।। কাইমুল ইসলাম ছোটন ।।
বিএনএ, রাঙামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটির পরিবেশ ও মাটি ফল চাষের জন্য অনেক উপযোগী। এখানে রয়েছে কৃষি ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনার সুযোগ। এবার টিসা ফল চাষে সফলতা দেখিয়েছেন কাপ্তাই রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। যার মাধ্যমে বদলে যাবে পাহাড়ের অর্থনীতি।
টিসা ফল বা এগ ফ্রুট (Egg fruit) বা ডিম ফল নামে পরিচিত। এর উৎপত্তি মূলত দক্ষিণ মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার অঞ্চলে। ভিটামিন, মিনারেল ও ওষধি গুণ সমৃদ্ধ এই ফলের জাত বাংলাদেশের জন্য একটি মাইনর ফ্রুট বা অপ্রচলিত জাত। যা তৈরি করছে বিপুল সম্ভাবনা।
জানা গেছে, ৪ থেকে ৫ বছরের একটি গাছে গড়ে ৪৫০-৫০০ টি ফল ধরে। যার ওজন গড়ে ১৭০-১৯৫ গ্রাম পর্যন্ত হয়। প্রতি গাছে ফলন হয় ৬৫ হতে ৭০ কেজি। এই ফলের ভক্ষণযোগ্য অংশ প্রায় ৮০ হতে ৮২%। প্রতিটি পরিপক্ব ফলের রং হলদে কালার হয়। এই ফল থেকে বিভিন্ন প্রকারের প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন- কেক, চকলেট, জুস এবং আইসক্রিম তৈরি করা যায়।
এমন তথ্য জানিয়েছেন রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ।তিনি জানান, ২০১৫ সালে এই ফলের চাষ করার পর ২০২১ সালে প্রথম ফুল এবং ফল আসে গাছে। গবেষণা কেন্দ্রের ২০টি গাছের প্রতিটিতে এখন ফলন হয়েছে। উচ্চ পুষ্টি-গুন সম্পন্ন এই ফলটির ভিতরের অংশ দেখতে অনেকটা সিদ্ধ ডিমের কুসুমের মতো। তাই এটাকে এগ ফ্রুটও বলা হয়। গত ৬ বছর যাবত এই গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এই ফল নিয়ে সফলতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলের আবহাওয়া, মাটি ও তাপমাত্রা এই ফল উৎপাদনের জন্য উপযোগী। তাই পাহাড়ের কোন রকম ক্ষতি না করে অব্যবহৃত জমিতে বানিজ্যিক ভাবে এই ফলের চাষ করে কৃষকরা লাভবান হতে পারে এবং আমাদের কৃষি অর্থনীতিতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হতে পারে।
গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, এই গবেষণা কেন্দ্রে টিসা ফলের উপর (২০২২- ২০২৩) সালে একটি পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরীক্ষায় ৪ টি জার্মপ্লাজম অর্ন্তভূক্ত করা হয় এবং এই ৪ টি জার্মপ্লাজম গবেষণা কেন্দ্রে রোপণ করা হয়। এই ফলটির স্বাদ এবং গন্ধ ডিমের মতো তাই এটাকে ডিম ফলও বলে। বংশবিস্তারের জন্য বীজ থেকে টিসা ফলের চারা উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রাফ্টিং বা কলম পদ্ধতির মাধ্যমে চারা উৎপাদন করতে আমরা সফল হয়েছি। আশা করছি, পাহাড়ে কৃষকদের কাছে এই টিসা ফলের চাষ ছড়িয়ে দিতে পারবো।
গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক সহকারি মো. সামছুদ্দোহা বলেন, কম বেমি এই ফলটি সারা বছর ফলন দেয়। বর্ষা মৌসুমের আগে বা পরে নরমাল সার দিলে হয় এই গাছগুলোতে। এই গাছে কোন রোগ হয় না এবং সহজে চাষাবাদ করা যায়। টিসা ফলের সঠিক চাষাবাদ করা গেলে পাহাড়ের অর্থনীতি বদলে যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
বিএনএ/এমএফ