30 C
আবহাওয়া
৬:৪১ পূর্বাহ্ণ - মে ২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » যৌন হয়রানির জেরে জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকা’র আত্মহত্যা!

যৌন হয়রানির জেরে জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকা’র আত্মহত্যা!

যৌন হয়রানির জেরে জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকা’র আত্মহত্যা!

বিএনএ, ডেস্ক : সহপাঠীর যৌন হয়রানির বিচার না পাওয়া এবং উল্টো সহকারী প্রক্টরের অপমানজনক বকাঝকা সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা। আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে দেওয়া দীর্ঘ এক পোস্টে তিনি আত্মহত্যার জন্য আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেছেন। একইসঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে আম্মান সিদ্দিকীর সহযোগী উল্লেখ করেন।

YouTube player

ওই শিক্ষার্থী সুইসাইড নোটে সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে হয়রানি এবং হুমকি দেওয়াসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন। আর সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে অফিসে ডেকে নিয়ে হয়রানি ও মানহানির অভিযোগ তুলেছেন। তাছাড়া ‘সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজিভ কমেন্ট’ করার অভিযোগ তুলেছেন ওই ছাত্রী।

১৫ মার্চ শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা সদরের নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। পরে তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, তিনি মারা গেছেন।

অবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ”আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।”

আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের উপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয়নি। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানান ভাবে ভয় দেখায় যে, আম্মানের হয়ে আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস পাবো না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউজিড কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারী জাতিয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনো আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেছে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে। আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণে তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্ট দের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায় সেটা কুমিল্লার কারো সৎসাহস থাকলে সে স্বীকার করবে।

এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগ এর প্রেক্ষিতে ৭ বার প্রক্টর অফিসে ডেকে নিয়ে বাজে ভাষায় গালি দিয়ে বলে, তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলছোস কেনো? তোরে যদি আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে ছাল তুলি, এখন তোরে কে বাঁচাবে? ”

ফেসবুক পোস্টে আরও বলেন, আফসোস এই লোক নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিলো। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। ওর পলিটিক্যাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলে এতো কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়তে থাকে না এমন পোস্টে। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া আর সে কিনা শেষমেশ আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না ।
আমি উপাচার্য সাদেকা হালিম ম্যামের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে আপনার কাছে বিচার চাইলাম। আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেছি। আমার উপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে? আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেছে না বিশ্বাস করেন।
আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম! আর পোস্ট মর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজার টা আমাকে এটাই বলেছিলো যে, আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করছি। এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।”

এ ব্যাপারে আম্মান সিদ্দিকী জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে উনার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করিনি৷ এমনকি ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা কোন জায়গাতেই কানেক্টেড না আমি। আমাকে দোষী প্রমাণের জন্য এভিডেন্স লাগবে। এভিডেন্স ছাড়া এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।

অবন্তিকার আত্মহত্যার সংবাদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাজানি হওয়ার পর শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা । পরবর্তীতে রাত ১টা ৩০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, আমার হাতে যা আইন আছে, সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপাচার্য জানান, ফাইরোজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ