23 C
আবহাওয়া
১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ১৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » জঙ্গিবাদের টোপে কক্সবাজারের দুই কিশোর

জঙ্গিবাদের টোপে কক্সবাজারের দুই কিশোর

জঙ্গিবাদের টোপে কক্সবাজারের দুই কিশোর

বিএনএ, কক্সবাজার : মেধাবী ছাত্র হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিতি রয়েছে সাদমান আরেফিন ফাহিমের (২১)। সফলতার সঙ্গে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন কক্সবাজারের রামু উপজেলার দক্ষিণ শ্রীকোল গ্রামের বাসিন্দা এই তরুণ। তার বাবা হামিদুল হক প্রবাসফেরত ব্যবসায়ী। এত সফলতার মাঝেই হঠাৎ গত ২৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ হয়ে যান ফাহিম। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান পায়নি পরিবার। নিখোঁজের ২৩ দিন পর খবর আসে দেশের নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহদীর কাফেলা’য় যোগ দিয়েছেন তিনি।

একইভাবে ২৩ দিন আগে নিখোঁজ হন ফাহিমের বন্ধু রামু উপজেলার মধ্যম মেরুংলোয়া এলাকার ইরতেজা হাসনাত লাবিব (২২)। তার মা-বাবা দুজনই সরকারি স্কুলের শিক্ষক। পরিবারটির বেশ সুনামও আছে এলাকায়। মা-বাবার মতো মেধাবী হিসেবে লাবিবও বেশ পরিচিত। তবে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সহজভাবে নিচ্ছেন না এলাকাবাসী। রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকলে শাস্তিও চান তারা। একই কথা বলছে ফাহিম ও লাবিবের পরিবার। লাবিবের অপরাধের দায় নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তার বাবা স্কুলশিক্ষক এনামুল হক।

গত সোমবার ‘ইমাম মাহদীর কাফেলা’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য সন্দেহে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার নির্জন এলাকা থেকে ১৭ জনকে আটক করে ‘কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম’ (সিটিটিসি)। তাদের মধ্যে দুজন ফাহিম ও লাবিব।

ওই দিন রাতে ‘সিটিটিসি’র ইউনিটপ্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল, সেই তথ্যের সঙ্গে আস্তানার মিল আছে। নতুন এই সংগঠনটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। গত শনিবার ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। পরে সোমবার আরও ১৭ জনকে আটক করা হয়। আটক সবাই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।’

মুখোশের আড়ালে জঙ্গি

ফাহিম-লাবিবরা কয়েক মাস ধরে ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন না। তবে ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপে তারা বেশ সক্রিয় ছিলেন। এলাকায় তাদের চলাফেরাও সীমিত ছিল। সহপাঠীদের সঙ্গেও তেমন কথা বলতেন না তারা। ফাহিমের এক সহপাঠী তাকে ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে জঙ্গি হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘গত রমজানের আগে থেকে ফাহিমের মধ্যে পরিবর্তন চোখে পড়ে। নিজেকে ভালো মানুষ দাবি করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথা বলা শুরু করে। পরে কলেজে আসাও কমিয়ে দেয়। আমার সঙ্গে দেখা হলেও কথা কম বলত। অন্য ১০ জন সহপাঠীর মতো ছিল না। নিজেকে খুব আলাদা করে রাখত।’

জঙ্গি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিললে শাস্তি চান ফাহিমের মা  

ফাহিম তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। ২০২১ সালে রামুর খিজারী উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেছেন তিনি। মাঝখানে এক বছর পড়েননি। কক্সবাজার সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন তিনি। পড়াশোনার সুবাদে কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ার ছড়া এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি পাঠাও কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি করতেন তিনি। বাবা হামিদুল হক ২১ বছর সৌদিপ্রবাসী ছিলেন। মা হাসিনা বেগম গৃহিণী। পেশায় বাবা সুতার ব্যবসায়ী। নিজেদের দোতলা বাড়ির নিচেই দোকান আছে হামিদুলের।

জানতে চাইলে হামিদুল হক বলেন, ‘গত ২৬ জুলাই কাজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। তার পর থেকে নিখোঁজ। ফোনও বন্ধ। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছি। তিনি ধৈর্য্য ধরতে বলেছিলেন। তাই অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু ছেলে ফেরেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফাহিম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। শান্ত স্বভাবের। কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলাও ছিল না। পড়াশোনার জন্য চাপ দিতাম। অন্য কোনো বিষয়ে তার সঙ্গে কখনো কিছু হয়নি। কীভাবে এখানে গেল, তা আমরা কখনো বুঝতে পারিনি।

বিএনএ/ এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ