বিএনএ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ( ডিসি ) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বিভিন্ন গণমাধ্যমে আইনজীবী সমিতির নামে মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন, তা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন। বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টায় জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে সমিতির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন বলেন, ১৯৭৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর ১৪৮৮৮ নং রেজিষ্ট্রিকৃত লিজ দলিল মূলে চট্টগ্রাম কোর্টহিলের সরকারি খাস জমি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বরাবরে হস্তান্তর করেছে সরকার। আমাদের লিজকৃত জমি থেকে ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম স্টাম্প ভেন্ডার সমিতিকে লীজ দেয়ার চেষ্ট করে তৎকালীন জেলা প্রশাসক। এ বিষয়ে আমরা আদালতের মামলা করি। মামলটি ২০০৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলা সমিতির রায় হয়। সমিতির লিজপ্রাপ্ত জমিতে বেআইনি অনুপ্রবেশ না করার জন্য জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার ভূমির বিরুদ্ধে ২৪০/০৫ নং ঘোষণা ও স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মোকাদ্দমায় নিষেধাজ্ঞা পায় সমিতি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি ১২৮ বৎসরের একটি পেশাজীবী সংগঠন। বর্তমানে সংগঠনের সদস্য আইনজীবী প্রায় ৬ হাজার, শিক্ষানবীশ প্রায় ৭ হাজার ও আইনজীবীর সহকারীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। সমিতির ভবনসমূহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুদানে এবং সমিতির নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত। এছাড়া ভবনগুলো সিডিএ অনুমোদিত। এসব ভবন নির্মাণের সময় কোনও পাহাড় বা টিলা কাটা হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। দেশের অনেক প্রতিথজশা আইনজীবী অত্র সমিতির সদস্য ছিলেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক সকল সংগ্রামে অত্র সমিতির বিজ্ঞ সদস্যদের অবদান দেশব্যাপী স্বীকৃত। দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে রয়েছে এ সমিতির আত্মার বন্ধন। ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন স্বৈরশাসকের গুলির মুখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মানবঢাল বানিয়ে জীবনরক্ষায় এগিয়ে এসেছিল এ সমিতির বিজ্ঞ সদস্যবৃন্দ। ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের মান, মর্যদা, সম্মান ক্ষুন্ন করার অপপ্রয়াস জেলা প্রশাসন চালিয়ে যাচ্ছে তা সত্যিই দুঃখজনক এবং পাশাপাশি উদ্দেশ্যমূলকও বটে। সারাদেশ তথা চট্টগ্রামের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে ডিসি।
ডিসির বক্তব্যের সঙ্গে দেশের বাস্তবতার মিল নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিসি সাহেব যে কাজ করছেন তা নীতিবহির্ভূত। তিনি আইনজীবী সমিতির মান সম্মান ক্ষুন্ন করেছেন। আইনজীবী সমিতির ভবনসমূহ যথাযথভাবে অনুমোদিত নয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছে। পরীর পাহাড় এলাকায় সিডিএ কোনও ভবনের অনুমোদন দেওয়ার পূর্বে যেন জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নেওয়া হয় বলেও মন্তব্য করেছেন ডিসি। যা তার এখতিয়ার বহির্ভূত। শত বছরের ঐতিহ্যে লালিত চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সম্মান, মর্যাদা ক্ষুন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসনের এহেন ঘৃণিত প্রয়াস দুঃখজনক। পানি সংযোগ, গ্যাস সংযোগ, বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন বিভিন্ন দফতরে পত্র প্রেরণ করেছে। প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ভবন যাতে নির্মাণ হতে না পারে, সেজন্যই জেলা প্রশাসন থেকে এমন ন্যাক্কারজনক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির স্থাপনাসমূহকে উদ্দেশ্য করে জেলা প্রশাসন গত ২ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। অথচ কোর্ট বিল্ডিং এর চারপাশে সমিতির কোনও অবৈধ স্থাপনা নাই। কোনও ছাত্রাবাসও নাই। দোকানপাট, খাবার হোটেল, মুদি দোকান, বস্তি ইত্যাদি স্থাপনা জেলা প্রশাসন কর্তৃক লিজ প্রদানকৃত জায়গায় ও কিছু অংশ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক ভাড়ায় লাগানো হয়েছে। যা থেকে তারা মাসিক ও দৈনিক ভাড়া উত্তোলন করে। এসব স্থাপনায় অনৈতিক কাজ, মাদক ব্যবসা ইত্যাদি হয়ে আসছে, যা বন্ধে জেলা প্রশাসন থেকে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এ সুযোগে ২০০৫ সালে কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় জঙ্গি হামলা হয়েছিল।
বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরা আইনজীবী নেতারা কখনোই অপসারণ করেনি দাবি করে তিনি বলেন, আইনজীবী ভবন সংলগ্ন রাস্তার বৈদ্যুতিক পোল, ব্রিজ ইত্যাদিতে এখনও প্রশাসনের সিসিটিভি ক্যামেরা বিদ্যমান রয়েছে। আদালত এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে সমিতির প্রত্যেকটি ভবনের সম্মুখে নিজস্ব ব্যয়ে ২০১৫ সাল থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। আইনজীবী সমিতি নিজস্ব অর্থায়নে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন স্থাপন করে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সংযোগ নিয়ে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল হক, সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, বদরুল আনোয়ার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনতোষ বড়ুয়া, আব্দুর রশিদ ও মুজিবুল রহমান প্রমুখ।
বিএনএনিউজ২৪.কম/আমিন