বিএনএ,ডেস্ক: আগামী ২০ জানুয়ারি আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গেল ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর প্রথম মেয়াদের মতো এবারও একান্ত অনুগত ও পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে প্রশাসন সাজাচ্ছেন এ রিপাবলিকান নেতা। এখন পর্যন্ত যাঁদের বাছাই বা মনোনীত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী এবং বিভিন্ন খাতের নামকরা ব্যক্তি রয়েছেন। তুলনামূলক স্বল্প পরিচিত ব্যক্তিও আছেন এই তালিকায়।
রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র: ট্রাম্প প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ যেসব ব্যাক্তি দায়িত্ব পালন করবেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র। ৭০ বছর বয়সী এ ব্যাক্তি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
তবে খ্যাতিমান এ মার্কিন রাজনীতিককে নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। করোনাভাইরাসের টিকার বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। এ নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বও প্রচার করেছেন আর এফ কে জুনিয়র। করোনার টিকা প্রাণঘাতী বলেও দাবি করেছেন তিনি। এছাড়া শৈশবে টিকা প্রতিবন্ধিত্ব ডেকে আনতে পারে এমন ধারণাও ছড়িয়েছিলেন তিনি।
ইলন মাস্ক: নতুন ‘সরকারি দক্ষতা’বিষয়ক বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ইলন মাস্ককে। তিনি বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ও ট্রাম্প–ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের একজন। ট্রাম্পের আরেক ধনাঢ্য সহযোগী বিবেক রামাস্বামীও তার সঙ্গে কাজ করবেন। মাস্ক জানিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য ফেডারেল সরকারের ৭ ট্রিলিয়ন (৭ লাখ কোটি) ডলারের বাজেট থেকে ২ ট্রিলিয়ন (২ লাখ কোটি) ডলারের খরচ কমানো।
মার্কো রুবিও: ট্রাম্প প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করবেন মার্কো রুবিও। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার লড়াই জোরালো হওয়ার মধ্যে এই শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিককে সঙ্গে নিচ্ছেন ট্রাম্প। রুবিও ফ্লোরিডার সিনেটর। কিউবান অভিবাসী বাবা–মায়ের সন্তান রুবিও ইসরায়েলের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক হিসেবে ব্যাপক পরিচিত।
পিট হেগসেথ: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন পিট হেগসেথ। আমিরকার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের উপস্থাপক ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল গার্ডের সাবেক এ সদস্য বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব নেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের প্রায় ২৯ লাখ কর্মীকে তদারকী করবেন তিনি।
মাইক ওয়ালৎস: কংগ্রেস সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কর্মকর্তা মাইক ওয়ালৎস ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয়েছেন। হোয়াইট হাউসের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন তিনি। ওয়ালৎস চীন ও রাশিয়াবিরোধী হলেও ইউক্রেনে মার্কিন সমর্থন কমিয়ে আনার পক্ষে।
ডগ বারগাম: ৬৮ বছর বয়সী ডগ বারগাম হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, নর্থ ডাকোটার গভর্নর বারগামকে তিনি এ পদের দায়িত্ব দিচ্ছেন। ধনাঢ্য বারগাম সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের একজন সাবেক নির্বাহী। বারগাম প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে একসময় রিপাবলিকান পার্টি থেকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। পরে মনোনয়নের দৌড় থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন। ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেন।
জন র্যাটক্লিফ: যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পরিচালক হচ্ছেন জন র্যাটক্লিফ। তিনি ট্রাম্পের প্রথম দফার প্রেসিডেন্ট মেয়াদে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ছিলেন ।
তুলসী গ্যাবার্ড: হাওয়াই থেকে নির্বাচিত সাবেক কংগ্রেস সদস্য তুলসী গ্যাবার্ডকে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হিসেবে বেছে নিয়েছন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে দ্বিতীয় মেয়াদে সমর্থন দিতে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ ত্যাগ করেছিলেন গ্যাবার্ড। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হিসেবে গ্যাবার্ড আমেরিকার ১৮টি গোয়েন্দা সংস্থাকে সমন্বয় করবেন।
ম্যাট গেৎস: কট্টর রিপাবলিকান নেতা ম্যাট গেৎস ট্রাম্প প্রশাসনে অ্যাটর্নি জেনারেল হবেন। তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আছে। নারী পাচারের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়নি। গেৎস নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।
ক্রিস্টি নোয়েম: ট্রাম্পের প্রশাসনে ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’বিষয়ক মন্ত্রী হবেন সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েম। করোনা মহামারির সময় নিজের অঙ্গরাজ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার বিরোধিতা করে তিনি জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলেন।
টম হোম্যান: আমিরকার সীমান্ত দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবীণ অভিবাসন কর্মকর্তা টম হোম্যানকে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত রোববার ঘোষণা দেন, হোম্যান হবেন তাঁর দ্বিতীয় দফার প্রশাসনের ‘সীমান্ত জার’।
এলিস স্টেফানি : নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য এবং ট্রাম্প ও ইসরায়েলের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত এলিস স্টেফানিককে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প। স্টোফিনক ২০১৪ সালে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩০ বছর। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আর কোনো নারী এত কম বয়সে আইনসভার সদস্য হননি।
মাইক হাকাবি: ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মাইক হাকাবিকে। তাঁকে নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য হলো, ‘আরকানসাসের সাবেক এই গভর্নর একজন খ্রিষ্টান যাজক থেকে রাজনীতিবিদ হয়েছেন। তিনি ইসরায়েল ও ইসরায়েলের জনগণকে ভালোবাসেন। একইভাবে ইসরায়েলের জনগণও তাঁকে ভালোবাসেন।’
বিএনএনিউজ/ আরএস