আলতাফ মাহমুদ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলতে পারি’ গানটি নতুন করে সুর দিলেন। সেই সুরটা এতো হিট করবে তা আমি বুঝতে পারিনি। বিভিন্ন সভা-সমিতিতে তিনি সেটা গাইতে শুরু করলেন। দেখা গেল গানটি একুশের প্রভাতফেরিতে উঠে এসেছে। তারপর আমার বন্ধু ও সহপাঠী জহির রায়হান যখন ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে এটাকে ব্যবহার করেন তখন এটি আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর এই অমর সংগীত আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের মাতৃভাষাপ্রেমী মানুষের অহংকার ও গৌরবের বিষয়। এটি আজ শুধু একটি গান বা সুর নয় বাঙালি জাতির প্রাণ স্পন্দন, এক অমর ইতিহাস।
আবদুল গাফফার চৌধুরী সরাসরি ভাষা-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। একুশে ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকা কলেজের প্রতিনিধি হিসেবে ঐতিহাসিক আমতলার সভা ও মিছিলে অংশ নেন। একুশের রক্তাক্ত ঘটনার তিনি প্রত্যক্ষ সাক্ষী।
২২ ফেব্রুয়ারি গায়েবানা জানাজা ও শোক মিছিলেও তিনি শরিক হন। মিছিলে গুলি হলে তিনি ও তাঁর সাথীরা কার্জন হলে ঢোকার জন্য লোহার বেড়া অতিক্রম করার সময় পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। পুলিশ আবদুল গাফফার চৌধুরীর পায়ে লাঠিচার্জ করে টেনে কার্জন হলের ভিতর নিয়ে যায়। ডান পায়ে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফেরার পর দেখতে পান ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁর পায়ের কাছে বসে পায়ের মধ্যে বরফ ঘষে দিচ্ছেন।
পায়ের ব্যথা নিয়ে মেডিকেল কলেক হাসপাতালে ভর্তি হন এবং একমাস হাসপাতালে ছিলেন। ভাষা-আন্দোলনে জড়িত থাকার অপরাধে ঢাকা কলেজ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এবং কালো তালিকার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ভাষা-আন্দোলন ও অমর একুশের ইতিহাসে আবদুল গাফফার চৌধুরীর নামটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
সূত্র: যারা অমর ভাষা সংগ্রামে, লেখক: এমআর মাহবুব
সম্পাদনায়: মনির ফয়সাল
পড়ুন আগের পর্ব: ভাষা সৈনিক(১০) আবদুল গাফফার চৌধুরী পর্ব : ০২