23 C
আবহাওয়া
১:৩৬ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ১৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বাবার যে গুণসমূহ আমার মনে পুঁথিত আজও

বাবার যে গুণসমূহ আমার মনে পুঁথিত আজও

সৈয়দ মোস্তফা জামাল

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। লাখ লাখ দরুদ ও সালাম সর্বশেষ নবী ও সর্বশ্রেষ্ট পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রতি।

২০জুন২০২১। বিশ্ব বাবা দিবস। গত কয়েক বছর ধরে বাবা দিবসে বাবাকে নিয়ে কিছু লিখবো, ভাবতে ভাবতে দিবস পার হয়ে যায়। আর লেখা হয় নি। পবিত্র হাদীস শরীফে স্পষ্ট বলা রয়েছে, শেষ বিচার দিবসে যখণ মৃত ব্যক্তিদের পুনরায় জীবিত করা হবে এবং কবর থেকে তোলা হবে, সে দিন –প্রত্যেককে তাদের নাম ও পিতার নাম ধরে ডাকা হবে। সুতরাং প্রত্যেক সন্তানের কাছে বাবা বা পিতার গুরুত্ব  অসীম। হোক ইহকাল বা পরকাল।

আমার বাবা মরহুম সাংবাদিক সৈয়দ মোস্তফা জামাল এর জীবনের বিশেষ কিছু গুণাবলী ও বৈশিষ্ট নিয়ে কিছু আলোচনা করবো। যে সব আমি বা আমাদের পরবর্তী বংশধরদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।

১৯৩৪সালের ৮জানুয়ারি আমার বাবা বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কারাবরণকারী নেতা, স্বাধীন ভারতের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ঘনিষ্ট সহকর্মী আলহাজ্ব মৌলভী সৈয়দ ছোলতান আহমদের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মৌলভী সৈয়দ ছোলতান উপমহাদেশ থেকে বৃটিশদের হটিয়ে স্বাধীন ভারত প্রতিষ্ঠার অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টাও ছিলেন।

মৌলভী সৈয়দ ছোলতান আহমদ

উপমহাদেশে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করতে গিয়ে তিনি তৎকালীন বৃটিশ ভারতের প্রতিটি অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন। একই সাথে উপমহাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার গণজাগরণ সৃষ্টি, শিক্ষকদের সংগঠিত করতে গিয়ে তিনি অভূতপূর্ব সাড়া পান ভারতবাসীর কাছে।

নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি

বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ও আরবি ভাষায় ভাল দখল থাকায় মৌলভী সৈয়দ সোলতানের কাছে যে কোন কাজ খুব সহজ হয়ে যেত। ১৯২৩সালে কলকাতায় নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গঠিত  হলে মৌলভী সৈয়দ সোলতান প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। শেরে এ বাংলা একে ফজলুল হক ছিলেন এই সংগঠনের প্রথম সভাপতি।

সংগঠনটি আজও পশ্চিম বঙ্গ ও উত্তরপূর্ব ভারতের শিক্ষকদের বৃহত্তম সংগঠন।এদেশে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নামে পরিচিত।

বাবার কথা বলতে গিয়ে দাদার কথা এসে গেল। দাদি বাদ পড়বে কেন? দাদি মোসলেমা খাতুন ছিলেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার সুখছড়ি গ্রামের মৌলভী পাড়ার বিখ্যাত আলেম মৌলভী আবদুর রহমান ও সৈয়দা খাতুনের একমাত্র কন্যা। মোসলেমা খাতুনের দানকৃত বিশাল ভূমিতে বড়দীঘি সংলগ্ন স্থানে গড়ে উঠেছে  মসজিদ কবরস্থান ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা।

এ জীবনে অনেক লোক দেখেছি।অনেকজনের  নানা ব্যতিক্রমি গুণের কাহিনী শুনেছি। মানুষের ব্যতিক্রমি গুণ ও নি:স্বার্থ  সমাজসেবার কথা শুনলে আপ্লুত হই।

সৈয়দ মোস্তফা জামাল

কিন্ত বাবা সৈয়দ মোস্তফা জামালের একটি গুণের কথা অনেকের কাছে আশ্চর্য মনে হলেও আমার কাছে খুবই শিক্ষনীয় অনুকরণীয় মনে হয়। জীবদ্দশায় আমি অনেক পীর,বুজুর্গ,বড় আলেম-ওলামার সান্নিধ্য পেয়েছি। প্রিয় বাবা বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া করলেও ইসলাম বিষয়ক ভাল জ্ঞান চর্চা করতেন।তিনি সবকিছুর সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করতেন। বাবাকে দেখেছি, ‘’প্রতিদিন যতবার ঘর থেকে বাইরে কোন কাজে বের হতেন প্রতিবারই(কেবল দোকান-বাজারে যাওয়া ছাড়া) একপাতা পবিত্র কোরআন শরিফ বা অন্তত একটি সুরা এবং একপাতা অজিফা বা অন্তত একটা দরুদ অবশ্যই পড়তেন’। তিনি কখনো ধর্মান্ধ ছিলেন না।

সবাইকে ভাল কাজে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করতেন।
মানুষের নেতিবাচক দিকগুলো ভাবতেন না।দেখতেন না। সবাইকে ভাল কাজে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করতেন।সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া গ্রামস্থ মনজিলের দরগাহ নামক স্থানে কারিগরী ও কম্পিউটার শিক্ষাসহ একটা স্বয়ং সম্পূর্ণ এতিমখানা প্রতিষ্টার জন্য তৎকালীন যুবকদের উৎসাহিত করতেন।পবিত্র কোরআন শিক্ষা, ইসলামিক জ্ঞানার্জন ছাড়াও এতিমখানার ছাত্ররা যাতে ছাত্রজীবন শেষ করে কোন একটা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারে সে পরিকল্পনা দিতেন।

৮০দশকে বাবাকে দেখতাম সকালে নাস্তার জন্য দেয়া রুটির কয়েকটি এবং দোকান থেকে ক্রয় করে আনা নান টুকরো টুকরো করে প্রতিদিন সকালে পাখীদের খাবারের জন্য বাসার ছাদের উপর ফেলে রাখতেন।

জীবদ্দশায় বাবা প্রতিদিন পাঁচওয়াক্ত নামাজ আদায় শেষে মহানরব্বুল আলামিনের নিকট মোনাজাত করতেন এই বলে যে, ‘আমরা যাতে প্রত্যেকে প্রত্যেককে ক্ষমা করতে পারি, সে তওফিক দান করো,হাসিমুখে কলেমা পড়তে পড়তে যেন দুনিয়া থেকে যেতে পারি’।

‘হে আল্লাহ বুধবারে যদি রোগশোক বাড়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর মৃত্যু দিও ,শুক্রবার পবিত্র জুমার নামাজ শেষে যাতে জানাজা ও দাফন করা যায়’ আমিন।

মহান দাতা ও দয়ালু  বাবার ইচ্ছা পূরণ করেন

বাবা ঠিক যেভাবে আল্লাহতায়ালার কাছে মোনাজাতে কামনা করেছিলেন, মহান দাতা ও দয়ালু  বাবার ইচ্ছা পূরণ করেন। ২০০৪সালের ২২এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় উনসত্তর বয়সে কলেমা পাঠ করে করে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা।

বাবা ও দাদা দুজনেই স্বাধীন পেশায় বিশ্বাসী ছিলেন। দাদা শিক্ষকতার পাশাপাশি বার্মার ইয়াঙ্গুন, কলকাতার পত্রিকায় সংবাদ পাঠাতেন। বাবা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নানা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন(বিএফইউজে),ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন(ডিইউজে) এর নেতৃত্ব দিয়েছেন।পরে চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির প্রতিষ্টাতা পরিচালক ছিলেন।কয়েক দফায় ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এতক্ষণ দাদা ও বাবার কথা আমিই বলছিলাম। এবার শুনুন অন্যজনের কাছে।
চট্টগ্রাম সমিতি, ঢাকা

ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক কর্মকতা ও চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শোভন দন্ডীর প্রয়াত শিক্ষাবিদ ও কবি ওয়ালি মিঞা মাষ্টার ’চট্টগ্রাম সমিতি ও সৈয়দ মোস্তফা জামালকে’ নিয়ে  কবিতা লিখেছেন –

“ছৈয়দ মোস্তফা জামাল খাটেন বহুতর,

সমিতির কাজে তিনি যান ঘরে ঘর।

সেক্রেটারীর গুরুভার তিনি বহন করে,

দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি চার বৎসর ধরে।

সমাজকর্মী ছৈয়দ ছোলতান, জামাল তাঁর ছেলে

বসতি দেখবেন আছে মির্জাখীলে গেলে,

প্রাথমিক শিক্ষকদের খেদমত করিয়া

সত্তর বছর বয়স তাঁর গেল কাটিয়া।

জনাব ছোলতানের ছিল পর হিতে মন,

তাইত জামাল পিতারমত সমাজকর্মী হন ॥”

*(চট্টগ্রাম সমিতির ইতিহাস নিয়ে রচিত কবিতার অংশ বিশেষ এটি)

দাদা,দাদি,নানা-নানি,মা-বাবা,ভাই,বোন,শিশু পুত্রসহ আমার সকল পূর্বপুরুষ-মহিলা, জানা অজানা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও তাদের মা-বাবা ভাইবোন এবং পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে যত মুমিন মুসলমান ইন্তেকাল করেছেন তাদের সকলকে আল্লাহতায়ালা ক্ষমা ও বেহেস্ত নসিব করুন।আমিন।

লেখক: সৈয়দ গোলাম নবী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ