস অবস্থা। ভাইরে! আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, আমার শিশু সন্তানকে কোলে জড়িয়ে ধরে আছে তার মা। তাদের সমস্ত শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’

আরও পড়ুন: ট্রেনে ফের অগ্নিসংযোগ, ৪ জনের মৃত্যু

স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি কী অপরাধ করেছি তা আল্লাহই ভালো জানে। কেন যে এমন হয়ে গেল কিছুই তো জানি না। ভাই আমার কোনো অভিযোগ নাই, আমি বিনা ময়নাতদন্তে আমার সন্তান আর স্ত্রীর মরদেহ নিয়ে যেতে চাই। আপনারা আমাদেরকে একটু সহায়তা করেন।’ এই চলমান রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে আমাদেরকে এইভাবে মরতে হবে। আমি আর কি বলবো ভাই আমার সব শেষ হয়ে গেছে।

ছেলে ও স্ত্রীর মরদেহ নেওয়ার অপেক্ষায় হাসপাতালের মর্গে রয়েছে মিজানুর রহমান।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, ট্রেনে আগুনে ঘটনায় নিহত চারজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে নিয়ে আসে রেলওয়ে থানা পুলিশ। এদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। দগ্ধের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাকি দুজনের পরিচয় জানা যায়নি। তবে প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

বিএনএনিউজ/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ